রেজাউল করিম রাজু : ভাল মানুষটা ঘর থেকে বের হলো। আর বাড়ির বাইরে খুন হয়ে পড়ে থাকল। কি দোষ ছিল তার। কেন তাকে এমন মির্মম ভাবে খুন করা হলো। সেতো কখনো কারো ক্ষতি করেনি। নিহত শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর স্ত্রীর এমন বিলাপ । উপস্থিত সবার হৃদয়কে স্পর্স করে। নগরীর শালবাগান এলাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে একই আলোচনা এমন শান্তশিষ্ট একজন শিক্ষকের নির্মম হত্যাকান্ড নিয়ে। কেন ও কারা কি কারনে হত্যা করেছে এমন নানা আলোচনা মুখে মুখে। শান্তির শিক্ষা নগরী বলে খ্যাত রাজশাহীতে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে তিনটি নৃশংস খুনের ঘটনা আতংক ছড়িয়েছে। গত শুক্রবার নগরীর একটি অভিজাত ও সুরক্ষিত হোটেল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবনা বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর জোড়ালাশ উদ্ধারের রেশ শেষ হতে না হতে পরদিন শনিবার সাত সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিরিহ শিক্ষককে প্রকাশ্যে কোপের পর কোপ দিয়ে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে খুনীরা বীরদর্পে মটর সাইকেলে চলে গেল। সবার প্রশ্ন এসব কিসের আলামত। কারা কি উদ্যেশ্যে এমন করছে। আর কেনইবা একজন নিরীহ গোছের শিক্ষককে টার্গেট করা হলো। বিশ্ববিদ্যলয়ে ক্যাম্পাসে তার সহকর্মী শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপকালে সবাই বলেছেন স্যার খুব ঠান্ডা মানুষ ছিলেন। তার আচার আচরনের কারনে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে তার কোন শত্রু থাকতে পারে। পরিবারের লোকজন বলেন তার সাথে কারো শত্রুতা ছিলনা। শালবাগান এলাকার মানুষও বলছেন তার সাথে করোই বিরোধ ছিলনা। তবে তাকে কেন খুনের শিকার হতে হলো। এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে বেশকজন শিক্ষকের সাথে আলাপকালে তাদের কন্ঠে ছিল শংকার সুর। প্রশ্ন ছিল এরপর কার পালা। রেজাউল সাহেবের মত মানুষ খুন হবার পর আমরা নিজেদের কাউকে আর নিরাপদ ভাবতে পারছিনা। যেসব শিক্ষক সাদা দল নীলদলসহ বিভিন্ন সংগঠন করেন তাদের কথা ছিল আমরা সংগঠনের কারনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সোচ্চার থাকি। বক্তব্য বিবৃতি দেয়। নিহত শিক্ষকতো এসবের মধ্যেও ছিলেন না। তারপরও তার এমন নির্মম হত্যা মেনে নেয়া যায়না। নগরীর বিভিন্ন জনের সাথে আলাপকালে তারাও শংকা প্রকাশ করে বলেন ভাই কি শুরু হলো। আমরা এতোদিন রাজশাহীকে শান্তির নগরী হিসাবে জেনে এসেছি। পর পর তিন খুন মন থেকে শান্তি কেড়ে নিল। ঘনিষ্ট জনদের একে অপরকে সাবধান করে দিয়ে বলছে দেখে শুনে চলিশ। কখন যে কি হয় বলা যায়না। নগরীর বাইরে থাকে স্বজনরা ফোন করে খোজ খবর নিচ্ছে। তাদের কন্ঠেও একই ধরনের উদ্বেগ। পুলিশ ধারনা করছে এটি জঙ্গী গোষ্ঠির কাজ হতে পারে। তবে গভীরভাবে খাতিয়ে দেখা হচ্ছে হত্যাকান্ডের বিষয়টা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট তৎপর হয়েছে। হত্যাকা-ের বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভির্সি চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষককে একের পর এক হত্যা করা হচ্ছে। ড. ইউনূস, ড. তাহের, ড. শফিউলের পর সর্বশেষ ড. সিদ্দিকীকে হত্যা করা হলো। এর মাধ্যমে একদিকে বিশ্ববিদ্যালয় যেমন মেধাবী শিক্ষকদের হারাচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষকদের এই নিরাপত্তাহীনতা দূর করা দরকার। এজন্য সরকাররের বিভিন্ন সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাজ করে এর পেছনে দায়ীদের খুঁজে বের করতে হবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন