আজিজুল ইসলাম চৌধুরী, সুনামগঞ্জ থেকে : সুনামগঞ্জে অনবরত বৃষ্টির কারণে হাওরে পানি বাড়ছে। ঢুকছে হাওরে পানি। পাশাপাশি তলিয়ে যাচ্ছে হাওরের ফসল। দুর্বল হাওর রক্ষা বাঁধ পানির ধাক্কা সামলাতে না পেরে ভেঙ্গে ডুবছে ফসল। শিলাবৃষ্টি কৃষককের জন্য হয়েছে কাল। গত কয়েকদিনে নষ্ট হয়েছে অনেক ফসল। গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে কোথাও বাঁধ ভেঙ্গে আবার কোথাও বাঁধ উপচিয়ে হাওরে পানি ঢুকে ফসল ডুবছে। এছাড়া পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ধীরে ধীরে ফসল ডুবে যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা বোরো ফসল নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে।
প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে, বাড়ছে পানি। তলিয়ে যাচ্ছে বোরো ফসল। প্রতিদিনই কোনো কোনো হাওরে পানি ঢুকছে। শত চেষ্টা করেও হাওররক্ষা বাঁধ রক্ষা হচ্ছে না। ইতোমধ্যে দিরাই উপজেলার বরাম হাওর, জগন্নাথপুর উপজেলার বৃহৎ নলুয়ার হাওর, ধরমপাশা উপজেলার ধারাম হাওর এবং সোনার থাল হাওরে বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে ফসল নষ্ট হয়েছে। জামালগঞ্জ-তাহিরপুর উপজেলার বৃহৎ শনির হাওরে ঝালখালি বাঁধ ভেঙ্গে গেলে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উদ্যোগে মোরমত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাওরে পানি ঢোকার খবর পাওয়া গেছে। অনেক হাওরে এখনও ধান ভালোভাবে পাকেনি। তাই ধান কাটতে পারছে না কৃষকরা। আরো কয়েকটা দিন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায়ও নেই। কিন্তু চোখের সামনে অনেক কষ্টের ফসল ডুবে যাচ্ছে। তাই কৃষকরা ভীত হয়ে কাঁচা-আধা পাকা ধান কাটছেন। জেলার বেশ কয়েকটি হাওরের ফসল ইতোমধ্যে ডুবে গেছে। তাছাড়া দফায় দফায় শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট করেছে বেশ ফসল। বৃহৎ শনির হাওরে দুদফা শিলাবৃষ্টিতে অনেক ক্ষতি করেছে। এর মধ্যে গতকাল (সোমবার) দুপুরে শনির হাওরের ঝালখালি বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এ বাঁধ নিয়ে এলাকাবাসী অনেক অভিযোগ করেছেন কিন্তু কেউ শোনেনি।
শনির হাওর পাড়ের কৃষক ও বিশিষ্ট সমাজসেবী বেহলী ইউনিয়নের মোহাম্মদ শওকত মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোড অফিসারগণ, পিআইসি ও ঠিকাদারগণ ভাগবাটোয়ারায় মত্ত। ঝালখালির দুর্বল বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ করেছি। কিন্তু ঠিক করা হয়নি। তাই সোমবার ঝালখালি বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। চেষ্টা করা হচ্ছে বাঁধ মেরামতের। তিনি আরো বলেন শনির হাওর ও হালির হাওরে দু‘দফা শিলাবৃষ্টি হয়েছে। তছনছ করেছে ফসল। যাও ছিল এখন বাঁধ ভেঙ্গে শেষ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শনির হাওর পাড়ের বাসিন্দা বেহলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা নিমাল্য কান্তি রায় ইনকিলাবকে বলেন শনির হাওরের ঝালখালি বাঁধ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের নিকট অনেক অভিযোগ করেছি। তারা আমাদের কথা শোনেননি। মশালঘাটের কৃষক ও সমাজসেবী মকসুদ মিয়া মিয়া জানান, প্রতিবছর পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঠিকাদারগণ ও পিআইসিরা কৃষকদের খোরকী নিয়ে অবহেলা করে। দুবল বাঁধের কারণে শনির হাওরের ফসল তলিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার প্রায় সব কয়েকেটি হাওরের ফসল ঘরে তোলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাহিরপুর উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট আব্দুল গাফ্ফার জানান এখনও ধান ভালোভাবে পাকেনি। তাহিরপুরের সব ক’টি হাওরের ফসল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় ফসল তলিয়ে যাবার আশংকা রয়েছে। ধরমপাশা উপজেলার দৈনিক ইনকিলাবের সংবাদদাতা মোফাজ্জল হোসেন সবুজ বলেন, ধারাম হাওরে গতকাল (সোমবার) সকাল ৮টায় পানি ঢুকেছে। বাঁধ ভেঙ্গে হাওরের ফসল নষ্টের উপক্রম হয়েছে। ইতোমধ্যে সোনার থাল হাওরের ফসল ডুবেছে। এখনও সোনা মোড়ল, দানকুনিয়া, পাশুয়াসহ কয়েকটি হাওর ফসল ঠিকে থাকলেও যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙ্গে ডুবে যাবার আশংকা রয়েছে। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছে প্রতিদিন ফসল নষ্ট হচ্ছে। এখনও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিসাররা জানান, প্রতিটি হাওরের ফসল ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ জন্যে দ্রæত ধান কাটার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সুনামগঞ্জের দেখার হাওর ও করচার হাওরের ফসল। সুনামগঞ্জ পনি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, এপ্রিল মাসে সুরমা নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার হলেই হাওর এলাকার জন্য বিপদসীমা অতিক্রম করে। এখন তা অতিক্রম করে ফেলেছে, যা হাওর এলাকার জন্য বিপদজনক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন