রাজশাহী ব্যুরো : বৈশাখের প্রচÐ তাপাদহে পুড়ছে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ জীবজন্তু প্রকৃতি। বিরুপ প্রভাব পড়েছে আম লিচুর উপর। সকালটা শুরু হচ্ছে তাঁতানো সুর্য নিয়ে। বেলা যত বাড়ছে তাপমাত্রা ততই বাড়ছে। দুপুরের আগেই হয়ে উঠছে অসহনীয়। ঘরের বাইরে বের হলেই শরীর জ্বালানো গরম হাওয়ার ঝাপটা কিংবা তাপ। দিনের বেলা বাইরে বের হওয়াটা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। তবুও যেভাবে হোক কর্মস্থল, স্কুল, কলেজে যেতে হবে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে দিন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষেরা। রিক্সা চালক, ভ্যান চালক, মুটে মজুররা। এ রোদ্র আর গরম বাতাসের ঝাপটাকে সাথে নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। যাত্রীর অভাবে তাদের আয়ও কমে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীরা গরমে হাঁফিয়ে উঠছে। এর সাথে কখনো কখনো বিদ্যুতের যাওয়া আসার খেলা অবস্থাকে আরো কাহিল করে ফেলেছে। বাজার বিপনী বিতানগুলোতে স্বস্তি নেই। নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাহেব বাজারস্থ আরডিএ মার্কেট যেন একটা গ্যাস চেম্বার। দমবন্ধকর অবস্থা। একবার ভেতরে গেলে ঘামে ভিজে শরীর নিয়ে বের হতে হয়। শীত মওসুমেই মার্কেটের ভেতর গরম থাকে। আর এখনতো কি অবস্থা তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। টিনের চাল দেয়া ঘরবাড়ি গুলোর বাসিন্দাদের অবস্থা আরো কাহিল। তাপ যেন চুইয়ে নামছে। উপরের গরম টিনের তাপ অন্য দিকে গরম বাতাসের ঝাপটার কারণে জানালা খুলে না রাখতে পারা অবস্থাকে আরো শোচনীয় করে তুলেছে। গরমের তীব্রতায় মানুষ একটুতে হাঁপিয়ে উঠছে বলে কাজকর্ম ঠিকমত করতে পারছেনা। পেটের দায়ে রাজপথে বিভিন্ন মালের পসরা সাজিয়ে বসা মানুষরা রয়েছে বড্ড কষ্টে। একদিকে মাথার উপর খাড়া সূর্যের তাপ অন্যদিকে এমন বিরুপ আবহাওয়ায় ক্রেতা নেই। এসব দিন খেটে আয় করা মানুষর্দে দিন চলছে অনাহারে অর্ধাহারে। তবে বিকেল হলে রাস্তায় লোকজনের চলাচলের সংখ্যা কিছুটা বাড়ছে। গরমের প্রভাব পড়েছে প্রাণীকূলের উপরও। এমনিতে খামারের হাঁস মুরগী নাজুক প্রকৃতির। গরমরে তীব্রতা থেকে এদের রক্ষা করতে খামারগুলো ব্যবহার করছে বড় বড় স্ট্যান্ড ফ্যান। অনেকে গরুর গোয়ালে ঝুলিয়েছে ফ্যান। বিদ্যুতের লোডশেডিং এখানেও ভোগাচ্ছে। ফসলের উপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে তাপাদহের। পটল মরিচ শসা শাক-সবজির ক্ষেতগুলো নেতিয়ে পড়ছে। দিতে হচ্ছে সেচ। আম লিচুর গাছেও প্রভাব পড়েছে। তাপ সহ্য করতে না পেরে আমের গুটিগুলো ঝরতে শুরু করেছে। লিচু গাছের পাতা বির্বণ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। লিচুতে এখন শাঁস বাড়ার কথা থাকরেও দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। লিচুর গুটিগুলো বড় হবার বদলে চুপসে যাচ্ছে। এরপর ঝরে পড়ছে। লিচু চাষীরা ভাবছেন গরমের তীব্রতার কারণে বোধ হয় এমন হচ্ছে। তবে এটা মানতে নারাজ কৃষি কর্মকর্তারা। তাদের ভাষায় গরম যতো বাড়ে লিচু ততই শাসালো হয়। আর বৃষ্টি হলে হয় মিষ্ট ও শাসালো। লিচু চাষীরা গাছের গোড়ায় ও পাতায় পানি ছিটিয়ে এবং নানা রকম ঔষধ স্প্রে করেও ফল পাচ্ছেনা বলে জানান। গতকাল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকটি গাছ এমন অবস্থা দেখা যায়। কৃষি বিভাগের সূত্র জানায়, এবার রাজশাহীর বেশকিছু এলাকায় এমনটি দেখা যাচ্ছে। তবে লিচু গাছের এমন হবার কারণ সর্ম্পকে তারাও কোন নিশ্চিত ধারণা দিতে পারেননি।
এদিকে তীব্র তাপাদহের সাথে বিদ্যুতের লোডশেডিং পরিস্থিতিকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। বিদ্যুত বিভাগ বলছে গরমের কারণে চাহিদা বেড়েছে। তাছাড়া সরবরাহকৃত বিদ্যুতের একটা বড় অংশ খেয়ে ফেলেছে ব্যাটচারি চালিত রিক্সা অটোরিক্সা। ফলে বিদ্যুতের উপর চাপ বাড়ছে। লোডশেডিং করে পরিস্তিতি সামাল দিতে হচ্ছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায় গতকাল রাজশাহীতে সর্ব্বোচ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর সর্বনি¤œ ২৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আপাতত বৃষ্টিট হবার সম্ভাবনাও কম বলে জানান হয়। বৃষ্টি নামলেই শীতল হতে পারে তপ্ত হাওয়া। তীব্র গরমে অস্বস্তিতে থাকা মানুষ চেয়ে আছে আকাশ পানে রহমতের বৃষ্টির অপেক্ষায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন