বিষয় : পদার্থ বিজ্ঞান
মো. হারুন-অর রশিদ
প্রভাষক
ডগাইর দারুচ্ছুন্নাত ফাজিল মাদরাসা
অধ্যায় : ভৌত বিজ্ঞানের বিকাশ
রয়েল একাডেমি প্রতিষ্ঠার ফলে ইংল্যান্ডের লোকেরা বিজ্ঞানের দিকে ঝুঁকে পড়ে। গ্যালিলিও এবং নিউটনের মতো প্রথিতযশা বিজ্ঞানীদের ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে তারা বিভিন্ন কারিগরি উন্নয়ন ও শিল্প কারখানায় ব্যবহার উপযোগী অনেক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেন। এসব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার উৎপাদনের কলাকৌশলকে এবং কারিগরি জ্ঞানকে উন্নত করে। ফলে সৃষ্টি হয় শিল্প বিপ্লব। এই শিল্প বিপ্লব ভৌত বিজ্ঞানের বিকাশে এক যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে।
(ক) কত সালে রয়েল একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়?
(খ) ত্রয়োদশ শতাব্দীর পূর্বকালকে বিজ্ঞানের বন্ধ্যাকাল বলা হয় কেন?
(গ) আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি উদ্ভবের ক্ষেত্রে উদ্দীপকে উল্লিখিত বিজ্ঞানীদের অবদান উল্লেখ কর।
(ঘ) ভৌত বিজ্ঞানের বিকাশ ও উল্লিখিত বিপ্লব সম্বন্ধে আলোচনা কর।
(ক) উত্তর : ১৯৬০ সালে ইংল্যান্ডে রয়েল একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়।
(খ) উত্তর : আর্কিমিডিসের সময়কাল পর্যন্ত বিজ্ঞান ছিল তার ঊষালগ্নে। এ সময়ে বিভিন্ন আবিষ্কার বিজ্ঞানকে অগ্রগতি দেয়। কিন্তু ২১২ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে আর্কিমিডিসের মৃত্যুর পর কয়েক শতাব্দীকাল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার চলে মন্থরগতিতে। প্রকৃতপক্ষে ত্রয়োদশ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত উইরোপে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসার পুনর্জীবন ঘটেনি। এ জন্য ত্রয়োদশ শতাব্দীর পূর্বকালকে বিজ্ঞানের বন্ধ্যাকাল বলা হয়।
(গ) উত্তর : আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রথম সূচনা ঘটে ইতালির বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর অবদানের ভিতর দিয়ে। তিনি প্রথম দেখান যে, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ এবং সুশৃঙ্খলভাবে ভৌত রাশির সংজ্ঞার্থ ও এদের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ বৈজ্ঞানিক কর্মের মূল ভিত্তি। তিনি এরিস্টটলের ‘কেন’ প্রশ্নের পরিবর্তে ‘কেমন করে’ এই প্রশ্নের প্রবর্তন করেন। গ্যালিলিওর উদ্ভাবিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পূর্ণতর রূপ প্রদান করেন নিউটন। গাণিতিক তত্ত্ব নির্মাণ ও পরীক্ষার মাধ্যমে সে তত্ত্বের সত্যতা যাচাইয়ের বৈজ্ঞানিক যে ধারা, তা প্রতিষ্ঠিত হয় নিউটনের বিস্ময়কর প্রতিভার দ্বারা। গ্যালিলিও সরণ, গতি, ত্বরণ, সময় ইত্যাদির সংজ্ঞার্থ ও এদের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করেন। ফলে তিনি বস্তুর পতনের নিয়ম আবিষ্কার ও গতিবিদ্যার ভিত্তি স্থাপন করেন। নিউটন আবিষ্কার করেন বলবিদ্যা ও বলবিদ্যার বিখ্যাত তিনটি সূত্র। আলোক বিদ্যায়ও তার অবদান রয়েছে। গণিতের নতুন শাখা ক্যালকুলাস তার আবিষ্কার।
(ঘ) উত্তর : অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ হতে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত ব্রিটেনে শিল্প ক্ষেত্রে বহু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সংঘটিত হয়। এই অপূর্ব পরিবর্তনকে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব নামে অভিহিত করা হয়। এ বিপ্লবে শিল্প উৎপাদনের কাঠামো, কলাকৌশল ও উৎপাদন পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। কারিগরি ক্ষেত্রে নাটকীয় উন্নতি শিল্প বিপ্লবের অন্যতম কারণ।
শিল্প বিপ্লবের আগ থেকেই ইংল্যান্ড জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ইউরোপে নেতৃত্বের আসনে আসীন ছিল। ১৬৬০ সালে রয়েল একাডেমি প্রতিষ্ঠার ফলে সে দেশের লোকের মধ্যে বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক মানসিকতার জন্ম হয়। নিউটনের মতো বিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ বিষয়ের সাহায্যে বিভিন্ন কারিগরি উন্নয়ন ও যন্ত্রপাতির আবিষ্কার ঘটে। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার উৎপাদনের কলাকৌশলকে উন্নত ও কারিগরি জ্ঞানকে বিকশিত করে। জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন শিল্প বিপ্লবের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যানবাহনে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের সংযুক্তি যাতায়াত ব্যবস্থায় অকল্পনীয় গতিসঞ্চার করে। ফলে মালামাল সর্বত্র দ্রুত বণ্টন সম্ভব হওয়ায় জিনিসপত্রের চাহিদা ও বিক্রি বেড়ে যায় অনেক গুণ। চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য শিল্পোদ্যোক্তাদের পৃষ্ঠপোষকতার নতুন নতুন আবিষ্কারও ত্বরান্বিত হয়। এ সময়ে ধাতু গলানোর চুল্লি আবিষ্কার হওয়ায় লোহা ও ইস্পাত শিল্পের অভাবনীয় অগ্রগতি সাধিত হয়। তদুপরি বস্ত্রশিল্পে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কারে কয়লা শিল্পের প্রসেসিং ইত্যাদি শিল্প বিপ্লবকে উৎসাহিত ও অগ্রগামী করে তোলে। যন্ত্রপাতি ও কৌশলগত আবিষ্কারের ফলে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পাওয়ায় লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এই লাভ পুনঃ বিনিয়োগ করে ইংল্যান্ডের পক্ষে দ্রুত শিল্পায়ন করা সম্ভব হয়। শিল্পোন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য শিল্পপতিরা বিজ্ঞান সাধনার পিছনেও বিনিয়োগে উৎসাহী হন, ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ ও গতি লাভ করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন