শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঢাকা-চট্টগ্রামের বাজার বাড়ছে পেঁয়াজের দাম জমেনি মশলার বাজার

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

কয়েকটি পণ্যে ছাড়া ঈদের আগে মোটমুটি স্থিতিশীল নিত্যপণ্যের বাজার। গ্রামমুখী হচ্ছেন রাজধানীবাসী। তাই বাজারগুলো অনেকটা ফাঁকা। গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজির দাম কমলেও পেঁয়াজ, মুরগী ও মাছের দামে পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে।
গত দুই দিনের ব্যবধানে আরেক দফা বেড়েছে পেঁয়াজের দর। প্রতি কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। আর আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকায়।
বর্তমানে বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে। তার পরও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। মূলত আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে দিচ্ছে পেঁয়াজের দাম, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে। আর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোক্তাসাধারণ। তবে সিন্ডিকেটের বিষয় স্বীকার করতে নারাজ ব্যবসায়ীরা।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবেও দাম বাড়ার এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সরকারের এ সংস্থাটির হিসেবেই মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম ২৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানিকৃত পেঁয়াজে বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। এছাড়া ভারতে বৃষ্টির জন্য পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ভারতের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের রফতানিমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব কারণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এছাড়া অতিবৃষ্টির কারণে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে বলেও জানান তারা।
এছাড়াও আমদানিতে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় ব্যয় হওয়ায় যেসব পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায় তার প্রভাব এসে পড়ে খুচরা বাজারে। এক্ষেত্রে স্থলবন্দরগুলোতে আমদানি রফতানি কার্যক্রম সহজ করার পরামর্শ দেন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা।
দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা ১৯ লাখ টন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে বছরে ১৮-১৯ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। এছাড়া ভারত থেকে ৭-৮ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। এ হিসেবে দেশের পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই।
রাজধানীর কাওরান বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা মোঃ সিদ্দিক বলেন, কোরবানির ঈদকে উপলক্ষ করে একটি অসাধু চক্র পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। সরকার বাজারে কঠোর নজরদারি করলে দাম বাড়ত না।
এদিকে ঈদের আগে মসলার বাজার জমে ওঠেনি। কারওয়ান বাজারে মসলার বাজার প্রায় ফাঁকা। বিক্রেতা আছেন, ক্রেতা নেই। দুই ঘণ্টা ধরে সেই বাজারে এদিক-সেদিক ঘুরে মসলার বাজারে ফের উঁকি দিয়েও ক্রেতার দেখা পাওয়া গেল না। শুক্রবার বলেই কি ক্রেতাশূন্য? বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা।
পবিত্র ঈদুল আজহার আগে মসলার বাজার যেভাবে জমে ওঠে, এবার সেভাবে এখনো জমে ওঠেনি। তাঁদের দাবি, মসলার দাম সেভাবে না বাড়লেও, বেশির ভাগ মানুষ বাড়ি চলে যাওয়ায় ক্রেতা কমে গেছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
কারওয়ান বাজারে মসলার পাইকারি দোকান আলতাফ জেনারেল স্টোরে কথা হয় বিক্রেতা আবুল বাশারের সঙ্গে। হতাশ কণ্ঠে তিনি বলেন, দেখছেন না ক্রেতা নাই, মসলার বিক্রিও নাই। তিনি দাবি করেন, ঈদের আগে মসলার দাম যেভাবে বাড়ে, এবার তেমন বাড়েনি। ক্রেতা কম থাকায় তাঁরা চিন্তিত।
বাশার বলেন, দুই ধরনের জিরা পাওয়া যায়। একটি সিরিয়ার, অন্যটি ভারতের। সিরিয়ার জিরার দাম কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা ছিল। ভারতের জিরার দাম ছিল ৩২০ টাকা কেজি। দুটো জিরার দামই ২০ টাকা করে বেড়েছে। ছোট এলাচির দাম ছিল ১ হাজার ৭০০ টাকা, এখন তা বেড়ে ১ হাজার ৮০০ টাকা হয়েছে। দারুচিনির দাম বাড়েনি। ২৯০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চিনিগুঁড়া পোলাওয়ের চাল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেল, মাছের মধ্যে কেবল ইলিশের চাহিদা বেশি। অন্য মাছ কম কিনছেন ক্রেতারা। কারওয়ান বাজারে মাছের দোকানদার কামরুজ্জামান এক কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি করছেন ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে। এর চেয়ে কিছুটা ছোট ইলিশ ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন। কামরুজ্জামান বলেন, অখন ইলিশের মৌসুম। মাছ ধরাও পড়ছে বেশি আর কিনছেও বেশি। এখনকার ইলিশ স্বাদে ভালো, তাই বিক্রি বেশি। তাঁর মতে, মানুষ ঈদে মাংস খেতে খেতে কিছুটা অন্য স্বাদের খাবার খোঁজে, যা ইলিশ দিয়ে পূরণ হয়।
ইলিশ বাদে অন্যান্য মাছের চাহিদা কিছুটা কম বলে জানালেন আরেক মাছ বিক্রেতা সুকুমার দাস। তিনি জানালেন, বড় সাইজের রুই মাছ ৪০০ টাকা কেজি আর মাঝারি সাইজের মাছ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। সুকুমার বলেন, এই ঈদে ট্রাকের চাপে মাছ আসতে সমস্যা হচ্ছে বলে দাম কিছুটা বেশি। তবে ঈদের আগে আগে ও পরে দাম কিছুটা কমবে। মানুষ মাংস বেশি খাবে বলে মাছের চাহিদা কমে আসবে।
ব্রয়লার মুরগির বাজার ঘুরে দেখা গেল, মুরগির কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। মুরগির দাম বাড়ার যুক্তি দেখালেন বিক্রেতা মো. হোসেন। তিনি বললেন, রাস্তায় এখন চাঁদা ওঠানো হচ্ছে। গরুর ট্রাকের পাশাপাশি তাঁদেরও এই চাঁদা দিতে হচ্ছে। এই ভয়ে মুরগির সরবরাহ অনেক কমে গেছে। তাই দাম বেশি। তবে ঈদের পরপর দাম আবার কমতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন