রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পাটজাত পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, ধান, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে ফের প্লাস্টিক বস্তার ব্যবহার লক্ষ করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। তাই পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইন সঠিকভাবে পরিপালিত হচ্ছে না বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়। এদিকে উল্লিখিত ছটি পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে আবার ঢাকাসহ সারা দেশে বিশেষ অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। পর্যালোচনামূলক বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, কারাদ-, অর্থদ-, ব্যাংক ঋণ সুবিধা বন্ধ, লাইসেন্স বাতিল, আমদানি নিবন্ধন সনদ ও রফতানি নিবন্ধন সনদ বাতিলের বিধান রেখে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন বাস্তবায়নে আবারো বিশেষ অভিযান চালু হবে। তিনি আরো জানিয়েছেন, সকল বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ বাস্তবায়নে মনিটরিংয়ের জন্য আবারো নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্য বিশেষ করে ব্যাগের ব্যবহার নিশ্চিত করা যে বর্তমান সময়ে কতটা জরুরি তা নতুন করে বলার কিছু নেই। পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে নদ-নদী, ড্রেন-নর্দমা সবকিছুইতেই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। স্তূপীকৃত পলিথিনের কারণে বুড়িগঙ্গা পরিশোধন করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছে সংশ্লিষ্টরা। শুধু বুড়িগঙ্গাই নয়, দেশের যেকোনো নদ-নদী-খালের অবস্থাও অনুরূপ। খোদ রাজধানী ঢাকা যে একটু বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় তারও প্রধান কারণ পলিথিন। পলিথিন যেহেতু মাটিতে মেশে না সে কারণে সূর্যালোক, পানি ও অন্যান্য উপাদান প্রবেশ করতে না পারায় মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। এর বিষাক্ততা কৃষি এবং পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকারক। পলিথিনের এই ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে দুনিয়াব্যাপী পরিবেশবাদীরা পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পক্ষে অভিমত দিয়ে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশে পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও প্রদর্শনী ইতোমধ্যেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পরিবেশবিদ, বিজ্ঞানী ও বিশিষ্টজনেরাও দীর্ঘদিন থেকে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের পক্ষে অভিমত দিয়ে আসছেন। বাস্তবত দেখা যাচ্ছে, এতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কৃষিপণ্যের মোড়কে পাটের ব্যাগের ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট আইন থাকা সত্ত্বেও কীভাবে পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে, তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। আইন থাকা সত্ত্বেও আইনের প্রয়োগ কেন হচ্ছে না? এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা সত্যিই দুখঃজনক। যারা আইন প্রণয়ন করেন তারাই যদি আইন ভঙ্গ করেন, তবে অন্যরা মানবে কেন? পাটজাত পণ্যের ব্যবহারকে কেবল একটি সাধারণ নির্দেশনা মনে করার কোনো কারণ নেই। পাটের সাথে আমাদের দেশের কৃষকের ভাগ্যও জড়িত। পাট শিল্প সবসময়ই সম্ভাবনাময়। পাটের ব্যবহার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই পাটের টিকে থাকার বিষয়টি নির্ভরশীল। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, এদেশে পলিথিনের উৎপাদনের অনুমোদন দেয়ার মধ্য দিয়েই এক ধরনের পরিবেশবিরোধী অবস্থান নেয়া হয়েছিল। শুরু থেকেই এটি বন্ধ করে দেয়া জরুরি ছিল। সর্বস্তরে ব্যাপক আলোচনা হওয়ার প্রেক্ষিতে পলিথিন নিষিদ্ধকরণের বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তার কোনো বাস্তবায়নও লক্ষ করা যাচ্ছে না। শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল, পলিথিন নিষিদ্ধ করার আইন কার্যকর করতে কোনো কোনো মহলে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। ফলে আইনগতভাবে পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও যত্রতত্র এর ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রী বিশেষ অভিযানের যে কথা বলেছেন, পলিথিন উৎপাদনে তার বিকল্প নেই। পর্যালোচনা বৈঠকেই বলা হয়েছে, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন অনুযায়ী ছয়টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার প্রায় শতভাগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর যে বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই, তা পলিথিনের অবাধ ব্যবহার থেকেই বোঝা যাচ্ছে। সর্ষের ভেতরেই ভূত লুকিয়ে আছে। এ ভূত তাড়াতে না পারলে পলিথিনের ব্যবহারও কমানো যাবে না। আমরা মনে করি, অবিলম্বে পলিথিনের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধকরণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। যারাই পলিথিন উৎপাদন কিংবা বাজারজাত করবে, তাদের আইনানুগ কঠোর শাস্তি দিতে হবে। এর পাশাপাশি পাটজাত ব্যাগ ও এর ব্যবহারে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন