সিলেট অফিস : সম্প্রতি ঘন ঘন বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে সিলেটজুড়ে। বজ্রপাতে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিলও। গত ৩ দিনে বজ্রপাতের ঘটনায় সিলেট বিভাগে মারা গেছেন অন্তত ১১ জন! বজ্রপাতে এই মৃত্যুর মিছিল দেখে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রপাতে আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, বজ্রপাত হচ্ছে আবহাওয়া কেন্দ্রীয় দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘাতক। বাংলাদেশে দুটি মৌসুমে বজ্রপাত বেশি হয়ে থাকে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে ‘প্রাইমারি সামার’। এপ্রিল-মে মাসজুড়ে এ মৌসুমের বিস্তৃতি। এসময়ে ভার্টিক্যাল ক্লাউড বা সম্ভু মেঘ থাকে বলে ঘন ঘন কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাত হয়। এই ‘প্রাইমারি সামার’ মৌসুমে বজ্রপাত এক বিভীষীকার নাম হয়ে ওঠেছে সিলেট বিভাগের মানুষের কাছে। গত ৩ দিনে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মানুষের মধ্যে এখন ‘বজ্রপাত আতঙ্ক’ বিরাজ করছে।
গত শনিবার (১৬ এপ্রিল) বজ্রপাতে হবিগঞ্জে মারা যান তিন জন। জেলার সদর উপজেলার কাকিয়ারআব্দা গ্রামে কৃষক আবিদ আলী, পশ্চিম বুল্লা গ্রামের যুবলীগ নেতা রমজান আলী ও ভাদিকারা গ্রামের শফিকুল ইসলাম বজ্রপাতে মারা যান। একইদিন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় বজ্রপাতে মোস্তাক আহমদ নামক এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি ওই উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেছরিগুল গ্রামের আপ্তাব আলীর ছেলে। গত রোববার (১৭ এপ্রিল) সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় বজ্রপাতে শের আলী নামক এক ব্যক্তি মারা যান। তিনি ওই উপজেলার সদর ইউনিয়নের নোয়াবন গ্রামের চান্দু মিয়ার ছেলে। এদিকে সোমবার (১৮ এপ্রিল) হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা সদরের কামালখালী গ্রামের মগা মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়া বজ্রপাতে মারা গেছেন। সোমবার বিকেল ৩টার দিকে মারা যান।
এদিকে একইদিন হবিগঞ্জে হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে তিনজন মারা গেছেন। জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে আবদুল আলীম, আজমল মিয়ার ছেলে ওলি আহমদ এবং বানিয়াচং উপজেলার কামালকানির ওয়াদুদ মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়া বজ্রপাতে মারা যান। এদিকে সোমবার বজ্রপাতে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় দুই স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত দুই স্কুলছাত্রী জৈন্তাপুর উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের লক্ষীপ্রসাদ গ্রামের লক্ষীপ্রসাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল। তারা হচ্ছে- ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী ডলি মালাকার (১০) এবং ২য় শ্রেণীর ছাত্রী ঈশিতা রহমান তারিন (৭)। ডলি পতন মালাকারের মেয়ে এবং ঈশিতা আবদুর রহমানের মেয়ে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ঘন ঘন বজ্রপাতের বিষশাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা, জলবায়ুর পরিবর্তন এসব কারণে মেঘের মধ্যে তড়িত প্রবাহিতা বৃদ্ধি পায়। যে কারণে বজ্রপাতের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাওর অঞ্চলে অত্যধিক বজ্রপাতের বিষয়ে তিনি বলেন, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ পরিবাহী অনেক উপাদান যেমন- গাছ, বাড়িঘর এসব থাকে। বজ্রপাতের সময় এসবের মধ্যে তড়িত প্রবাহ ছড়িয়ে যাওয়ায় জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা কম হয়ে থাকে। তবে হাওর অঞ্চলে খোলা আকাশের নীচে বিদ্যুৎ পরিবাহী কোনো উপাদান থাকে না। ফলে বজ্রপাত সরাসরি মানুষকে আঘাত করে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বজ্রপাতের সময় কোনো জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে। ইলেকট্রনিক্স উপাদানগুলো, যেমন- ফ্রিজ, মোবাইল ফোন, ডিশ লাইন প্রভৃতির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে। যেসব বাসা-বাড়ির ছাদে মোবাইল টাওয়ার আছে, সেগুলো যেন সুরক্ষিত ও নিরাপদ হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়া বজ্রপাত প্রতিরোধী ‘বজ্র নিরোধক দ-’ বাসা-বাড়িতে রাখার পরামর্শ দেন আনোয়ারুল ইসলাম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন