মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমান সংস্থার দু’জন মুসলমান যাত্রীকে শুধুমাত্র ইসলামি পোশাক এবং আরবী ভাষায় কথা বলার কারণে হেনস্তা হতে হয়েছে। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, খায়রুদ্দিন মাখজুমি নামের এক ইরাকি অভিবাসী যুবক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেস থেকে নিউ ইয়র্কে যাওয়ার পথে বিমানে উঠে তার চাচার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার একপর্যায়ে নিউ ইয়র্কে পৌঁছে চাচাকে ফোন দেয়ার কথা বললে তিনি ইনশাআল্লাহ বলে কথা শেষ করেন। তিনি ইনশাআল্লাহ বলায় পাশের সিটের এক মহিলা যাত্রী দৌড়ে গিয়ে বিমানের ক্রুদের কাছে অভিযোগ করলে সাউথ-ওয়েস্ট বিমান সংস্থার ক্রুরা পুলিশ নিয়ে এসে তাকে তল্লাশি করার পরও বিমান থেকে নামিয়ে দেয়। পরদিন ১০ এপ্রিল নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের সাথে তার ডিনারে অংশগ্রহণের শিডিউল ছিল বলে জানা যায়। এর মাত্র তিন দিনের মাথায় গত বুধবার হিজাব পরার কারণে মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা হাকিমাকে শিকাগো থেকে সিয়াটল যাওয়ার পথে বিমান থেকে নামিয়ে দেয় একই সাউথ-ওয়েস্ট বিমান সংস্থার কর্মীরা। বিমানবন্দরের চেকিং ও সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিমানে উঠে বসার পর পাশের আসনে বসা যাত্রীর অস্বস্তিকর আচরণের কারণে নিজের সিট বদলে দেয়ার অনুরোধ করেছিলেন হিজাব পরা মুসলমান যাত্রী হাকিমা আবদুল্লাহ। এরপর তাকে বিমান থেকে নামতে বাধ্য করা হয় এবং তাকে রেখেই বিমানটি গন্তব্যে রওনা দেয়।
এখানে প্রায় একই সময়ে সংঘটিত একটি বিমান সংস্থার দু’জন মুসলমান নারী-পুরুষের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা জানা গেল। ঠিক একইভাবে প্রায় প্রতিদিনই পশ্চিমা দুনিয়ায় মুসলমান নারী ও পুরুষ যাত্রী ও অভিবাসীরা শুধু ইসলামি কালচারের কারণে নিগৃহীত হচ্ছেন। গণতন্ত্র এবং মাল্টিকালচারালিজমের মধ্য দিয়ে পশ্চিমা সমাজ সমৃদ্ধির সোপানে পা রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষত: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিবাসীদের দেশ হিসেবেই গণ্য করা হয়। বহু ভাষা, সংস্কৃতি ও মতের সহাবস্থানই মার্কিন গণতন্ত্র মাল্টিকালচারালিজমের বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য। শত শত বছর ধরে এশিয়া এবং আফ্রিকা থেকে অভিবাসী মুসলমানরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। এসব অভিবাসীর উত্তরসুরিদের কেউ কেউ মার্কিন মেইনস্ট্রিম রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী বিমান হামলা ঘটনার পর মার্কিন সমাজের সামাজিক নিরাপত্তার চালচিত্রই পাল্টে যেতে শুরু করে। নাইন-ইলেভেন সন্ত্রাসী হামলার দায় আল-কায়েদার ওপর চাপিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে সারাবিশ্বের মুসলমানদের ওপর পশ্চিমা সামরিক আগ্রাসন শুরু হয়। একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কাঠামোতেও বড় ধরনের ধস সৃষ্টি করা হয়। ন্যাশনাল সিকিউরিটি নামে ইসলামবিদ্বেষ ও নানা ধরনের বৈষম্যমূলক আইন শুধু মুসলমানদেরই বিড়ম্বনার শিকারে পরিণত করছে না, এসব ব্যবস্থা পুরো মার্কিন সমাজব্যবস্থাকেই নড়বড়ে ও অনিরাপদ করে তুলছে।
পশ্চিমারা সব সময়ই তৃতীয় বিশ্বে মানবাধিকারের সবক ফেরি করে বেড়াচ্ছে। সেখানে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক-সাংবিধানিক ব্যবস্থায় ধর্ম-বর্ণের নিরিখে কাউকে হেয় বা হেনস্তা করার সুযোগ নেই। তথাপি সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে মুসলমান হিসেবে চিহ্নিত হওয়াই যেন এক ধরনের অপরাধ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। ইসলামভীতি এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, আরবী ভাষা এবং পর্দানশীন নারীদের একটি আতঙ্কজনক বস্তু হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ বলা এবং হিজাব পরিধান করা মুসলমানদের সংস্কৃতির অংশ। এসব সংস্কৃতি মার্কিন বা পশ্চিমা সমাজে কোনো নতুন বিষয় নয়। মূলত পশ্চিমা সমাজে ইসলাম ও মুসলমানদের অগ্রযাত্রা ঠেকানোর ভ্রান্ত পদক্ষেপ হিসেবেই সেখানে মুসলমান অভিবাসীদের এভাবে অপদস্ত করা হচ্ছে। পশ্চিমা সমাজের এই মুসলিম সংস্কৃতিবিরোধী অবস্থান নন-ওয়েস্টার্ন বিশ্বেও সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি আমাদের মতো ৯২ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যার দেশেও একের পর এক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করা হচ্ছে এবং হিজাব ও বোরকা পরার কারণে প্রশাসনিকভাবে নারীদের নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বে যখন মুসলমান নারীরা হিজাবের অধিকার রক্ষায় সংঘবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, তখন গত কয়েক মাসে খোদ ঢাকার সরকারি বদরুন্নেসা কলেজ, মতিঝিল মডেল কলেজ, চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজে কর্তৃপক্ষ মেয়েদের হিজাব নিষিদ্ধ করে সার্কুলার জারি করেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, প্যারিস, ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম সর্বত্রই ইসলামি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অনৈতিক প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার অপসংস্কৃতি বন্ধ হ্কো। আমরা গণতান্ত্রিক পরিবেশের স্বাভাবিক উদারতা দেখতে চাই। কেননা, কোনো আদর্শকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করাই সমীচীন। ইসলাম তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের জন্যই বিশ্বব্যাপী জনরায় হচ্ছে। নিগ্রহ ও ষড়যন্ত্র করে ইসলামের অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করা কারো পক্ষেই সম্ভব হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন