শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি

৮ মাসে ১৩ খুন

কক্সবাজার জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৫ এএম

কক্সবাজার সদর মডেল থানায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। পর্যটন শহর কক্সবাজারের সর্বত্র মাদক ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। পুলিশ মাদকের পেছনে দৌড়াতে গিয়ে সদরের বিভিন্ন ইউনিয়নে চুরি, ডাকাতির ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। ৮ মাসে খুনের ঘটনা ঘটেছে ১৩টি। বিভিন্ন মামলার আসামীরা বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায়।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার সদর উপজেলায় ১৩ টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। কক্সবাজার পৌরসভা, ঝিলংজা ও খুরুশ্কুল ও ভারুয়াখালী ইউপিতে কুপিয়ে, গুলি করে ও গলা কেটে এসব হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়। এদের মধ্যে প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি কিংবা কুপিয়ে হত্যার ঘটনাও রয়েছে। কিন্তু মাত্র ২ টি হত্যা মামলার মূল ঘাতককে গ্রেফতার করতে পেরেছে পুলিশ। অন্য একটি মামলার ২ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও বাকি সব মামলার অভিযুক্তরা অধরা রয়েছে এখনো।
সদর থানা সূত্র জানায়, ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ায় বাচামিয়ার ঘোনায় ছোট ভাই আতিকুর রহমান (২০) এর ছুরিকাঘাতে বড় ভাই হাবিবুর রহমান (২২) খুন হয়।এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, মামলার একমাত্র আসামী আতিকুর রহমানকে ৯ সেপ্টেম্বর রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৯ এপ্রিল ভারুয়াখালীর দক্ষিণ পাড়ায় বসতবাড়ির সীমানা বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজনের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আব্দুর রহিম (৩৩) নামে এক যুবক নিহত হয়।
এ বিষয়ে ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মিনহাজ মাহমুদ ভুইয়া বলেন, মামলাটি আমাদের কাছে তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে মামলাটি সিআইডি;র কাছে রয়েছে। ১০ এপ্রিল লাইট হাউজের বিএম রিসোর্ট থেকে ২০ বছর বয়সী এক তরুণীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সঞ্জিত চন্দ্র দে বলেন, বিএম রিসোর্টে নিহত তরুণীর প্রকৃত পরিচয় ও ঘাতককে এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
গত ২৪ মে কলাতলীর কাটা পাহাড় থেকে মো. হাসানের (২৮) এর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ মামলার বাদী এসআই আবুল কালাম বলেন, হাসান নিহতের ঘটনায় তিনটি পৃথক মামলা হয়েছে। এসব মামলার সকলেই অজ্ঞাতনামা। ২৫ মে জানারঘোনার ফুটখালী মসজিদ প্রাঙ্গনে বড় ভাই এরশাদ উল্লাহ (২৬) গুলি করে তার ছোট ভাই আবদুর শুক্কুরকে (১৯) হত্যা করে। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সনদ বড়–য়া বলেন, ঘাতক এরশাদ উল্লাহকে কুতুবদিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। তবে অস্ত্রের যোগানদাতা মনসুর মিস্ত্রী ও হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
গত ১৭ জুন খুরুশকুল ইউনিয়নে ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে আফসার কামাল ওরফে কালাপুতু (৩৬) নামে এক যুবক গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে। এবিষয়ে কক্সবাজার সদর থানার ওসি (তদন্ত) কামরুল আজম বলেন, মামলাটি পিবি আইকে হস্তান্তর করা হয়েছে। ২৫ জুন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বৈদ্যঘোনার আলি হোসেন বৈদ্যর ভাড়া বাসা থেকে শান্তা আকতার ওরফে মাহমুদা নামের এক গৃহবধূর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই থেকে নিহতের স্বামী শরিফ পলাতক রয়েছে। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেখ সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকে শরীফ পলাতক রয়েছে। মামলাটি ডিবিকে হস্তাস্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।
২৯ জুন দুপুরে দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের প্রশিক্ষণ সম্পাদক এএইচএম তানভীর আহমেদ (২৬) নিহত হয়। তানভীর হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সঞ্জিত চন্দ্র দে বলেন, ওই মামলার অভিযুক্ত ২ জনকে ঘটনার পরদিন গ্রেফতার করা হয়।আর মামলায় অভিযুক্ত অন্য আট আসামী এখনো পলাতক রয়েছে।
৩ জুলাই রাতে আধিপত্য বিস্তার, দুই সন্ত্রাসী বাহিনী কোন্দল ও সরকারি খাস জমিতে মসজিদ নির্মাণ কেন্দ্র করে পাহাড়তলীর ইসলামপুরে প্রতিপক্ষের গুলিতে মো. ইসমাঈল (২৬) নামে এক যুবক নিহত হয়। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, মামলার ৪ আসামীই পলাতক রয়েছে। ১১ জুলাই শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় মো. শফি নামের এক দিনমজুরের পিটুনিতে সাহাব উদ্দিন (১৩) নামের ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিশু নিহত হয়। সেসময় জনগন শফিকে ধরে পুলিশে সোপার্দ করে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আনসার উল্লাহ বলেন, ওই মামলার আসামী একজনই। তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। গত ২২ আগস্ট দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার মাহামুদুল চেয়ারম্যান ঘাটায় দুই ছিনতাইকারীর বিবাদ মেটাতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে মো. শাহাবুদ্দিন (৩২) নামে এক যুবক নিহত হয়। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাশেদুল কবির বলেন, মামলার এজাহারভুক্ত আসামীদের এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। গত ৫ সেপ্টেম্বর আইনজীবি ভবনের সামনে মক্কেল খালেক ও তার সঙ্গীদের মারধরে নিহত হয় কামাল উদ্দিন (৫৫) নামের এক আইনজীবি সহকারী। পিএমখালী দক্ষিণ ডিকপাড়া এলাকার মৃত মো. নসিবের ছেলে ও একই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য কামাল নিহতের ঘটনায় সেদিন রাতেই বাদী হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে নিহতের পরিবার।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই দেলোয়ার হোসেন বলেন, অভিযুক্তরা সকলেই পলাতক। কাউকেই গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। একই দিন বিকেলে চাউলবাজারে দূর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সমিতিপাড়ার মোস্তাকপাড়া গ্রামের মনসুর আলমের ছেলে মাছ ব্যবসায়ী আবু তাহের নিহত হয়। এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেখ সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রকাশ্যে দিবালোকে খুন হয়েছে। অনেকেই দেখেছেন কিন্তু কেউ মুখ খুলছে না। তবে আমরা একটি সূত্র পেয়েছি সেই সূত্র ধরেই এগুচ্ছি। খুব শীঘ্রই সে পুলিশের জালে বন্দি হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন