শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উপরে ফিটফাট নিচে পুকুর ঘাট!

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল চান্দিনা থেকে | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

কুমিল্লার শাসনগাছা রেলওয়ে ওভারপাসের নিচে মানুষের দুঃখ দেখার যেন কেউ নেই। কুমিল্লার শাসনগাছা রেলওয়ে ওভারপাসের নির্মাণকাজ শেষ হলেও ওভারপাসের নিচের সড়কে তৈরি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে ওই সড়কে জলাবদ্ধতা, আর জলাবদ্ধতা মানেই ইঞ্জিনে পানি ঢুকে গাড়ি বিকল অথবা ছোট-বড় দুর্ঘটনা এখন নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওভারপাস দিয়ে যানচলাচলে সুবিধা হলেও ওভারপাসের নিচের অবস্থা যেন উপরে ফিটফাট-নিচে পুকুরঘাট ! গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে সড়কটি এখনও পানিবদ্ধ অবস্থায় থাকায় সড়কটি এখন অত্র এলাকার মানুষের চোখের কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
কান্দিরপাড় থেকে শাসনগাছা যাওয়ার জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাত্রী তোলেন কামরুল ইসলাম। ইস্টার্ণ প্লাজা পার হয়ে হোটেল কিউ প্যালেস এর সামনে এসে  হঠাৎ অটোরিকশাটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মুহুর্তেই এ ব্যস্ত সড়কে দেখা দেয় যানজট। পানিতে ডুবে থাকা সড়কে গর্তে পড়ে বিকল হওয়া অটোরিকশা নিয়ে চালক পড়েন বিপাকে। শেষমেশ আশপাশের মানুষের সহযোগিতায় ঠেলে সড়কের ধারে নিয়ে আসা হয় অটোরিকশাটি। চালক কামরুল ইসলাম বলেন, একে তো খানাখন্দ তার সাথে জলাবদ্ধতা, কোন দিকের রাস্তা ভালো আর কোথায় গর্ত তা বোঝার কোনো উপায় নাই। এখানে এসে গর্তে পড়ে গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে গেছে। কাদাপানিতে ডুবে থাকায় পানির নিচের সড়কের কী অবস্থা তা বোঝা যায় না। পাশে থাকা পথচারী ওমর ফারুক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এ রাস্তা যেন মরদফাঁদ। ফ্লাইওভারের কাজ শেষ এখন নিচের কাজ আর হবে কিনা কে জানে ? এ ভোগান্তি আর সহ্য হয় না। তিনি আরও বলেন, গতদিন পরিবারসহ আসার সময় গর্তে পড়ে উল্টে যায় রিকশা। আমার কিছু না হলেও স্ত্রী বেশ আঘাত পান। পুরো রাস্তা ময়লা পানিতে ডুবে থাকায় খানাখন্দ বোঝা যায় না। ফলে প্রতিনিয়ত এ সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। স্কুলশিক্ষার্থীদের নিয়ে চরম দুর্ভোগে আছেন এ এলাকার অভিভাবকগণ।
ওভারপাসের সড়কটির নীচের অংশে স্লাব ভেঙে যাওয়ায় ময়লা আবর্জনায় সড়কটির অবস্থা একেবারেই যাচ্ছেতাই। বর্ষার সামান্য বৃষ্টিতে এখানকার হাজার হাজার মানুষের চরম দুর্ভোগের কবলে পড়তে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ২০১৪ সালে শাসনগাছা এলাকায় নির্মাণ কাজ শুরু হয় ফ্লাইওভারের। চলতি বছরের এপ্রিলে এটি উদ্বোধন হয়। এতে করে যানজট কিছুটা কমলেও জনভোগান্তি কমেনি। শাসনগাছা এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ফ্লাইওভারটি নির্মানের কাজ শুরুর পর এর নীচের রাস্তাটি গত ৫ বছরে কোন সংস্কারই করেনি। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে সড়কটি। এছাড়াও ড্রেন নির্মানে গাফিলতির কারণে জলাবদ্ধতা থেকেও কোন মুক্তি মিলছেনা। রেইসকোর্স এলাকায় প্রবেশের প্রধান সড়কটি ও সড়কের পাশজুড়ে থাকা ড্রেনের স্লাব ভেঙে সামান্য বৃষ্টিতে ময়লা আবর্জনাসহ পানি রাস্তার উপর জমে যায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, বর্ষার পানিতে একাকার হয়ে যায় ফ্লাইওভারের পূর্ব অংশের নীচে উত্তর-দক্ষিণমুখী দুটি সড়কই। একেতো সড়কটির কোন সংস্কার নেই, তার উপর ড্রেনেজ ব্যবস্থার অবস্থা আরো ভয়াবহ। ময়লা আবর্জনাসহ পানি সামান্য বৃষ্টিতে একসাথে মিশে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলে। অনেক স্থানীয় দোকানীরা বাধ্য হয়ে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখছে। এখানে রয়েছে বেশ ক’টি হাসপাতাল। ময়লা আবর্জনার গন্ধে রোগীও তাদের স্বজনদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা দোকানীরাও কোন প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেনা।
সরেজমিন দেখা যায়, কুমিল্লার পশ্চিম ও উত্তর এলাকার মানুষের একমাত্র প্রবেশপথ শাসনগাছা। এখানকার যানজট ছিল নগরের গলার কাঁটা। সেই যানজট নিরসনে রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। এতে শহরের রেসকোর্স থেকে অল্পসময়েই শাসনগাছা অতিক্রম করে মহাসড়কে যাওয়া যাচ্ছে। তবে রেলওয়ে ওভারপাসের নিচে শাসনগাছার অবস্থা একেবারেই বেহাল। শহরের বাদশা মিয়ার বাজার, রেইসকোর্স, স্টেশন মার্কেট সড়ক, ধর্মপুর ভিক্টোরিয়া কলেজ রোড সড়ক এবং বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া সড়কে ওভারপাসের নিচ দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। সড়কটি সরু এবং নাজুক হওয়ায় চলাচলে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। ওভারপাসের দুই পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচলের কোনো সুব্যবস্থা নেই। একটি গাড়ি অতিক্রম করতে আরেকটি গাড়ির  পেছনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এই সড়কটির ইট পাথর সরে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সড়কের ওপরে হকার বসে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের । কুমিল্লা ইষ্টার্ণ ইয়াকুব প্লাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ¦ নূরে আলম ভুঁইয়া দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ‘ওভারপাসের নিচ দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে। সড়কটি এমনিতেই সরু। তার উপর রাস্তাটি খানাখন্দে ভরা। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে। নিচের পথচারী ও ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ কমাতে সড়কটি সংস্কারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এ বিয়য়ে কুমিল্লার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার বলেন, ভূমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন কারণে সড়ক সংস্কারে সময় লেগেছে। ওভারপাসের নিচের সড়কটি এক মাসের মধ্যে সংস্কার করতে পারব বলে আশা করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন