মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
॥ শেষ কিস্তি ॥
আগেকার যুগে যখন ভূমিকম্প হতো তখন সঠিক পথে পরিচালিত সৎকর্মশীল লোকেরা বলতেন: “মহান আল্লাহ তোমাদেরকে সতর্ক করছেন”। মদীনায় যখন একবার ভূমিকম্প হয়েছিল, তখন উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) তার জনগণকে ভাষণে বললেন : “যদি আরো একবার ভূমিকম্প সংগঠিত হয় তাহলে আমি এখানে তোমাদের সাথে থাকবো না।” সঠিক পথে পরিচালিত সৎকর্মশীল লোকদের কাছে এরকম আরো অনেক ঘটনার বিবরণ রয়েছে। যখন কোথাও ভূমিকম্প সংগঠিত হয় অথবা সূর্যগ্রহণ হয়, ঝড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন মানুষদের উচিত মহান আল্লাহর নিকট অতি দ্রুত তাওবা করা, তাঁর নিকট নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা এবং মহান আল্লাহকে অধিকহারে স্মরণ করা এবং মা প্রার্থনা করা যেভাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য গ্রহণ দেখলে বলতেন: “যদি তুমি এরকম কিছ দেখে থাক, তখন দ্রুততার সাথে মহান আল্লাহকে স্মরণ কর, তাঁর নিকট মা প্রার্থনা কর।” (আল-বুখারী ২/৩০ এবং মুসলিম ২/৬২৮) দরিদ্র ও মিসকিনদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা এবং তাদের দান করা উচিত, কারণ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : “দয়া প্রদর্শন কর, তোমার প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে”। (ইমাম আহমদ কর্তৃক বর্ণিত, ২/১৬৫) “যারা দয়া প্রদর্শন করে মহান দয়াশীল আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া দেখাবেন। পৃথিবীতে যারা আছে তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন কর, এবং স্বর্গে যিনি আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন।” (আবু দাউদ কতৃক বর্ণিত ১৩/২৮৫, আত-তিরমিজী : ৬/৪৩) “যারা দয়া প্রদর্শন করবে না তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে না”। (আল-বুখারী : ৫/৭৫, মুসলিম ৪/১৮০৯ কর্তৃক বর্ণিত) বর্ণিত আছে যে, যখন কোন ভূমিকম্প সংগঠিত হতো, উমর ইবনে আব্দুল আযিয (রহ.) তার গভর্নরদের দান করার কথা লিখে চিঠি লিখতেন। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে যা মানুষকে বিপর্যয় (আজাব) থেকে নিরাপদে রাখবে তাহলো, যারা মতায় আছে (অর্থাৎ যারা দেশ পরিচালনা করছে) তাদের উচিত দ্রুততার সাথে সমাজে প্রচলিত অন্যায় থামিয়ে দেয়া, তাদের শরিয়া আইন মেনে চলতে বাধ্য করা এবং সে অনুযায়ী চলা, ভালো কাজের আদেশ দেয়া এবং খারাপ কাজ নিষেধ করা। মহান আল্লাহ বলেন : “মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা হচ্ছে একে অপরের বন্ধু। এরা (মানুষদের) ন্যায় কাজের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে, তারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত আদায় করে, (জীবনের সব কাজে) আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলের (বিধানের) অনুসরণ করে, এরাই হচ্ছে সে সব মানুষ; যাদের উপর আল্লাহ তাআলা অচিরেই দয়া করবেন; অবশ্যই আল্লাহ তাআলা পরাক্রমশালী, কুশলী।” (সূরা আত তাওবা : ৭১) “আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন যে আল্লাহ তাআলার (দ্বীনে) সাহায্য করে, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা শক্তিমান ও পরাক্রমশালী। আমি যদি (মুসলমান) এদের (আমার) জমিনে (রাজনৈতিক) প্রতিষ্ঠা দান করি, তাহলে তারা (প্রথমে) নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, (দ্বিতীয়ত) জাকাত আদায় (এর ব্যবস্থা) করবে, আর (নাগরিকদের) তারা সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে, তবে সব কাজেরই চূড়ান্ত পরিণতি একান্তভাবে আল্লাহ তাআলারই এখতিয়ারভুক্ত।” (সূরা আল হজ : ৪০-৪১) “যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্যে (সঙ্কট থেকে বের হয়ে আসার) একটা পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন রিজিক দান করেন যার (উৎস) সম্পর্কে তার কোন ধারণাই নেই; যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহ তাআলাই যথেষ্ট।” (সূরা আত তালাক্ব : ২-৩) এই বিষয়ে এরকম আরো অনেক আয়াত রয়েছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করে দিবে, আল্লাহ তাআলা তার প্রয়োজন পূরণ করে দিবেন।” (আল-বুখারী ৩/৯৮, মুসলিম ৪/১৯৯৬) এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : “যে ব্যক্তি, এই পৃথিবীতে একজন বিশ্বাসীর দুশ্চিন্তা দূর করে দিবে, মহান আল্লাহ তাকে পুনরুত্থান দিবসের দুশ্চিন্তা থেকে নিরাপদে রাখবেন। যে ব্যক্তি, কারো কাজকে সহজ করে দিবে (যে কঠিন কাজে নিয়োজিত), মহান আল্লাহ তার দুনিয়া ও পরকালের কাজকে সহজ করে দিবেন। যে ব্যক্তি, একজন মুসলিমের দোষ গোপন রাখবে মহান আল্লাহ দুনিয়া ও পরকালে তার দোষ গোপন রাখবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন