সাভার ময়লা আর্বজনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা আর্বজনা। ময়লা ফেলার নির্ধারিত জায়গা ও ডাস্টবিন’র অভাবে আবর্জনার স্তূপ তৈরি হয়েছে যত্রতত্র। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ সাভারবাসী।
সাভারের ঢাকা-আরিচা, নবীনগর-চন্দ্রা ও আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়কের পাশে অর্ধশতাধিক ময়লার ভাগাড় গড়ে উঠেছে। দিন যতই যাচ্ছে মহাসড়কের দুপাশে ময়লার স্ত‚প ততই বড় হচ্ছে। স্থানীয় হাটবাজার, পাড়া-মহল্লা এমনকি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ফেলার স্থান হিসেবেই বেছে নেওয়া হয়েছে মহাসড়ককে। ফলে সড়কের দুপাশের বাতাস হয়ে উঠছে বিষাক্ত। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে উৎকট গন্ধে। এতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে স্কুল শিক্ষার্থীরাসহ পথচারীরা চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। এ দুর্গন্ধের কারণে ডায়রিয়া ও পেটের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আমজাদুল হক।
সাভার পৌরসভার অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিদিন শত শত টন ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ওপরে। এ অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হলেও ময়লা-আবর্জনা সরানোর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রথম শ্রেণীর মর্যাদাসম্পন্ন সাভার পৌরসভা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন সকালে পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা ও বিভিন্ন বাসা বাড়ির লোকজন বিভিন্ন এলাকা মার্কেট ও মহল্লা থেকে এসব ময়লা-আবর্জনা এনে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের দু’পাশ কর্ণপাড়া, উলাইল, ডিপজল ফুডের সামনে, সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের রাজ্জাকের কাঁচা বাজারের সামনে মহাসড়কের ওপর, রাজালাখ ফার্মের পুকুরে, ব্যাঙ্ক টাউন ব্রিজের গোড়ায়, গেন্ডা, পাকিজা, শিমুলতলা, রেডিও কলোনী, সিএনবি এলাকায় মহাসড়কের ওপর ফেলছে ময়লা। এ ছাড়াও বিরুলিয়া রোডের আইচা-নোয়াদ্দা ব্রিজের গোড়ার দু’পাশসহ পৌর এলাকার ভেতরের আরো বিভিন্ন সড়কের পাশে এসব আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ফলে ওইসব এলাকাসহ মহাসড়কের উপরে এসব ময়লা-আবর্জনার স্তুপ থেকে দুর্গন্ধে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পথচারীসহ বিভিন্ন যানবাহনে চলাচলরত যাত্রী এবং এসব এলাকার বসবাসকারীরা ও গার্মেন্টস শ্রমিকরা।
সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের দিলখুশা সুপার মার্কেটের পরিচালক নজরুল ইসলাম নজির জানান, আমাদের মার্কেটের পাশে রাজ্জাক সাহেবের কাঁচা বাজারে সামনে ময়লা-আর্বজনার স্তুপ রয়েছে। দুর্গন্ধে আমরা অতিষ্ঠ। ক্রেতারা মার্কেটে প্রবেশ করতে চায়না। ফলে কমে গেছে মার্কেটের বেচা-বিক্রি। তাই তিনি সংশ্লিষ্টদের নিয়মিত ময়লাআর্বজনা পরিষ্কার রাখতে অনুরোধ জানান।
পোশাক শ্রমিক জোসনা বেগম বলেন, রাজ্জাকের কাঁচা বাজার ও চৌরুঙ্গী মার্কেটের সামনে সড়কে স্তুপ করে রাখা ময়লা আবর্জনা ও মরা মুরগির গন্ধে চলাচল করতে হষ্ট হয়। মুখ চেপে শ্বাস বন্ধ করে হাটতে হয়। তিনি বলেন, সকালে হাজার হাজার পোশাক শ্রমিক এখান দিয়ে চলাচল করে আমরা এ দুর্গন্ধ থেকে পরিত্রাণ চাই।
আবর্জনার পাশে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, আবাসিক এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকলেও এটা নিয়ে পৌরসভার সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।
পৌরবাসীরা জানান, এসব সরানোর জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে বহুবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু তাতে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো সাড়া বা অপসারণের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। আরো দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। তবে মহাসড়ক দিয়ে যখন কোন মন্ত্রী যাতায়াত করেন অথবা বিশেষ বিশেষ দিনে ময়লা আর্বজনা সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, যারা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত আছেন, তাদের নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা সকল আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে মহাসড়কের পাশে স্তুপ করছে। যারা এলাকাবাসীর সুবিধার কাজে নিয়োজিত তারাই এলাকাবাসীর সমস্যার সৃষ্টি করছে। প্রতিদিন যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে সড়কে চলাচল করতে অনেক সমস্যা হয় এলাকাবাসীর। গাড়ি দিয়ে চলাচল করতে হলেও নাক, মুখ চেপে রাখতে হয়। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে পৌরবাসী।
এ বিষয়ে সাভার পৌরসভার মেয়র হাজি আবদুল গণি বলেন, পৌরসভার গাড়ি ও জনবল সঙ্কট থাকার কারনে ডাম্পিং জোনে ময়লা ফেলা হচ্ছে না। এ সময় ময়লা-আবর্জনা ফেলার সময় পৌরবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দুই পাশ থেকে পৌরসভা কৃতপক্ষ ময়লা সরিয়ে নেবে দ্রুত এমনটাই আশা করেন পৌরবাসী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন