শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ইসলামি শিক্ষা

প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাফিজ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার

॥ এক ॥
ভূমিকা : ইসলাম যে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ কখনোই সমর্থন করে না, তা জোরালোভাবে ব্যক্ত করা যায়। পবিত্র কোরআন-হাদীসে এ বিষয়ের সুস্পষ্ট ঘোষণাগুলো সুন্দর ও সহজ ভঙ্গিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সমাজের ক্যান্সার-প্রতিরোধে চাই ইসলামি শিক্ষা’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠে অবশ্যই পাঠকবৃন্দ উপকৃত হবেন।
শান্তির ধর্ম ইসলাম : ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামের আর্বিভাব হয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠা, মানবকল্যাণ ও মানবতার জন্য। ইসলাম মানুষকে প্রকৃত মানুষ বানানোর শিক্ষা দেয়। নবীকুল শিরোমনি হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বে শান্তি, কল্যাণ ও মানবতা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। দ্বীনী দাওয়াত প্রদানের মাধ্যমে রাসূলে কারীম (সা.) ইসলাম প্রচার করেছিলেন। অতুলনীয় চরিত্র মাধুর্য, অনুপম শিক্ষা ও আদর্শ, আমল ও আখলাক দ্বারা তিনি মানুষকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়েছিলেন। চরম গোষ্ঠীগত মতানৈক্য ও সংঘাতের মধ্যে সকল গোষ্ঠি, সম্প্রদায়, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কিভাবে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করা যায় মহানবী (সা.)-এর সোনার মদীনাকে তার একটি অতুলনীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
আল্লাহ তায়ালা হেদায়েতের মালিক। যাকে ইচ্ছা তিনি হেদায়েত দান করেন। দ্বীনি দাওয়াত গ্রহণ করানোর ক্ষেত্রে নবী করীম (সা.), সাহাবাগণ (রা.) কোন রকম জোর-জবরদস্তি করেননি। মানুষ তাদের এই দাওয়াতে আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম কবুল করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দাওয়াতের পদ্ধতি অনুসরণ করে দ্বীনি-দাওয়াতের সিলসিলা এখনও দুনিয়ায় বিদ্যমান আছে। নায়েবে রাসূল (সা.), ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া, পীর-মাশায়েখ, অলি-আউলিয়া, হাক্কানী আলেম-ওলামা যুগ যুগ ধরে দুনিয়ার বুকে দ্বীনি দাওয়াতের কাজে নিরলসভাবে মেহনত করে চলছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বীনি দায়িত্ব পালন থেকে অব্যাহতি লাভের সুযোগ নেই। যুগে যুগে যারা মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন, তাঁরা অসাধারণ মানবপ্রেম, অনুপম চারিত্রিক মাধুর্য, অতুলনীয় মানবিক মূল্যবোধ, দৃষ্টান্তমূলক সৎকর্ম, নিষ্ঠাপূর্ণ আমল ও পরিশুদ্ধ মননশীলতা দ্বারা বিশাল জনগোষ্ঠিকে ইসলাম গ্রহণে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়েছিলেন। এর ফলে দলে দলে মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেয়। এভাবে উপমহাদেশে কোটি কোটি মানুষ মুসলমান হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। ইসলাম বিশৃংখলা, বে-আইনী কার্যকলাপ, ফিতনা-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না। সর্বাবস্থায় সন্ত্রাসের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। দাঙ্গা, বিশৃংখলা, নির্যাতন ইত্যাদি ধরনের কাজকে ইসলামে ফিতনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফিতনা একটি জঘন্য অপরাধ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ফিতনা হত্যার চেয়েও ভয়াবহ’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১৯১)। ইসলামে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, ফিতনাবাজ, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের কঠোর শাস্তির উল্লেখ রয়েছে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুণ জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাদের কোন কোন কৃতকর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে’ (সূরা রূম, আয়াত-৪১)। ইসলাম মানুষকে ইনসানে কামেল বা পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেয়। আমরা যদি আমাদের সমাজকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে পারি, তাহলে চক্রান্তকারীরা মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ পাবেনা। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মত হিসেবে দ্বীনি দাওয়াতী কার্যক্রমের এ স্থবিরতা কোন মুসলমানের কাম্য হতে পারে না। তাই ইসলাম বিদ্বেষীদের পরিকল্পিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী তৎপরতা প্রতিহত করতে দাওয়াতী কার্যক্রমের মাধ্যমে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও ব্যাখ্যা মানুষের নিকট তুলে ধরা আজ অতীব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইসলামী বুনিয়াদী শিক্ষা : ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তি যথা ১। ঈমান, ২। নামায, ৩। রোজা, ৪। যাকাত ও ৫। হজ্জ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ইসলাম ও ঈমানের পার্থক্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ইসলাম হলো আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের নাম। আর ঈমান হলো ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদের একটি । ঈমান পরিপূর্ণভাবে বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য মৌলিক ৬টি বিষয় রয়েছে, যেমন : ১। আল্লাহ, ২। ফেরেশতা, ৩। আসমানী কিতাব, ৪। নবুয়াত ও রিসালাত, ৫। তাকদীর ও ৬। আখিরাত। ঈমান হলো অন্তর্নিহিত বিষয়; মানুষের আচার-আচরণ, ইবাদত-বন্দেগী, যেমন : নামায, রোজা, হজ্জ ও যাকাত-এর মাধ্যমে মানুষের ঈমানের প্রকাশ ও প্রতিফলন ঘটে। একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার মুখ ও হাতের অনিষ্ট থেকে লোকজন নিরাপদ থাকে, সেই মুসলমান এবং যার নির্যাতন থেকে মানুষ নিরাপদ; তাকে মুমিন বলে।’ সুতরাং আমাদেরকে প্রকৃত ঈমানদার হতে হবে এবং পাপাচার, দুষ্কর্ম, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য থেকে সমাজ জীবনকে মুক্ত ও পবিত্র রাখতে হবে।
মদীনা সনদ : তৎকালীন মদীনায় মুসলমানদের সাথে ইহুদীদের ১০টি গোত্র এবং আওস ও খাযরায গোত্রদ্বয়ের ১২টি উপগোত্রের বসবাস ছিল। মদীনায় বসবাসরত বিভিন্ন গোত্র, উপগোত্র, সম্প্রদায় ও গোষ্ঠী, দল ও উপদলের সহাবস্থান, সৌহার্দ্য সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, পারস্পরিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাসূলে কারীম (সা.) একটি লিখিত চুক্তি সম্পাদন করেন, যা ইতিহাসে মদীনা সদন নামে খ্যাত। বহু ধর্ম জাতি, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ক্ষেত্রে মদীনার সনদ একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মদীনার সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার পর তৎকালীন সমাজের গোত্রসমূহের আন্তঃকলহের অবসান ঘটে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিজয় হজ্জের ভাষণ : অপর মূল্যবান প্রবন্ধ বিদায় হজ্জের ভাষণে মুসলমানদের দৈনন্দিন ও জাতীয় জীবনের করণীয় সম্পর্কে অত্যন্ত মূল্যবান নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ইসলামে জাতি, শ্রেণি ও বর্ণবৈষম্য নেই। আরবের উপর অনারবের এবং অনারবের উপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠত্বের একমাত্র ভিত্তি হচ্ছে তাকওয়া। নারীদের বিষয়ে বিদায় হজ্জের ভাষণে বলা হয়েছে তাদের উপর তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের উপর তাদেরও অধিকার রয়েছে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ : সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের স্বরূপ-সন্ত্রাসের সংজ্ঞা, সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কারণ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ইসলামের শিক্ষা এবং দ্বীনি দাওয়াতি কাজের গুরুত্ব সম্পর্কে মূল্যবান আলোচনা রয়েছে ক্বোরআন-হাদীস ও ইসলামি গ্রন্থসমূহে। ইসলামের আলোকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে অত্যন্ত চমকপ্রদ বিশ্লেষণসহ মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে তাতে সুনির্দিষ্ট ধারণাও দেয়া আছে। ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালিত করে, তারা প্রিয় নবী (সা.)-এর শিক্ষা ও আদর্শ থেকে অনেক দূরে; এটা অনস্বীকার্য। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদের কোন ধর্ম নেই। তাদের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও আতঙ্কগ্রস্ত করে রেখে পার্থিব সম্পদ অর্জন, ক্ষমতা দখল ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। জঙ্গিবাদী গোষ্ঠি অস্ত্রের বলে ইসলাম কায়েম করতে চায়। ইসলাম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না। ‘তোমাদের কেউ যেন তার (মুসলমান) ভাইয়ের প্রতি হাতিয়ার দিয়ে ইঙ্গিতও না করে। কারণ তার অজান্তে শয়তান তার হাতে স্খলন ঘটাতে পারে। আর সে (অন্যায়ভাবে হত্যা করার অপরাধে) জাহান্নামের কূপে গিয়ে পতিত হবে’ (বুখারী)। ‘যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়’ (বুখারী)।
সন্ত্রাস জাতীয় উন্নয়নে বাধা : সন্ত্রাস, বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে প্রবল বাধা। সন্ত্রাসী কর্মকা- বেড়ে গেলে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা থাকে না। উন্নয়ন কর্মকা- বাধাগ্রস্ত হয়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
MD TAHMID ৮ নভেম্বর, ২০২০, ৩:৫৯ পিএম says : 0
করআন সুন্নার আলোকে জঙ্গিবাদ সক্রাস নির্মল। করে দিন
Total Reply(0)
Md Shaon ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪১ পিএম says : 0
কুরআন ও সন্নাহর আলোকে জঙিগবাদ ও সন্রাস নির মুল
Total Reply(0)
Md Shaon ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪১ পিএম says : 0
কুরআন ও সন্নাহর আলোকে জঙিগবাদ ও সন্রাস নির মুল
Total Reply(0)
Ripa akter ১০ নভেম্বর, ২০২০, ৭:৫০ এএম says : 0
Quran Sunnah alike jongibad o sontas nir mul
Total Reply(0)
মেহেদী হাছান ১০ নভেম্বর, ২০২০, ২:০৬ পিএম says : 0
করআন সুন্নার আলোকে জঙ্গিবাদ সক্রাস নির্মল। করে দিন
Total Reply(0)
মোঃ মেহেদী হাসান আরাফাত ১১ নভেম্বর, ২০২০, ৭:১৭ এএম says : 0
আপনার ইসলামী মতামতের সাথে আমি একমত
Total Reply(0)
মোঃ মেহেদী হাসান আরাফাত ১১ নভেম্বর, ২০২০, ৭:১৮ এএম says : 0
আপনার ইসলামী মতামতের সাথে আমি একমত
Total Reply(0)
MD. Tanvir Ahmed. ১১ নভেম্বর, ২০২০, ৮:০৩ পিএম says : 0
কুরআন ও সুন্নাহর আইন দ্বারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব।
Total Reply(0)
SN SAIKAT ১২ নভেম্বর, ২০২০, ৬:৪৪ পিএম says : 0
সবাই যদি কুরআন ও সুন্নাহ এর আলোকে জীবনযাপন করে তাহলে জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব
Total Reply(0)
আগুন্তক ২ মার্চ, ২০২২, ২:১১ এএম says : 0
একমত
Total Reply(0)
আগুন্তক ২ মার্চ, ২০২২, ২:১১ এএম says : 0
একমত
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন