স্বজনদের অভিযোগ ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়
না.গঞ্জ পুলিশের দাবি কোনে অভিযান চালানো হয়নি
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপ-শহরের আলমপুর এলাকার ৯নং সেক্টরের ১১নং ব্রীজের নীচ থেকে গতকাল শুক্রবার সকালে তিন যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্বজনদের দাবি, গত বুধবার রাতে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে যাত্রীবাহী বাস থেকে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে ওই তিনজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
নিহতরা হলেন, রাজধানীর মহাখালীর শহীদুল্লাহর ছেলে মো. সোহাগ (৩২), মুগদা এলাকার মো. আবদুল মান্নানের ছেলে শিমুল আজাদ (৩০) ও আবদুল ওয়াহাব মিয়ার ছেলে নূর হোসেন ওরফে বাবু (৩০)। এর মধ্যে শিমুল ও বাবু সম্পর্কে ভায়রা ভাই। নিহত তিন যুবকের পরনে প্যান্ট, শার্ট ও গেঞ্জি ছিল। তাদের মাথা ও শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। নিহতদের লাশ ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে শিমুলের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ঘোরেলায় এবং নূর হোসেন গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির পাইকপাড়ায়।
নারায়নগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গতকাল ভোরে তিন যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকার লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। সেখানে জেলা পুলিশের কোনো অভিয়ান চালানো হয়নি। অন্য কোনো বাহিনী তাদের আটক করেছিল কি না, সে তথ্যও আমাদের কাছে নেই। এ ঘটনায় মামলা হবে এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রূপগঞ্জ থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির জানান, নিহত একজনের পকেট থেকে ৬৫টি ইয়াবা বড়ি জব্দ করা হয়েছে। যুবকদের স্বজনেরা লাশ শনাক্ত করেছেন। দেখে মনে হয়েছে অন্য কোথাও হত্যার পর লাশগুলো এখানে ফেলে যাওয়া হয়েছে। নিহতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে।
নিহত শিমুলের মা চায়না বেগম জানান, সোহাগ, শিমুল আজাদ ও নূর হোসেন বাবু তিন বন্ধু। শিমুল আজাদ ও নূর হোসেন বাবু ঝুটের ব্যবসা আর সোহাগ ডিশ ক্যাবলের ব্যবসা করত। সোহাগ ও নূর হোসেন বাবু মিলে বন্ধু শিমুল আজাদের বাড়িতে বেড়াতে যায়। গত বুধবার রাতে তারা শিমুলের বাড়ি থেকে মাওয়া হয়ে ঢাকা ফিরছিল। রাত ১টার দিকে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে তাদের শেষ কথা হয়। এরপর থেকে তিনজনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে পরিবারের লোকজন বিভিন্ন দিকে খোঁজাখুঁজি করে তাদেরকে না পেয়ে ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে যোগাযোগ করলে বাসের সুপার ভাইজার জানায়, মাওয়া থেকে ঢাকা আসার পথে সোহাগ, শিমুল আজাদ ও নূর হোসেন বাবুকে ডিবি পরিচয়ে বাস থেকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
নিহত শিমুলের স্ত্রী আয়েশা আক্তার আন্নিও জানান, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী বাস থেকে তার স্বামীসহ অন্যদের সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে থানায় এসে তিনি স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন। তার স্বামী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। কোন অপরাধ না করেও তার স্বামী নির্মমভাবে হত্যার শিকার হলেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি আরো বলেন, আমরা এ নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, রূপগঞ্জের কাঞ্চন থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৩শ’ ফুট রাস্তা। এ রাস্তার উভয় পাশে তেমন কোন জনবসতি নেই। ভ্রমনপিপাসু লোজন ৩শ’ ফুট সড়ক ও তার আশাপাশে ঘুরতে আসেন। কিন্তু এলাকাটি সন্ধ্যার পরেই নিরব হয়ে যায়। রাতের আঁধারে অপরাধীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। অপরাধীরা নিরাপদ স্থান হিসেবে এ এলাকাটিকে ব্যবহার করে। প্রায় সময় ৩শ’ ফুট সড়কের আশপাশে লাশ ফেলে যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন