শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

প্রতি ওয়ার্ডে ২০০জন কর্মীকে ট্রেনিং দেয়া হবে

প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে। দেশে কয়েকটি বড় বড় ভূমিকম্প স্পটও রয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের মধুপুর ভূমিকম্পের উৎপত্তি হলে এবং ঢাকা শহরে মধ্যম মাত্রার কম্পন অনভূত হলে ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। আর এই ভূমিকম্পের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে এক হাজার ১১২ মিলিয়ন ডলার। দ্রæত ধ্বংসাশেষ অপসারণ করতে না পারলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। এজন্য পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সরবরাহ সংস্থাগুলোর সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের নিবিড় যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল সোমবার নগর ভবন মিলনায়তনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় নগর সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধি এবং ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। সভার সভাপতিত্ব করেন ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কার্যক্রম উপস্থাপন করেন ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন এন্ড মেইনটেনেন্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ।
সভাপতির বক্তব্যে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জানান, ডিএসসিসি এলাকার ভূমিকম্পের সচেতনতামূলক কার্যক্রমের এটি প্রথম সভা। প্রতি দুই মাস পর পর সংশ্লিষ্ঠ সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমরা সমন্বয় সভা করবো। বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এই সভার সিদ্ধান্ত মানা বাধ্যতামূলক। সকল সংস্থা এই সিদ্ধান্ত মেনে চলতে বাধ্য থাকবে।
মেয়র আরও জানান, আমরা সর্বসম্মতিক্রমে এই সভা থেকে ভূমিকম্প দুর্যোগ থেকে বাঁচতে মানুষকে সচেতন করার কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো। প্রত্যেক সংস্থা যার যার অবস্থান থেকে এই কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির আগামী সভা অনুষ্ঠিত হবার আগে ডিএসসিসির ৫৭টি ওয়ার্ডে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে তার দফতরে জমা দেয়ার অনুরোধ জানান।
ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটির দায়িত্ব সম্পর্কে বলেন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের কাজ হবে স্বেচ্ছাসেবী সদস্য সংগ্রহ করা। ওয়ার্ড পর্যায়ে ২০০ জনকে ভূমিকম্পের সময় উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের বিষয়ে ট্রেনিং প্রদান করা হবে বলে জানান তিনি। এছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে- রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বিল্ডিংকোর্ড মেনে ভবন নির্মাণ কার্যক্রম নিশ্চিত করবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে চিহ্নিত করে তা অপসারণ করারও দায়িত্ব দেয়া হয় রাজউককে। পর্যায়ক্রমে গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ বিভাগকে দায়িত্ব অর্পণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মেয়র আরও জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের উপর আমাদের কোনো হাত নেই। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেন আমাদের ক্ষয়ক্ষতি কম হয় সে ব্যাপারে তৎপর থাকার আহŸান জানান তিনি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নকৃত ১৭৩ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প অনুমোদন করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন মেয়র। বলেন-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনার কাজ শুরু করেছি। আশাকরি আগামী তিন বছরের মধ্যে ভূমিকম্প দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষতা অর্জন করতে পারবো আমরা।
বুয়েটের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমদ আনসারী বলেন, ভূমিকম্পের দুর্যোগ মোকাবেলার প্রধান প্রস্তুতি হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন। আর এ কাজটি করতে হবে সিটি কর্পোরেশনকে। এছাড়াও তিনি দুর্যোগের সময় ঘটনাস্থল থেকে দূরে থেকে ইলেকট্রনিক্স পদ্ধতিতে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনার সিস্টেম গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। এসময় তিনি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সফলতা এবং ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেন।
রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জি.এম জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া জানান, বড় বা মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলে তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কি হবে সে বিষয়ে আমরা নানা রকম ধারণা পাচ্ছি। আমাদের এখনি এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি আরও জানান, রাজউক এখন বিল্ডিং কোর্ড মেনে ভবন নির্মাণের ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। নতুন করে যেসব ভবন নির্মিত হচ্ছে সেখানে এ ধরনের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এসময় তিনি ডিএসসিসি মেয়রকে সংশোধীত নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত কাজে সহায়তা করার অনুরোধ জানান। বলেন- সংশোধীত নতুন বিধিমালা কার্যকর হলে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে অনেক সহজ হবে। হাউজিং, বিল্ডিং, রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাদেক বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা বাধ্যতামূলক। সভাপতিকে অনুরোধ জানান এই সভা যেন গতানুগতিক সভা না হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এব্যাপারে কার্যকরি ভূমিকা পালন করার আহŸান জানান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশানর (ট্রাফিক) খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, পুলিশ শারীরিক এবং মানসিকভাবে শ্রমিকের কাজ করে থাকে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি পুলিশ বিভাগকে যেভাবে দিক-নির্দেশনা দেবে পুলিশ বিভাগও সেভাবে কাজ করবে। এসময় তিনি সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন- রানা প্লাজা সমন্বয়নীতার একটি বড় উদাহরণ। আমরা সৃষ্টি কর্তার কাছে দোয়া করি এধরনের দুর্যোগ যেন আর ঘটে। তারপরও আমাদেরকে সেসব বিষয় মাথায় রেখে প্রস্ততি নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন