বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের শ্রমিকদের টানা ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতিতে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ কর্মজীবী মানুষ। সোমবার (২৯ অক্টোবর) ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও গণপরিবহন না পেয়ে বিপাকে আছেন তারা। ধর্মঘটের কারণে রিকশা অথবা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বা অন্যান্য পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে তিন থেকে চার গুণ। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবে সড়কের ভিড়ে এসব যানবাহনেও উঠতে পারছেন না নারী ও বৃদ্ধরা। সোমবার সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে সড়কে গণপরিবহন না দেখা গেলেও সরকারের মালিকানাধীন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) কিছু সংখ্যক বাস দেখা গেছে। তবে সেগুলো ডিপো থেকে সড়কে নামার সঙ্গে সঙ্গেই ভর্তি হয়ে যায়। ফলে মাঝপথে এসব বাসে ওঠার কোনও সুযোগ পাচ্ছে না যাত্রীরা।
জানা গেছে- শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে ব্যক্তিগত গাড়ি, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, রিকশা ও লেগুনার ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আদায় করছে তারা। গণপরিবহন না থাকায় সড়কজুড়ে এসব পরিবহনের চাপে রীতিমতো যানজট লেগে রয়েছে। সকাল থেকে নগরীর শাহবাগ, গুলিস্তান, ফার্মগেট, রামপুরা, বাড্ডা, মগবাজার, খিলগাঁও, মহাখালী ও কুড়িল এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সকালে রামপুরা বাজার থেকে কোনও পরিবহন না পেয়ে হেঁটেই গুলিস্তানে পৌঁছেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু কোনও কিছুই পাইনি। পরে হাঁটা শুরু ধরি। আধা ঘণ্টা হেটে গুলিস্তানে চলে এসেছি।’
তবে এ অবস্থায় সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নারী ও বৃদ্ধরা। গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকা শত শত মানুষের ভিড়ে তারা কোনও পরিবহনেই উঠতে পারেন না।
এদিকে ধর্মঘট চলাকালে রাজধানী ঢাকা থেকে কোথাও কোনও দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। নগরীর বাস টার্মিনালগুলোতে গিয়েও তারা কোনও বাস পাচ্ছেন না। ফলে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছেন।
ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের সৌখিন পরিবহন বাসের চালক রবিন জানান, পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতি এখনও চলছে। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে কোনও পরিবহন বের হয়নি।
গণপরিবহন না থাকায় ভোগান্তিতে যাত্রীরা
রবিবার রাতে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে সরোজমিনে দেখা যায়, টার্মিনালের ভেতরে ও সড়কের পাশে সারিবদ্ধভাবে বাসগুলো রাখা হয়েছে। তবে টার্মিনালের সামনে এই সড়কে গণপরিবহন ছাড়া প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, ৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ সাত দফা দাবিতে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘট শুরু হয়েছিল। ওই সময় ৯ অক্টোবর, বিকাল ৪টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছিলেন ট্রাক পরিবহন শ্রমিকরা। কিন্তু শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) কেরানীগঞ্জে ট্রাকচালক-শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক নিহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবার একই দাবি নিয়ে ফুঁসে উঠেছে পরিবহন শ্রমিকরা। এরপরই এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন