ত্রিপুরা থেকে সত্তর মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের পেট্রোলিয়াম প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের এই প্রস্তাবের জবাবে বলেছেন, দেশে গিয়ে আলোচনা করে জানাবেন। অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশের পাইপ লাইনের মাধ্যমে খুলনা থেকে রংপুর হয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশে এলএনজি সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে। যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ভারত যৌথভাবে নির্মিত এলপিজি প্ল্যান্ট থেকে তাদের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে গ্যাস সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেছেন, ভারতের ত্রিপুরায় গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে। আমরা সেখান থেকে গ্যাস চেয়েছি। তিনি জানিয়েছেন, জুনে অনুষ্ঠিতব্য সচিব পর্যায়ের নির্ধারিত ফোরামে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জ্বালানী খাতে জনবল তৈরিতে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বাংলাদেশের গ্যাস প্রাপ্তির ব্যাপার ঝুলে থাকলেও চট্টগ্রামে একটি এলপি গ্যাসের কারখানা স্থাপনে দু’দেশের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এখান থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে এলপি গ্যাস ভারতের ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যে নিয়ে যাবে ভারত।
বাংলাদেশে গ্যাস সংকটের কথা লিখে বলে বুঝাবার কোন প্রয়োজন নেই। গ্যাস সংকটের কারণে শিল্প কারখানা বন্ধ থাকছে, এমনকি রান্না-বান্না করার মত পর্যাপ্ত গ্যাসও পাওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার আবাসিক খাতে পাইপ লাইনের গ্যাস সংযোগ বা সরবরাহ নিরুৎসাহিত করছে। শিল্প খাতের বাইরে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করতে চাচ্ছে না। সূত্রানুযায়ী এখন পর্যন্ত ২৬টি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। ২০টি উৎপাদনে রয়েছে। ২৭ দশমিক ১২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রমাণিত মজুদ থেকে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১২ দশমিক ৯৬ টিএফসি। এদিকে স্থলভাগে নতুন করে গ্যাসের বড় ধরনের মজুদ পাবার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান হারে গ্যাসের ব্যবহার অব্যাহত থাকলে আগামী ১৬ বছর অর্থাৎ ২০৩১ সালের মধ্যে মজুদ শেষ হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রতিবছর গড়ে ১০ শতাংশ হারে গ্যাসের ব্যবহার বাড়ে। সংগত বিবেচনা থেকেই এটা বলা যায়, একদিকে শিল্প-কারখানায় অন্যদিকে গার্হস্থ্য ব্যবহারও বাড়বে। যদি ব্যবহার বৃদ্ধির হার ১০ ভাগও ধরা হয় তাহলে মজুদ দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ বছর চলতে পারে। তাই এর নতুন ভাবনার কোন বিকল্প নেই। গৃহস্থালীতে গ্যাসের বিকল্প জ্বালানীর ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাবও অস্বীকার করা যাবে না। হিসাব অনুযায়ী, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ গ্যাস ব্যবহৃত হয় বাসাবাড়িতে। যদিও মনে করা হয় বঙ্গোপসাগরে গ্যাসের বিপুল মজুদ থাকতে পারে। সে যাই হোক, এখনকার সমস্যা হচ্ছে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা নিয়ে। এ বিবেচনায় গ্যাসের মূল্যও একটি বড় ব্যাপার। বিশ্ব বাজারে জ্বালানী তেলের দাম কম থাকায় তার প্রভাব গ্যাসের মূল্যের উপরও রয়েছে। বিদ্যমান বাস্তবতার আলোকে যে গ্যাসের সরবরাহ ও ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করা এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে। ভারতের সাথে যে চুক্তি হতে যাচ্ছে সেখানে এখনো বাংলাদেশের গ্যাস পাবার কোন নিশ্চয়তা নেই। এটি উদ্বেগের। কারণ, ইতোপূর্বে ভারতের সাথে যেসব ট্রানজিট চুক্তি হয়েছে তাতে বাংলাদেশ বিন্দুমাত্রও লাভবান হতে পারেনি।
ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশ গ্যাস আমদানির যে প্রস্তাব দিয়েছে তা সময়োপযোগী। ইতোপূর্বে মিয়ানমারের সাথে উদ্যোগ নিয়েও তা সফল হয়নি। পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস আমদানি নতুন কোন বিষয় নয়। পৃথিবীর দেশে দেশে এর বহু নজির রয়েছে। অবশ্যই আলোচ্য প্রস্তাবের ব্যাপারে জরুরীভাবে কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে ভারতের সাথে পুরো জ্বালানী বিষয়ে একটি চুক্তি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বার্থ এক্ষেত্রে দু’ভাবে রক্ষা করা জরুরী। প্রথমত, বাংলাদেশের গ্যাস প্রাপ্তিকে নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে মূল্য সাশ্রয়ী হতে হবে। সেই সাথে সরবরাহ যাতে নিরবচ্ছিন্ন হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে। জাতীয় গ্রীডের মধ্যদিয়ে ভারতীয় গ্যাস রপ্তানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঝুঁকি সৃষ্টি করবে কিনা তা ভেবে দেখা জরুরী। অন্যদিকে আমাদের নিজস্ব অনুসন্ধানও বহাল রাখতে হবে। যেকোন চুক্তি করার আগেই আমাদের জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। এসব নিয়ে কি হচ্ছে তার পুরোটাই জনগণকে জানাতে হবে। আমাদের ভূমি ব্যবহার করে যদি আমাদের কোন উপকার না হয়, তাহলে সে ধরনের চুক্তি করে দেশের কোন লাভ হবে না। গ্যাস সংকট নিয়ে ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রীও কথা বলেছেন। সংকটের ইতিবাচক সমাধানই সকলের কাম্য। সংশ্লিষ্ট সকলে জাতীয় স্বার্থ রক্ষাকে সর্বপ্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্ব দেবেনÑ এটাই প্রত্যাশিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন