বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানি পান করতে পারছে না বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ। পানিবাহিত নানা রোগে অসংখ্য মানুষ ভুগছে। পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন পরিস্থিতি যে নাজুক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ৪০ শতাংশ মানুষ এখনও সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত। বিশ্ব ব্যাংক বিগত ১১ অক্টোবর এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এ অবস্থা তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষ অনিরাপদ উৎসের পানি পান করছে। বাংলাদেশে ৪১ শতাংশ পানির নিরাপদ উৎসে রয়েছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। ১৩ শতাংশ পানিতে রয়েছে আর্সেনিক, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ২৮ শতাংশ মানুষের সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার সুযোগ রয়েছে। ৫ শতাংশের কম উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা পায় শহরের বস্তির বাসিন্দারা। ১০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে টয়লেট রয়েছে মাত্র ১টি। ৩৫ শতাংশ শিশু বয়সের তুলনায় উচ্চতায় কম।
নিরাপদ পানি পাওয়া সকলের নাগরিক অধিকার। কিন্তু দেশের মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে না। তাই রোগ ব্যাধি কোটি কোটি মানুষকে কাবু করে ফেলেছে। নানা রোগে আক্রান্তের কারণে মানুষের আয়ের একটি বড় অংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করতে হচ্ছে। দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য জরুরি কিছু পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। যেমন:
১) বাংলাদেশ পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। বিশেষ করে শহরগুলোতে পয়ঃনিষ্কাশন দুর্বলতার কারণে নিরাপদ পানি মানুষ পেতে কষ্ট হচ্ছে। দূষিত বর্জ্য থেকে পানি দূষিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। দীর্ঘমেয়াদী ও স্থায়ী পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা আমাদের জরুরি। এই জন্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে, দীর্ঘমেয়াদী, স্থায়ী ও উন্নতমানের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী, স্থায়ী ব্যবস্থা না হলে নিরাপদ পানি পাওয়ার সমস্যা কাটিয়ে উঠা যাবে না। বিশেষ করে বর্জ্যকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে উৎপাদনে ব্যবহার করতে হবে। উন্নত দেশের উদাহরণ অনুসরণ করে বর্জ্য ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধানে যেতে হবে।
২) দেশের নৌ, বাস টার্মিনাল, রেল এ শৌচাগার অত্যন্ত দুর্বল। এই সকল স্থানে যাত্রীরা শৌচাগার ব্যবহার করতে পারেন না। নিরাপদ পানি পানের ব্যবস্থাও এই সকল স্থানে যাত্রীদের জন্য বেশ অপ্রতুল। রেল, বাস টার্মিনাল, নৌ বন্দর এলাকায় নিরাপদ পানি ও শৌচাগার তৈরি করে যাত্রীদের সেবা দেয়া তেমন কঠিন কাজ নয়। সরকারের উদ্যোগ, কার্যকর পদক্ষেপে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে। সড়ক পথেও নিরাপদ পানি ও শৌচাগার ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। উন্নত দেশের উদাহরণ এই ক্ষেত্রে অনুসরণ করা যেতে পারে।
৩) নিরাপদ পানি ও উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিগত কয়েক বছর বাজেট বেশ কম। এই ক্ষেত্রে বাজেট কয়েক গুণ বৃদ্ধি করা দরকার। নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেতে থাকবে। দেশের একটি বিরাট অংশের মানুষের আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করতে হচ্ছে। এই আর্সেনিক একটি ভয়াবহ বিষয়। জাতিকে এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে হবে।
৪) দরিদ্র মানুষের ক্ষেত্রে নিরাপদ পানি সমস্যা সবচেয়ে বেশি। শহরগুলোতে বস্তিবাসীদের নিরাপদ পানির অভাব বেশি। বস্তি অঞ্চলে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও খারাপ। তাই নানা রোগ ব্যাধিতে বস্তিবাসী মানুষ দিশেহারা। অর্থের অভাবে বস্তিবাসী মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত। শহরের চাকচিক্যময় জীবনের মাঝে বস্তি জীবনের এই করুণ চিত্র খুবই বেমানান। বাজেটে এই সকল দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য সেবা ও নিরাপদ পানির জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় দেখা যাচ্ছে না।
৫) দেশের স্কুল-কলেজ, মাদ্ররাসাসমূহে নিরাপদ পানি ও শৌচাগার সমস্যা সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ ছাত্রছাত্রীর জন্য মাত্র ১টি টয়লেট। এই অবস্থার সমাধান সরকারকে করতে হবে। শিক্ষা খাতে বাজেট এই ক্ষেত্রে নাই বললে চলে। বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করে প্রতি ৫০ জনে ১টি টয়লেটের ব্যবস্থা করা দরকার। পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থই বড় কথা। সরকারকে অর্থ জোগান দিতে হবে। তবেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।
লেখক: সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমইএ, বিজিএমইএ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন