হাসপাতাল থেকে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে বের হচ্ছেন এক যুবক। পেছনে হেঁটে আসছেন আরেকজন। হাতে মুগুর। হাসপাতালের ফটক থেকে বের হতেই আচমকা ছুটে এসে ওই যুবকের মাথায় সজোরে আঘাত। লুটিয়ে পড়লেন যুবক।
তার পর আরও একবার আঘাত করে পালিয়ে গেল আঁততায়ী। সিসিটিভি ফুটেজে এমনই ভয়ানক এক খুনের ঘটনা ধরা পড়েছে তেলেঙ্গনার নালগোন্ডা জেলার মিরিয়ালগুড়ায়।-খবর আনন্দবাজারপত্রিকা অনলাইনের।
আট মাস আগেই প্রণয় পেরুমাল্লা (২৩) নামে ওই যুবক উচ্চবর্ণের অমৃতা বর্ষিণীকে বিয়ে করেন। নিম্নবর্ণের সঙ্গে বিয়ে মেনে নিতে না পারার জেরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন পরিকল্পনা করে প্রণয়কে খুন করেছে বলে তার অভিযোগ পরিবারের।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই প্রণয়ের শ্বশুর ও চাচা শ্বশুরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খোঁজ চলছে আঁততায়ীর। ঘটনার পরই অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্কুলে পড়াকালেই তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত প্রণয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বৈশ্য সম্প্রদায়ের অমৃতার।
অমৃতার বাবা মিরিয়ালগুড়া এলাকায় প্রোমোটারির ব্যবসা করেন। অমৃতার পরিবার এ সম্পর্ক প্রথম থেকেই মেনে নিতে পারেনি। প্রণয়ের পরিবার প্রথমে সম্পর্কে আপত্তি করলেও পরে মেনে নেয়। শেষে অমৃতার পরিবারের অমতেই আট মাস আগে দুজন বিয়ে করেন।
এর মধ্যেই অমৃতা অন্তঃসত্ত্বা হন। রুটিন চেকআপের জন্য শুক্রবার প্রণয় ও তার মা প্রেমলতা অমৃতাকে নিয়ে স্থানীয় জ্যোতি হাসপাতালে নিয়ে যান।
ঘটনার আকস্মিকতায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন অমৃতা। চিকিৎসায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেও মানসিকভাবে একেবারেই ভেঙে পড়েন তিনি।
তবে নিজের বাবা-কাকার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। পুলিশকে অমৃতা জানিয়েছেন, তার বাবা ও কাকা প্রথম থেকেই তাদের সম্পর্ক মেনে নেননি। কারণ প্রণয় নিম্নবর্ণের। আমি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর পাওয়ার পর গর্ভপাত করানোর জন্য চাপও দিচ্ছিলেন দুজন। তারাই পরিকল্পনা করে প্রণয়কে খুন করেছে।
অমৃতা বলেন, প্রণয় অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিল। আমাকে খুব ভালোবাসত। আমার সব দিকে খেয়াল রাখত। ওর বাড়ির লোকজনও খুব ভালো। গর্ভপাত করানোর কোনো ইচ্ছা আমার নেই। প্রণয় ও আমার সন্তানই আমাদের ভবিষ্যৎ। আমার ভাবতে অবাক লাগে, এই আধুনিক সমাজে এসেও ধর্ম-বর্ণ কেন এত গুরুত্ব পায়।
প্রণয় মাদিগা সম্প্রদায়ের তফসিলি জাতিভুক্ত। তাকে খুনের ঘটনার খবর সামনে আসতেই এই সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মিরিয়ালগুড়ার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ অবরোধ শুরু হয়ে যায়।
কার্যত অঘোষিত হরতালের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় মূল অভিযুক্ত অমৃতার বাবা মারুতি রাও ও কাকা শ্রবণ রাওকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আঁততায়ীর খোঁজে তল্লাশি চলছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন