প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সন্ত্রাস, মাদক বা জঙ্গিবাদ- এসব থেকে মুক্ত থেকে তরুণরা নিজেদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে। তাহলে তারা নিজের ভাগ্য যেমন গড়তে পারবে, তেমনি দেশের ভাগ্যও গড়বে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের এই দেশব্যাপী উন্নয়ন মেলার আয়োজন।
সরকার উন্নয়নটা সমগ্র দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদম গ্রামীণ জনগণও যেন নিজের ভাগ্যটা নিজে গড়তে পারে সেজন্য সরকার একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। এর মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীরও সেখানে ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশব্যাপী ৪র্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনকালে একথা বলেন। ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ শ্লোগানে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাণিজ্য মেলার মাঠে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নতুন প্রজন্মেরই এখন দায়িত্ব বাংলাদেশ এগিয়ে নেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত এবং তারাই দেশকে আগামীতে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজকের তরুণ আগামী দিনে হবে এদেশের কর্ণধার। কাজেই আমাদের সকল আয়োজন হচ্ছে এই তারুণ্যের জন্য। আজকে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন সেই উন্নয়ন সম্পর্কে মানুষকে ওয়াকিবহাল করা এবং এর সুফলটা যেন তারা ভোগ করতে পারে। এরমাধ্যমে নিজের ভাগ্য গড়তে পারে সে বিষয়টা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে এমন একটি দেশ গড়ে তোলা যেখানে কোন গৃহহীন থাকবে না, কেউ না খেয়ে-বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না এবং সকলেই সুন্দরভাবে জীবন যাপনের সুযোগ পাবে।সেই লক্ষ্যে দেশকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নেওয়ার জন্যই আমরা ‘ডেল্টা প্লান-২১০০’ প্রণয়ন করেছি। যাতে করে উন্নয়নটা টেকসই হতে পারে।
তিনি বলেন, ২০২০ সালে আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবো, আর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবো ২০২১ সালে; আর ২০৪১ সালে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে, সেভাবেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই অগ্রযাত্রা যেন ব্যাহত না হয়, এটা যেন অব্যাহত থাকে। তাহলেই ধাপে ধাপে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশাকরি উন্নয়ন মেলার মাধ্যমে দেশের জনগণের জন্য কি উন্নয়ন আমরা করলাম তা জানতে পারবে। এই উন্নয়নের মধ্যদিয়ে নিজের ভাগ্যকে কিভাবে তারা গড়তে পারেন সেই সুযোগটাও তারা পাবেন এবং সেই সুযোগটা তারা গ্রহণ করবেন।
ভিডিও কনফারেন্সের সঙ্গে ৪টি উপজেলা এবং দেশব্যাপী ৫শতাধিক বিভিন্ন বিভাগীয় শহর, জেলা-উপজেলার উন্নয়ন মেলাগুলো এবং ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারসমূহ সংযুক্ত ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের জাতীয় উন্নয়ন মেলায় এসএসসি (মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষার্থীদের জন্য থাকছে ‘অনলাইন ডিজিটাল পাঠ সহায়িকা’। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ‘অনলাইন ডিজিটাল পাঠ সহায়িকা’ উপহার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখলাম-পাসের হার বৃদ্ধি পেলেও সেখানে কয়েকটি বিষয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা একটু পিছিয়ে আছে। পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞান বিষয় সহ বিভিন্ন শ্রেণির জন্য বিভিন্ন বিষয়ে অনলাইন ডিজিটাল পাঠ সহায়িকা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা সবসময় নিজের শ্রম দিয়ে, মেধা দিয়ে এ দেশকে গড়ে তুলতে চাইতেন। তিনি চাইতেন আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। তিনি বলতেন, ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে না, ভিক্ষা করে চলবে না।
মুসলিম দেশগুলোর বিরোধ মীমাংসায় আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাতৃপ্রতীম মুসলিম দেশগুলোর পরস্পরের মধ্যে বিবদমান দ্ব›দ্ব-সংঘাত নিরসনে সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। গতকাল সকালে ইরানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভাইজি দেহনভী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবণে সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বৃত করে বলেন-প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে ওআইসি সদস্য দেশগুলোর বিবদমান সমস্যাগুলোকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা, কক্সবাজারে তাদের পুণর্বাসন প্রসঙ্গ এবং তাদের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সফল প্রত্যাবাসন বিষয়ে তার সরকারের পদক্ষেপ সমূহ তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের জীবনধারণের জন্য উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করতে উপকূলীয় দ্বীপ ভাষানচরে তাদের স্থানান্তরে সরকারের উদ্যোগেরও উল্লেখ করেন।
এর উত্তরে ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ইরানও চায় মিয়ানমারের ওপর চাপ বৃদ্ধি করতে। যাতে করে তাদের নাগরিকদের নেপিদো বাংলাদেশ থেকে ফেরত নিয়ে যায়। ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশও বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্যার্থে তহবিল সংগ্রহ করছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো.নজিবুর রহমান এবং সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন