শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

২১দিনেও উদ্ধার হয়নি সেই ৬ পাহাড়ি কিশোরী

রাঙামাটি থেকে স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

কাউখালীর মৈত্রী শিশু সদনে বিকারগ্রস্ত আচরণ করা সেই ছয় কিশোরী শিক্ষার্থীর অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি কুড়িদিনেও। পলকে পলকে কবিরাজের অত্যাচারে এই শিক্ষার্থীরা ক্রমেই নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষতার যুগেও অস্বাভাবিক আচরণ করা ছয় নারী শিক্ষার্থী ভুতে ধরার অভিযোগে প্রায় তিন সপ্তাহ বৈদ্যের অত্যচার সয়ে আপন মহিমায় বেঁচে আছে । সভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তারা যেন শেষ নিঃশ্বাসটুকু ধরে আছে একজন ত্রাণ কর্তার প্রত্যাশায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের উদ্ধারে এখনও এগিয়ে আসেনি কোনো প্রশাসন বা সরকারি কর্তৃপক্ষ। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে আগে কাউখালী প্রশাসনের পাঠানো মেডিকেল টিম স্পষ্ট করে ওই ছয় কিশোরীর প্রতি অমানবিক এবং পাশবিক আচরণের ইঙ্গিত প্রদানের পরও কেন প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না তা এক অজানা রহস্য। এদিকে দিনে দিনে তারা হয়ে উঠছে মৃত্যু পথযাত্রী।
নিরাপদ আশ্রয়, শিক্ষা ও খাবারের নিশ্চয়তা পেতে সরকারের ছাঁয়ায় আসা ওই ছয় কিশোরীর মধ্যে দুজনকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে গত ১৯ জুলাই কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রে ভর্তি করানো হলেও রহস্যজনকভাবে তাদের আবার রাতেই শিশু সদনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই থেকে তাদের শরীর থেকে ভুত তাড়ানোর কসরত করে যাচ্ছেন এক পাহাড়ি বৈদ্য।
কাউখালী উপজেলার দুর্গম বড়ডলু পাড়া ¤্রুখ্যাত্তি মৈত্রী শিশু সদনের এই শিক্ষার্থীদের উদ্ধার উন্নত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে এলাকার সচেতন মানুষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, সোমবারও দেখা যায়, পাহাড়ি বৈদ্য মন্ত্র আওড়িয়ে মেয়েগুলোকে অত্যাচার করে ঝাড়ফুঁক করছে। মেয়েগুলো শরীরে রয়েছে বেশ কিছু জখম।
মৈত্রী শিশু সদনের এই মেয়ে শিক্ষার্থীরা কোন কালো থাবায় আজ অস্বাভাবিক আচরণ করছে সেই রহস্যও থেকে গেছে অধরা। বিষয়টি ঘিরে এলাকা সরগরম এবং আতঙ্কিত সেখানকার নারী-পুরুষ। ৬ মেয়ে শিক্ষার্থীর একজন একটু হেসে উঠলেই বাকিরা খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে। একজনের কান্নায় অন্যরা বিলাপ করছে। এমনকি একজন মাটিতে শুয়ে হাত-পা ছুড়লে বাকিরাও অবিকল তাই করছে। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে তা বলতে পারছেন না কেউই।
এভাবেই কেটে গেছে তিন সপ্তাহ; এ ঘটনাটি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে মারমা পল্লী বড়ডলু মৈত্রী শিশু সদনের। ছবিতে দেখা যাচ্ছে অসুস্থ মেয়েদের পাশে বসে কবিরাজ দিব্যি বিড়ি ফুঁকছেন। আর মাঝে মাঝে পাইপ দিয়ে ডাবের পানি পান করছেন। সদন কর্তৃপক্ষের দাবি ‘তাদের ভুতে ধরেছে’। এই ঘটনায় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে অন্যদেরও পড়াশুনা।
বাঁশের বেড়া ও টিনের চালে ঘেরা এই মৈত্রী শিশু সদনে পাশাপাশি দুই কক্ষে অবস্থান করে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীরা। মাঝের কামরায় থাকেন প্রধান। ১৯ মেয়ে শিক্ষার্থির প্রায় সবাই বয়ঃসন্ধিতে। সব রুম থেকে যাতায়াতে রয়েছে ভালো ব্যবস্থা। নিজের ভাইয়ের প্রতিষ্ঠিত এই শিশু সদনের প্রধান শিক্ষক অংচিনু মারমা।
শিশু সদনের প্রতিষ্ঠাতা স্থানীয় ইউপি মেম্বার পাইচামং মারমা মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনিও জানান, ‘মেয়েদের ভুতে ধরেছে। একটু ভালো হলেই মেয়েদের হাসপাতালে নিয়ে যাবো’। সেই হাসাপাতালে নেওয়া হয়নি কুড়ি দিনেও। জানা গেছে ঘটনার কদিন আগেই শিশু সদনটির প্রধান শিক্ষকের বড় ভাইয়ের ছেলে খন্ডকালীন শিক্ষক অংচাচিং মারমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
গত ১৯ জুলাই কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ,এম জহিরুল হায়াতের নির্দেশে গঠিত কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫ সদস্যের মেডিকেল টিম মৈত্রী শিশু সদনটি পরিদর্শন করেন। এ সময় বেশি আক্রান্ত দুই কিশোরীকে তারা সেখানে দেখতে পাননি। তাদেরকে চিকিৎসার কথা বলে শিশু সদন থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
মেডিকেল টিমের সিনিয়র সদস্য ডাঃ প্রদীপ কুমার নাথ জানিয়েছিলেন, ৬ মেয়ে শিক্ষার্থির আচরণে ভিন্ন কিছু প্রতীয়মান হচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি বলেও জানান তিনি। তবে এই টিম আনুষ্ঠানিকভাবে কী রিপোর্ট দিয়েছেন তা জানা যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ওই ৬ মেয়ে শিক্ষার্থী পাশবিক নিপীড়নের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে থাকতে পারে। তাদের মত, মূলত বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাবার ভয়ে চিকিসা কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছেনা। কাউখালী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান চৌধুরী ঘটনাস্থল থেকে ফিরে জানিয়েছিলেন, কিছু লুকাতেই হয়তো চিকিৎসকের কাছে আনা হচ্ছে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন