আল আমিন ম-ল, গাবতলী (বগুড়া) থেকে
বগুড়া গাবতলী উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আজ। ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনায় সবার দৃষ্টি এখন রামেশ্বরপুরের দিকে। নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, গাবতলীর ১১ ইউনিয়নে মোট ভোটার ২ লক্ষ, ২৫ হাজার, ৯শ’ ৮৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ, ১২ হাজার, ৭শ’ ৮৩ জন। মহিলা ভোটার ১ লক্ষ, ১৩ হাজার, ২শ’ ৬ জন। ভোটকেন্দ্র ১শ’ ৩টি এরমধ্যে ৪৯টি ভোটকেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) বলে উল্লেখ করেছেন থানা ও প্রশাসন। নির্বাচন বিষয়ে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পয়র্ন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। তবে ভোট নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে নানামুখী ভয় ও শঙ্কায় রয়েছে। ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে গত ৯ এপ্রিল রামেশ্বরপুরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মনোনীত দু’চেয়ারম্যান প্রার্থী’র সমর্থক নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ হওয়ায় দু’পক্ষের নির্বাচনী সভা প- হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রামেশ্বরপুরে বিএনপির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল ওহাব ম-লকে প্রধান আসামি করে সাড়ে ৬শ’ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এরপর বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল ওহাব ম-ল জীবনের নিরাপত্তাসহ সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করে গত ১৯ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি (চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল ওহাব ম-ল) বলেন, বিএনপির ৫ হাজার নেতাকর্মীরা গ্রেফতারের আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমিসহ আমার নেতাকর্মীরা কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার-প্রচাণরা করতে পারছি না। বর্তমানে ৯টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এছাড়াও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে অগ্নিসংযোগ করাসহ আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমনকি নতুন করে মামলা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র চলছে। এছাড়াও কাগইলে বিএনপির নির্বাচনী সভা করতে দেয়া হয়নি। প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেয়া হয়েছে। নশিপুরে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২টি অভিযোগ দায়ের করা হয়। নাড়–য়ামালায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারপিট করা হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রিটার্নিং অফিসারদের নিকট একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়। ফলে ভোটের দিন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গোলোযোগের আশঙ্কা করছেন তারা। ইতোমধ্যে ৩ ইউনিয়নে ৪ ইউপি সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান ৫৩ জন, ইউপি সদস্য মহিলা প্রার্থী ১শ’ ১৫ জন, পুরুষ সদস্য প্রার্থী ৩শ’ ৮১ জন মোট ৫৪৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১শ’ ৩ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৯ ও সাধারণ ভোটকেন্দ্র ৫৪ উল্লেখ করেছেন গাবতলী মডেল থানা ও স্থানীয় প্রশাসন। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলো হলো কাগইলের কৈঢোপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাগইল কে, কে উচ্চ বিদ্যালয়, দেওনাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সোনারায়ে আটবাড়িয়া আশমতুল্লা বালিকা দাখিল মাদ্রাসা, সাবেকপাড়া দাখিল মাদ্রাসা, সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয়, সরর্ধনকুটি বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গজারীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রামেশ্বরপুরে রামেশ্বরপুর উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাগুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাঝপাড়া কুসুমকলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামেশ্বরপুর নিশুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শুভপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচকাতুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নাড়–য়ামালায় প্রথমারছেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাড়–য়ামালা উচ্চ বিদ্যালয়, বাহাদুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হামিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্যেকাঁতুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নেপালতলীতে এমআর উচ্চ বিদ্যালয়, পাড়কাঁকড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডঙর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আকন্দপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাতহলিদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নেপালতলী উচ্চ বিদ্যালয়। দূর্গাহাটায় দূর্গাহাটা উচ্চ বিদ্যালয়, বৈঠাভাঙ্গা দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দূর্গাহাটা কলেজ। গাবতলী সদর ইউনিয়নে সোন্ধাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পদ্মপাড়া দাখিল মাদ্রাসা, তরফসরতাজ ফাজিল মাদ্রাসা, উঞ্চুরখী রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়, উঞ্চুরখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মহিষাবানে গুড়টুপ নগর দাখিল মাদ্রাসা, পাড়রানীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহিষাবান উচ্চ বিদ্যালয়, মহিষাবান মোকছেদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা। নশিপুরে নশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাজবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বারিয়াদিঘীতে তল্লাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালাইহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দক্ষিণপাড়ায় লাংলু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচপাইকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোয়ালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কৃষ্ণচন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়, উজগ্রাম এবতেদায়ী মাদ্রাসা। ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। পুলিশ, বিজিবি ছাড়াও আনসার-ভিডিপি ও গ্রামপুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল রয়েছে। এদিকে গতকাল ১১ ইউনিয়নে ১শ’ ৩টি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম সরবারাহ করা হয়েছে। স্ব-স্ব প্রিজাইডিং অফিসার ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, সিল ও কালিসহ ভোটগ্রহণের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। নির্বাচন বিষয়ে গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাঃ আহসান হাবিব জানান, গাবতলীতে ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। গাবতলী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন জানান, ইউপি নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গাবতলী মডেল থানা ওসি শাহীদ মাহমুদ খান জানান, কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন