শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ভাল নেই রানা প্লাজার আহত শ্রমিকরা

প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে : নিলুফা বেগম। থাকেন সাভারের রাজাশন এলাকার পলোয়ান পাড়ায়। স্বামী আর এক সন্তান নিয়ে তার সংসার। তার স্বপ্ন ছিল একমাত্র সন্তান রিফাত পাটওয়ারীকে (১০) ভাল স্কুলে লেখাপড়া করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবে। কিন্তু রানা প্লাজার ধসে তার সে স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে গেছে। এখন ছেলে লেখাপড়া তো দূরের কথা দু’বেলা দু’মুঠো ঠিকমতো খেতেও পারে না তারা।
নিলুফা বেগম বলেন, তিনি রানা প্লাজার পঞ্চম তলার ফ্যান্টম এ্যারেল -এ কাজ করতেন। ভবন ধসে পড়ার সাড়ে ৯ ঘণ্টা পর উদ্ধারকারীরা তাকে উদ্ধার করে। পিলারের নীচে চাপা পরে তার ডান পা অকেজো হয়ে গেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে ৯ মাসের বেশি চিকিৎসা করিয়েছেন তিনি। চিকিৎসকরা তার ডান পা কেটে ফেলতে চাইলে তিনি সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তা কাটতে দেননি।
নিলুফা বলেন, সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন মেয়াদে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা ও সাধারণ জনগণ এবং অন্যান্য জায়গা থেকে আরো এক লাখ ৪৫ হাজার টাকাসহ মোট ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। কিন্তু তার চিকিৎসায় খরচ করতে হয়েছে সাড়ে চার লাখ টাকা।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। পায়ের যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারি না। তবে এখন মনে হচ্ছে পা কেটে ফেললেই ভাল হতো। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সরকার যে টাকা দিয়েছে তা ফেরত নিয়ে যাক, তবুও আমার পা খানা ভাল করে দিক।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, স্বপ্ন ছিল একমাত্র ছেলেকে ভাল স্কুলে লেখা পড়া করাবো। কিন্তু এখন বাড়ির পাশে ‘বর্ণমালা’ নামে একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। কিন্তু গত তিন মাস যাবত স্কুলের বেতন, কোচিং ফি বাকি পরেছে। টাকার অভাবে দিতে পারছি না।
ছেলের বাবা তৌহিদুল ইসলাম রিকশা চালিয়ে যা রোজগার করে তা দিয়ে লেখা-পড়া করানো, নাকি সংসার চালাবো, নাকি নিজের পায়ের চিকিৎসা করাবো -বলেন নিলুফা।
আশরাফুল ইসলাম সুজন (৩২)। কাজ করতেন রানা প্লাজার ৬ষ্ঠ তলায় ইথার টেক্স কারখানায়।
ভবন ধসে পড়ার দিন সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দিকে উদ্ধারকারীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সাভার সিআরপিতে চিকিৎসা করিয়েছেন তিনি।
আশরাফুল ইসলাম সুজন ক্ষোভের সাথে বলেন, সরকারীভাবে ও বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা পেয়েছি। প্রথমে ফ্রি চিকিৎসা পেলেও হাসপাতাল থেকে রিলিজ করার পরে আবার হাসপাতালে রিকিৎসার জন্য গেলে টাকা দাবী করে। তবে টাকার অভাবে তিনি চিকিৎসা করাতে পারছেন না বলে জানান।
ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে আশরাফুল বলেন, প্রথমে মাথায় আঘাত পেয়ে পড়ে গিয়ে বাম হাতের ভিতরে রড ঢুকে বেরিয়ে যায়। পরে ভবনের একটি ভিম ভেঙ্গে বাম পায়ের উপর পরে। সে থেকেই বাম পা একেবারেই অচল। ক্র্যাচ ব্যবহার করে চলতে হচ্ছে। তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে বাসায় আসার পর আর কেউ খোঁজ নেয় নাই।
স্ত্রী, দুই সন্তান আশামনি (১০) ও আব্দুল্লাহ আল মামুনকে (১৯ মাস) নিয়ে তার সংসার। থাকের সাভার পৌর এলাকার রেডিওকলোনীর ভাটপাড়া মহল্লায়। মেয়ে আশামনি বাড়ির পাশে ভাটপাড়া মডেল স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ছে। কিন্তু টাকার অভাবে মেয়ের স্কুলের বেতন দিতে পারছি না। এমনকি স্কুলের একটি ‘ডাইরী’ এখন পর্যন্ত কিনে দিতে পারিনি। বাড়ির পাশে ছোট্ট একটি মুদি দোকান দিয়ে খুবই কষ্টে তাদের সংসার চলছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে রানা প্লাজা ধসের পর হতাহতদের ৪৫ জন শিশু সন্তান খাবার-লেখাপড়া সহযোগিতা করছে ‘সূর্যকণা শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র’ নামে একটি বেসরকারী সংস্থা। প্রথমে শিশুদের সংখ্যা বেশী থাকলেও বর্তমানে ২৫ জন শিশু রয়েছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আব্বাস আলীর বাড়ির নীচ তলার ফ্লোর ভাড়া নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে সূর্যকনা।
তবে ওই বাড়ির মালিক পৌর কাউন্সিলর মো. আব্বাস আলী জানান, রানা প্লাজা ধসের পরপরই তার বাসা ভাড়া নিয়ে শিশুদের লালন-পালন করছে। অনেকেই ইমান্দিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া করছে। তবে তাদের এখানকার বেশিরভাগ শিশুরাই লেখাপড়া ও খাওয়া-দাওয়ার পর যে যার স্বজনের কাছে চলে যায়।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজার বহুতল ভবন ধসে ১১শ’র বেশী লোক নিহত হয়, আহত হয় অসংখ্য শ্রমিক।

 

 

 

 

 

*************

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন