রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় এখন তীব্র গ্যাস সংকট চলছে। গ্যাস নিয়ে কোটি কোটি মানুষ এখন ভোগান্তির শিকার। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এতোদিন চুলা টিমটিম করে জ্বললেও এখন আর জ্বলছেই না। বেশিরভাগ এলাকাতেই দিনের বেলা একেবারেই গ্যাস থাকছে না। কোন কোন এলাকায় রাত ১০টার আগে চুলা জ্বলছে না। গ্যাস সংকটের কারণে রাজধানীর বেশ কয়েকটি সিএনজি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এর ফলে গত কয়েক দিন থেকে সিএনজি স্টেশনগুলোতে চলছে লম্বা লাইন। দৈনিক ইনকিলাবের রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, সংকটের কারণে নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ। চুলা বাড়াতে গেলেও দিতে হয় ঘুষ। রাজধানীতে গ্যাস সংকট যখন তীব্র বলে বোঝানো চেষ্টা হচ্ছে তখন ঢাকার পাশেই নারায়ণগঞ্জে ৫০ হাজারের ও বেশি অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত এই সংযোগ বাড়ছে। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে এ অবস্থা চলছে। তিতাসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সরকারিদলের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদরা সরকারি গ্যাসকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পদের মতো ব্যবহার করছেন। বলা হচ্ছে টাকার বিনিময়ে নিজেদের খেয়াল খুশি মত সংযোগ দিচ্ছেন। হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটির টাকা। এর আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ প্রতিমন্ত্রী গ্যাস সংকট কেটে যাবার কথা বললেও পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। চলমান সংকট প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাস লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা রেশনিং-এর মাধ্যমে বাসাবাড়ির সংকট মেটাবার উপর গুরুত্ব দিলেও এখন মনে হচ্ছে বাস্তবতা বিপরীত। সে কারণেই সংকট নিয়ে ভাববার সময় এসেছে।
বিতরণ ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকার কারণে গত কয়েক বছর ধরেই এটা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল যে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে গ্যাসের সরবরাহ কমতে থাকত। এবারেও তেমনটাই হয়েছে বলে মনে হলেও বাস্তবতা তেমনটা নয়। অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় শীতের সময়ে সকালের দিকে গ্যাস চলে গেলেও বিকেল বা সন্ধ্যা নাগাদ তা ফিরে আসত। গত দু’এক বছর ধরে এঅবস্থার পরিবর্তন ঘটে। এবারে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। দিন-রাত কখনোই চুলায় গ্যাস থাকছে না। এব্যাপারটি বাস্তবতার সাথে মিলে না। কারণ দিনের বেলায় বাণিজ্যিক সরবরাহ তথা সব কিছু চালু থাকার করণে বাসাবাড়ির রাইজার অবাণিজ্যিক হবার কারণে তারা বঞ্চিত হতো। স্বাভাবিকভাবেই সরবরাহ কম হতো। অর্থাৎ রাতে স্বাভাবিকভাবেই সরবরাহ বেড়ে যেত। এটাই হবার কথা। এবারে তা হচ্ছে না। দিন-রাত সবসময়েই চুলা প্রয়োজনীয় গ্যাস পাচ্ছে না। বিষয়টিকে অস্বাভাবিক বা কৃত্রিম মনে করার সঙ্গত কারণ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রও সেরকমই মনে করছে। আদালত থেকে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে কারণ দর্শানোর পর সংশ্লিষ্টরা নাকি নতুনতর সিদ্ধান্ত নিয়েছেনÑ যার আওতায় এমন বাস্তবতা তৈরি করা যাতে গ্রাহকরা আপনাতেই গ্যাসের সংযোগ নিতে অনাগ্রহী হয়ে ওঠে। তারা মনে করছেন সরকার ইতোপূর্বেও আবাসিক সংযোগ বন্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পর্যায়ক্রমে সেটাই বাস্তবায়িত করতে যাচ্ছে। বাসাবাড়িতে সংকট মেটাবার জন্য নয় বরং বাসাবাড়িতে সংযোগ বন্ধ করার প্রয়াস থেকেই রেশনিং করা শুরু হয়েছে। এটাই সংকটের মূল কারণ। সে কারণেই চুলায় গ্যাস সরবরাহ তুলনামূলকভাবে কমে গেছে। অনেকটা গোপন এই সিদ্ধান্তে পোয়াবারো একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজের। প্রকাশ্যে তারা যাই বলুক গোপনে এই শ্রেণী সংযোগ ও গ্যাস বাড়িয়ে দেয়ার নাম করে বিপুল অর্থের মালিক বনে যাচ্ছে। সঙ্গত বিবেচনাতেই তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় এটা একটা বড় দুর্নীতি। সরকারের লোকজন এই দুর্নীতির সাথে জড়িত। যে কারণে এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তিনি মনে করেন, এই বিশাল দুর্নীতি ও অপব্যবহারের কারণে দেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
গ্যাস সংকটের ভুক্তভোগিরাই কেবল বুঝতে পারছেন অবস্থা কতটা নাজুক। ব্যস্ত নগরীতে এখন এমন অনেক পরিবার রয়েছে যাদের গ্যাস সংকটের কারণে সকালের নাস্তাটুকু না করেই দিনের কাজে বেরিয়ে পড়তে হচ্ছে। নিত্যদিনের বাজেট কাটছাঁট করতে হচ্ছে। অন্যদিকে গ্যাস সংকটে চাপ বাড়ছে বিদ্যুতের উপর। শীতের দিনে যেসব অসুস্থ মানুষ অজু গোসলে গরম পানি ব্যবহার করেন তাদের পক্ষেও এটা সম্ভব হচ্ছে না। প্রকাশিত খবরাদি বিশ্লেষণে এটা মনে হবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে সংকট অনেকটাই কৃত্রিম। অবশ্যই দেশের গ্যাস ফুরিয়ে গেলে আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। গ্যাসের বিকল্প জ্বালানির সংস্থান না করে গ্যাস নিয়ে যে ধরনের তেলেসমাতি চলছে তা নিঃসন্দেহে সাধারণের স্বার্থের বিপরীতে অবস্থান করছে। সে কারণে গ্যাস নিয়ে তালবাহানা না করে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম মারাত্মকভাবে কমেছে। দেশে তেলের দাম কমালে তার ইতিবাচক প্রভার গ্যাসের উপরও পড়তে বাধ্য। জ্বালানি তেলের দাম কমালে বিদ্যুতের মূল্যও কমে আসার কথা। সেক্ষেত্রেও সাধারণের সুবিধা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিদ্যমান বাস্তবতায় সরকার বা সংশ্লিষ্টমহল তেল, গ্যাস নিয়ে যে ধরনের কর্মপন্থা গ্রহণ করেছে তাকে গণবিরোধী বলা ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। আমরা মনে করি, অবৈধ সংযোগ প্রদান বন্ধ, সেই সাথে বৈধ সংযোগে বাসাবাড়িসহ সব ক্ষেত্রে গ্যাস পাবার একটি সমন্বিত নীতিগ্রহণ জরুরি। গ্যাস রেশনিং, চাপ কমানো বা সংযোগ বন্ধ করা কোন পলিসি হতে পারে না। সংশ্লিষ্টদের বোধোদয় হবে, এটাই প্রত্যাশিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন