বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

জমি ও ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সচেতন হতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

দেশের আবাসন খাত অর্থনীতির একটি বৃহৎ খাতে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে খাতটি অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করছে। সাধারণত দেখা যায়, যখন কোন খাত ক্রমাগত বিস্তৃতি লাভ করে, তখন তার সঙ্গে কিছু অসাধু এবং প্রতারক প্রতিষ্ঠানও যখন কোনো খাত যুক্ত হয়। আবাসন খাতেও এ ধরনের কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরেই যুক্ত রয়েছে। এগুলোর যেমন ভিত্তি নেই, তেমনি রাজউকেরও অনুমোদিত নয়। প্রতিষ্ঠানগুলো জমি ও ফ্ল্যাট কেনার জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধার কথা বলে মানুষকে প্রতারণা করে আসছে। এমনকি অন্যের জমি নিজেদের দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে ডাউন পেমেন্টসহ বছরের পর বছর ধরে কিস্তি নিচ্ছে। ১০-১৫ বছর হয়ে গেলেও জমি বা ফ্ল্যাট ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেয় না। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি তার গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের জমি বা ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিচ্ছি বা দিব বলে বছরের পর বছর ঘুরিয়ে শেষ পর্যন্ত উধাও হয়ে যায়। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকে দেয়া লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকা, পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে কয়েক হাজার রিয়াল এস্টেট ও আবাসন কোম্পানি গড়ে উঠেছে। এদের অনেকের বিরুদ্ধেই গ্রাহকদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। তারা গ্রাহকদের বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন ও সুযোগ-সুবিধা দেয়ার নামে প্রতারণা করে আসছে। গ্রাহকরাও কোনো কিছু না ভেবে প্রলুব্ধ হয়ে এসব আবাসন কোম্পানির প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছে এবং সর্বস্বান্ত হচ্ছে।
আবাসন খাতে এক শ্রেণীর কোম্পানির প্রতারণার বিষয়টি নতুন নয়। তারা দীর্ঘদিন ধরেই গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে আসছে। এদের সাথে যুক্ত থাকে এলাকার প্রভাবশালী কিছু মানুষ। ফলে তারা সহজে সাধারণ গ্রাহকদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে পারছে। গ্রাহকরা তাদের বিভিন্ন প্রলোভনে পড়ে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালভাবে খোঁজখবর না নিয়েই জমি বা ফ্ল্যাট কেনার প্রক্রিয়া শুরু করে। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের নিজেদের কোনো জমি বা বিক্রি করার মতো ফ্ল্যাট নেই। তারা গ্রাহকদের অন্যের জমি দেখিয়ে নিজেদের বলে চালিয়ে দিচ্ছে। গ্রাহকদের গাড়িতে করে জমি দেখিয়েও আনছে। এসব প্রতিষ্ঠান অতি অল্প কিস্তিতে এমনকি কোনো ধরনের ডাউনপেমেন্ট ছাড়া জমি কেনার প্রস্তাব দিয়ে থাকে। জমির ভাল অবস্থান এবং স্বল্প দাম ও স্বল্প সময়ে হস্তান্তর করা হবে দেখে অনেক গ্রাহকই অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে প্রতারক কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়। বছরের পর বছর ধরে কিস্তি দিতে থাকে। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, কিস্তি পরিশোধ এবং নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও তাদের ফ্ল্যাট বা জমি বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের নানা ঝামেলার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় গ্রাহকদেরকে প্রতারক প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে থাকে। ফলে তারা অসহায় হয়ে পড়ে। বুঝতে পারে তারা প্রতারণার ফাঁদে পড়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এক শ্রেণীর আবাসন প্রতিষ্ঠান ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকার জমি দেখিয়ে প্রতারণা করে আসছে। সাধারণভাবে দেখা যায়, একই জমি একাধিকবার একাধিক গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। জমির প্রকৃত মালিক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। অনেক গ্রাহক এসব জমির প্রকৃত মালিক এবং অবস্থা না জেনেই বিভিন্ন প্রতারক প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফারে মুগ্ধ হয়ে বিনিয়োগ শুরু করে। তারা জানে না, ঢাকার আশপাশ তো বটেই ঢাকা থেকে অনেক দূরের জমিও নিষ্কন্টক পাওয়া যায় না। কাজেই জমি বা ফ্ল্যাট বুকিং দেয়ার আগে গ্রাহকদের এ বিষয়টি বুঝে শুনে ভালভাবে খতিয়ে তারপর বুকিং দিতে হবে। তা নাহলে তাদের প্রতারণার শিকার হতে হবে। কেবল সস্তায় জমি পাওয়া যাচ্ছে- এ কথা শুনে কোনোভাবেই জমি কেনা উচিত নয় কিংবা সস্তায় কোথায় জমি পাওয়া যায়, এদিকে মনোযোগ দিলে হবে না। কেনার আগে প্রতিষ্ঠানের সরকারি নিবন্ধন এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি কতটা রয়েছে, তা দেখতে হবে।
আশার বিষয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভুয়া আবাসন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, ভুয়া প্রতিষ্ঠান একটাও থাকবে না। মন্ত্রণালয় থেকে গ্রাহকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে, মন্ত্রণালয় থেকে গ্রাহকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে, সরকারি নিবন্ধিত আবাসন প্রতিষ্ঠান ছাড়া জমি বা প্লট নেয়া ঠিক নয়। আমরাও মনে করি, সরকারি নিবন্ধিত কোনো প্রতিষ্ঠান ছাড়া জমি বা ফ্ল্যাট কেনা কোনোভাবেই উচিত নয়। যে কোনো গ্রাহককে জমি বা ফ্ল্যাট কেনার আগে প্রতিষ্ঠানের সরকারি নিবন্ধন এবং সুনাম দেখে নেয়া জরুরি। কেবল চটকদার বিজ্ঞাপন ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ফাঁদে পড়ে প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের খোঁজ-খবর না নিয়ে এবং সস্তায় জমি বা ফ্ল্যাট কেনার লোভে পড়ে কিনতে যাওয়া নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার শামিল। এ ব্যাপারে গ্রাহকদের সচেতন হতে হবে। তা নাহলে হাজার হাজার প্রতারিত গ্রাহকদের মতো তাদেরও প্রতারিত হতে হবে। আমরা আশা করব, গ্রাহকদের সচেতন করার পাশাপাশি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউক ভুয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এ ব্যাপারে তারা নিজ উদ্যোগে জনগণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন