পৃথিবীতে মানবজাতি যেসব প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে তার মধ্যে কিডনি রোগ অন্যতম। বাংলাদেশে প্রাণঘাতী রোগের তালিকায় কিডনি রোগের অবস্থান চতুর্থ। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ৪০-৮০ লক্ষ লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত এবং প্রতিবছর ৩০-৪০ হাজার লোক এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। নতুন করে ৮-১০ লোক এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। নতুন করে ৮-১০ লক্ষ লোক এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই আমাদের জানা দরকার কিডনি রোগের কারণ বিস্তার প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে করণীয়।
মানবদেহের অতি প্রয়োজনীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে কিডনি অন্যতম। মানবদেহের কোমরের কিছুটা ওপরে দু’পাশে দুটি কিডনি থাকে। পরিণত বয়সে ১টি কিডনি ১১-১৩ সে মি লম্বা, ৫-৬ সে মি চওড়া এবং ৩ সে মি পুরু হয়। একটি কিডনির ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম। তবে বাম কিডনিটি ডান কিডনি অপেক্ষা একটু বড় ও কিছুটা ওপরে থাকে। প্রতিটি কিডনি প্রায় ১২ লক্ষ নেফ্রন দিয়ে তৈরি। নেফ্রন হলো কিডনির কার্যকরী ও গাঠনিক একক। কোনো কারণে এই নেফ্রনগুলো নষ্ট হয়ে গেলে কিডনি দ্রুত অকেজো হয়ে যায়। কিডনি রোগে সাধারণত একসাথে দুটি কিডনি আক্রান্ত হয়।
আমাদের দেহে প্রতিনিয়ত অসংখ্য জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হচ্ছে। এ সকল বিক্রিয়ায় উৎপন্ন দূষিত পদার্থ রক্তে মিশে যায়। আর কিডনি তার ছাঁকনির মাধ্যমে রক্তকে ছেঁকে পরিশোধিত করে এবং দূষিত পদার্থসমূহ (ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, অ্যামোনিয়া, ক্রিয়েটনিন ইত্যাদি) দেহ হতে মূত্রের সাথে বের করে দেয়। এভাবে কিডনি আমাদের দেহকে বিষাক্ত ও ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থের হাত থেকে রক্ষা করে। কিডনি রোগ এমনই মারাত্মক রোগ যা কোনো প্রকার লক্ষণ বা উপসর্গ ছাড়া খুব ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে। তাই একে নীরব ঘাতক বলে অভিহিত করা হয়। কখনো কখনো রোগী কোনো উপসর্গ বুঝে ওঠার পূর্বেই তার কিডনির শতকরা ৫০ ভাগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিডনি রোগ যেহেতু অনেক প্রকার সেহেতু এর লক্ষণসমূহও ভিন্ন ভিন্ন।
কিডনি রোগের প্রধান প্রধান লক্ষণসমূহ হচ্ছে হঠাৎ করে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, মূত্র ত্যাগের পরিমাণ ও সংখ্যার পরিবর্তন বিশেষ করে রাতে বেশি পরিমাণ মূত্র ত্যাগ, প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফেনা হওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত এবং প্রোটিন যাওয়া, চোখের চারপাশে ও পায়ের গোড়ালিতে পানি জমা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা ও অস্বাভাবিক গন্ধ হওয়া, রক্তশূন্যতা বেড়ে যাওয়া, মাথা ব্যথা ও শরীর চুলকানো, বমি বমি ভাব, প্রস্রাবের সাথে পাথর বের হওয়া, হাত, পা মুখ সমস্ত শরীর ফুলে যাওয়া, গ্লোমেরুলার ফিল্টারেশন রেট ৯০ এর কম হওয়া।
কিডনি রোগীর পথ্য : কিডনি রোগে দৈনন্দিন খাদ্য পথ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ খাদ্য পথ্য নিয়ন্ত্রণ করে খেলে কিডনি রোগী অনেক দিন ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে। এসব পথ্যের ভেতর রয়েছে প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাদ্য, লবণ এবং পটাশিয়াম। এছাড়াও জলীয় পদার্থ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব উপাদান দেহে কম বা বেশি দুটোই ক্ষতিকর।
যেসব খাবারে কিডনি ভালো থাকে : প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস (২ লিটার) বিশুদ্ধ পানি পান করা। তবে ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে অধিক পানি পান করা প্রয়োজন।
প্রচুর ফল ও সবজি : দানা বা বীজ জাতীয় খাদ্য খান যেমন ব্রেড, নুডুলস, বাদাম ইত্যাদি। সপ্তাহে অন্তত একটি কচি ডাবের পানি পান করুন। প্রতিদিন অন্তত চারটি থানকুনি পাতা খেতে হবে। শশা, তরমুজ, লাউ, বাঙ্গি, কমলালেবু, লেবু, মাল্টা, ডালিম, বিট, গাজর, আখের রস, বার্লি, পিঁয়াজ, সাজনা ইত্যাদি পরিমাণ মতো খেতে হবে।
কিডনি রোগীর অবশ্য বর্জনীয় খাদ্য সমূহ : চকলেট, চকলেট দুধ, পনির, গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগির মাংস, সস, পিচস, ব্রকোলি, বাদাম, মাশরুম, মিষ্টি কুমড়া, পালংশাক, টমেটো, কলা, খেজুর ও আচার।
গোক্ষুর : গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের প্রসাবের পরিমাণ কমে যায় এবং হাতপায়ে পানি জমে তারা নিয়মিত গোক্ষুর চূর্ণ ৩ গ্রাম মাত্রায় সেবন মূত্রের পরিমাণ ঠিক হয়ে যাবে এবং শরীরে জমে থাকা পানি বা ইউরিক এসিডের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
রক্ত চন্দন : রক্ত চন্দন কিডনি রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ। রক্ত চন্দন ডাই ডাইরুটিক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বন্ধ করে এবং প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
জুনিপার বেরিস : জুনিপার বেরি মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে, কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
পাথরকুচি : গবেষণায় দেখা গেছে, পাথরকুচি পাতার নির্যাস কিডনি পাথরী ধ্বংস করতে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ষ ডা. আলমগীর মতি
হারবাল গবেষক ও চিকিৎসক, চেয়ারম্যান মডার্ণ হারবাল গ্রুপ। ফোন ০১৯১১৩৮৬৬১৭
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন