বাংলাদেশ কেমিষ্ট অ্যান্ড ড্রাগিষ্ট সমিতির (বিসিডিএস) নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক অনিয়ম ও দূরভিসন্ধি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এই নির্বাচন বাতিল করে অবিলম্বে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ট্রেড অর্গানাইজেশনের (ডিটিও) কাছে লিখিত আবেদনও করা হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি ব্যবসায়ী ও বণিকদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইকেও লিখিতভাবে অভিহিত করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০১৬-২০১৮ মেয়াদে বাংলাদেশ কেমিষ্ট অ্যান্ড ড্রাগিষ্ট সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনটি ডিটিওর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই র্বিাচনে ১৬০জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। ওই সময় এফবিসিসিআই’র নির্দেশনা ছিল পরবর্তীতে যে নির্বচান অনুষ্ঠিত হবে, সেগুলো অবশ্যই এফবিসিসিআই’র সরাসরি সুপারভিশনে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু চলতি বছর সমিতির একটি মহল নিজস্বার্থ চরিতার্থ করতে তাদের অনুগত নির্বাচন কর্মকর্তাদের দূরভিসন্ধিতে একটি প্যানেলের মাত্র ৪৯ জন নির্বচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পান। এদের মধ্যে ৪৩টি পদে ৪৩ জন নির্বাচিত হবেন। এই নির্বাচনকে ঘিরে সমিতির তহবিল থেকে বাজেট বরাদ্দ হয় ২৭ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সারা দেশে ওষুধের দোকান রয়েছে আড়াই লাখের উপরে। তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী তাদের নিবন্ধীত খুচরা দোকান রয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৭১টি ও পাইকারী লাইসেন্স রয়েছে ১ হাজার ৭৮টি। অথচ সমিতির ভোটার হচ্ছে মাত্র সাড়ে ৯ হাজার। যদিও গত নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল মাত্র ৪ হাজার ৩০০ জন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমিতির একজন সদস্য বলেন, বর্তমান ভোটার সংখ্যা হিসেবে অর্থাৎ ৯৬ শতাংশ ওষুধের দোকানই সমিতির আওতাভ‚ক্ত নয়। অথচ এসব দোকানের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার ওষুধ বাজারজাত হচ্ছে। এসব অনিবন্ধিত দোকান থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে নকল-ভেজাল ওষুধ। নকল-ভেজাল ওষুধ ধরা পড়লে সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, যে দোকান থেকে ভেজাল ওষুধ উদ্ধার হয়েছে সেটি সমিতির আওতাভুক্ত নয়। অথচ এসব দোকান সমিতির আওতায়র কোন চেষ্টাও করা হয় না।
বাণ্যিজ্য মন্ত্রনালয় ও এফবিসিসিআই-এ লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ট্রেড অর্গানাইজেশনের নির্বাচন সরাসরি এফবিসিসিআইয়ের তত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু তাদেরকে পাশ কাটিয়ে নিজস্ব লোকবল দিয়ে কেমস্টি এবং ড্রাগিষ্ট সমিতি নিজেদের মতো করে নির্বাচনের আয়োজন করে। নির্বাচন বোর্ডের সভাপতি জিয়াউল হক ভুলু, যিনি রাজশাহী বিভাগের অনির্বাচিত সভাপতি। সফিউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা জেলা শাখার অবৈতনিক সম্পাদক, যা বর্তমান কমিটির মনোনীত। মো. জাহাঙ্গীর বর্তমান নির্বাচিত সহ-সভাপতি মোজাম্মেল হকের জামাতা। আপীল বোর্ডের সদস্য তুহিন আক্তার শিউলী বর্তমান নির্বাচিত আনোয়ার হোনেসন মৃধ্যা বেলুর ব্যবসায়ী অংশীদার।
নির্বাচনে অংশগ্রহনে আগ্রহিদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য সুকৌশলে মাত্র একদিন সময় দেয়া হয়। যা ছিল ঈদ-উল-ফিতরের পরের দিন। এতে ছুটির দিনে দেশের অনেক ভোটার নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এ বছর হঠাৎ করে নিয়ম পরিবর্তন করে বলা হয়, পরপর তিন বছরের জন্য সমিতির সদস্য হতে হবে। নির্বাচনে অংশ নিতে হলে স্ব স্ব শাখা কমিটির সভাপতির মাধ্যমে প্রত্যায়নপত্র নিতে হবে। শাখা কমিটির সভাপতিরা বর্তমান কমিটির আজ্ঞাবহ হওয়ায় অনেকেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারেনি। অনেকে কিনলেও তা জমা দিতে পারেনি। বিষয়টি দুদকের মাধ্যমে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ডিটিওর কাছে আবেদন করেন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন রনি।
এদিকে বিসিডিএস-এর নির্বাচনে এফবিসিসিআইয়ের আব্যিটেশন ট্রাইব্যুনাল প্রদত্ত আদেশ মোতাবেক নির্বাচন বোর্ড ও নির্বাচন আপীল বোড গঠন করে নির্বাচন করার নির্দেশ প্রদান করে ডিটিও-র কাছে চিঠি দেয় এফবিসিসিআই। এফবিসিসিআইয়ের সচিব আফসারুল আরিফিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বিসিডিএস বর্তমান পরিচালক জাকির হোসেন রনির অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, বিসিডিএস নির্বাচনে এফবিসিসিআইয়ের আর্বিট্রেশন ট্রাইব্যুনাল লঙ্ঘন করা হয়েছে। নিজেদের পছন্দ মতো ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন বোর্ড ও আপীল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। চিঠিতে আরো বলা হয়, বিসিডিএস-এর নির্বাচন বোর্ড থেকে তফসিল বাতিল করে এফবিসিসিআইয়ের আর্বিট্রেশন ট্রাইব্যুনালের প্রদত্ত আদেশ মোতাবেক এফবিসিসিআইয়ের তত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
নির্বচানে অংশগ্রহণকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন রনি বলেন, প্রায় ২৭ বছর পর ২০১৬ সালে যখন নির্বছান অনুষ্ঠিত হয়, তখন এফবিসিসিআই নির্বাচনী বিধিমালা সংশোধন করে দেয়। সেই বিধিমোতবেক নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য বিসয় সমূহ এফবিসিসিআই’র প্রত্যাক্ষ সুপার ভিশনে হওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমান কমিটি এসব আমলে না নিয়েই নিজেদের মতো করে নির্বাচনের আয়োজন করে। তিনি বলেন, একটি গোষ্ঠি ৩০ বছর বিনা নির্বাচনে সমিতি নিজেদের হস্তগত রেখেছে। তারাই এখনো সমিতি আয়ত্বে আনতে এসব ষড়যন্ত্র করছে। তিনি এ নির্বচান বাতিল করে নতুন করে নির্বাচন গ্রহনের দাবি জানান।
বিসিডিএস-এর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল হাই বলেন, একটি প্রহসনের নির্বাচন করার কারনে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছেন। নিয়মানুযায়ী দেশের সব বিভাগ থেকে একজন করে ভাইস প্রেসিডেন্ট রাখার কথা আর ঢাকা থেকে দুজন। কিন্তু এবারে নির্বচনে ঢাকা থেকে কোন ভাইস প্রেসিডেন্ট রাখা হয় নি। নির্বচানে মাত্র একটি প্যানেল অংশ গ্রহনে করে। অন্য কাউকে অংশগ্রহনের সুযোগ পর্যন্ত দেয়া হয়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন