খুলনা ব্যুরো : খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দু’ভাইয়ের লোলুপ দৃষ্টিতে ঘর-সংসার ভাঙছে নিরীহ মানুষের। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম গাজী স্থানীয় দু’সন্তানের জননী বিধবাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টাকালে আটক করে এলাকাবাসী। গত ১৬ এপ্রিল দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটেছিল। এর আগে স্থানীয় নলিয়ান গ্রামের ডা. মোঃ সহিদুল ইসলাম মোল্যার স্ত্রী সেলিনা বেগমের সাথে শহিদুলের বড় ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী জুলুর পরকীয়া সম্পর্ক এলাকায় ওপেন সিক্রেট। এমন আরো কয়েকটি ঘটনা রয়েছে যা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না কেউ। তাদের দু’ভাইয়ের অবৈধ প্রেমজ সম্পর্ক, ফুসলিয়ে শারীরিক সম্পর্ক ও একের পর এক জোরপূর্বক ধর্ষণের মতো ঘটনায় আবার ফুঁসে উঠছে এলাকাবাসী। যেকোনো সময়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জেলার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম গাজী দু’সন্তানের জননীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টাকালে আটক করে এলাকাবাসী। গত ১৬ এপ্রিল দিবাগত গভীর রাতে সুতারখালী ইউনিয়নের কালাবগী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ধর্ষিতার চাচা শ্বশুরের হাতে কামড় দিয়ে পালিয়ে যায় শহিদুল ইসলাম গাজী। তবে চালকসহ ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলটির আটকে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী জুলুর ভাইয়ের এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, শনিবার গভীর রাতে দু’টি কন্যাসন্তানের জননী বিধবার (স্বামী মৃত) ঘরে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টা করে শহিদুল ইসলাম গাজী (৩২)। এসময় তার ডাক-চিৎকারে পাশের বাড়ী থেকে গৃহবধুর চাচা শ্বশুর এসে তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। পরে আশেপাশের আরো মানুষ বেরিয়ে এসে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলটি জব্দ ও চালককে আটক করেন। এসময় গৃহবধূর চাচা শ্বশুরের হাতে কামড় দিয়ে পালিয়ে যায় স্থানীয় মৃত মোজাম গাজীর ছেলে শহিদুল ইসলাম।
এঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন স্থানীয় নলিয়ান নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আসাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্থানীয়দের সহায়তায় ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক আক্তারুজ্জামান বাবুকে (পূর্ব কালাবগীর আব্দুল গফুর মোল্যার ছেলে) আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। পরে অভিভাবকদের মুচলেকায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর ভুক্তভোগীর পক্ষে কোন অভিযোগ দেয় হয়নি। তাছাড়া অভিযুক্তকেও পুলিশ আটক করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম গাজী মোবাইলে বলেন, ঘটনা সঠিক নয়। আমি রাতে বাড়ীর বেরই হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এ অপবাদ ছড়াচ্ছে।
অপরদিকে, এঘটনায় ওই বিধবার চাচা শ্বশুর মোঃ খায়রুল ইসলাম সানা টুকু বাদী হয়ে দাকোপ থানায় অভিযোগ দাখিল করেছেন। এস আই নিশিকান্ত কুমার সরেজমিন তদন্তে গিয়েও ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
আবার, ২০১০ সালে নলিয়ান গ্রামের ডাঃ সহিদুল ইসলাম মোল্যার স্ত্রীর সাথে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জুলফিকার আলী জুলুর সাথে অবৈধ সম্পর্কের জেরধরে সংসারটি ভেঙে যায়। পরে তাদের চক্রান্ত থেকে রেহাই পেতে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার বরাবর দরখাস্ত করেছিলেন ভুক্তভোগী। যা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ ও তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সুপারিশ করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় মহিলা ওয়ার্ড মেম্বর খাদিজা আক্তার বলেন, ‘এই আধুনিক যুগে নারীর প্রতি পুরুষের এতোটা লোলুপ দৃষ্টি থাকতে পারে তা ওই পরিবারটি না দেখলে বিশ্বাস হবে না। এলাকার মানুষ ফুঁসে উঠেছে। যেকোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন