শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা। অনেকেরই স্বপ্ন এই মহৎ পেশার সাথে যুক্ত হওয়া। নারী চাকরি প্রার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এই পেশায় যুক্ত হতে পারে বলে তাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে স্কুল ও কলেজের শিক্ষক হওয়া। অন্যান্য পেশার মতোই এই পেশাতে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। আর সারা দেশে আছে প্রায় ১৯ হাজার বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সাড়ে তিন হাজার কলেজ ও সাড়ে ৯ হাজার মাদ্রাসা। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এখন থেকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করা লাগবে না। অনলাইনে আবেদন করতে হবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বরাবর। আবেদনকারীদের মধ্য থেকে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার মেধাতালিকারভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। আগামী ৬ই মে অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা। তাই স্বপ্ন যাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষকতা করার বাকি সময়টুকু কাজে লাগিয়ে পৌঁছে যেতে পারেন কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে। ত্রয়োদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে জানাচ্ছেন তারিন তাসমী-
পরীক্ষা পদ্ধতি
১২তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা থেকেই পাল্টে গেছে পরীক্ষার ধরণ। বিসিএস পরীক্ষার মতো হচ্ছে নিবন্ধন পরীক্ষা। প্রথমে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। পরীক্ষা হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে, সময় এক ঘণ্টা। বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান থেকে ২৫টি করে প্রশ্ন থাকবে প্রিলিমিনারিতে। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য বরাদ্দ ১ নম্বর, প্রত্যেক ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে ০.৫০ নম্বর। পাস করতে হলে কমপক্ষে ৪০ নম্বর পেতে হবে। প্রার্থীর ঐচ্ছিক বিষয়ে ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। সময় ৩ ঘণ্টা। লিখিত পরীক্ষায়ও পাস নম্বর ৪০। উত্তীর্ণ হলে মিলবে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ। প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস পাওয়া যাবে ওয়েবসাইটে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত সময় অনুসারে, স্কুলপর্যায়ের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ৬ মে ও কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষা নেয়া হবে ১৩ মে। উভয় পরীক্ষার সময় সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত। স্কুল ও স্কুল-২ পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষা হবে ১২ আগস্ট এবং কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষা হবে ১৩ আগস্ট। লিখিত পরীক্ষার সময় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
নম্বরের ভিত্তিতে
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত প্রার্থীদের এসএমএসের মাধ্যমে সময় জানিয়ে দেয়া হবে। নির্ধারিত তারিখে সঙ্গে আনতে হবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে তৈরি করা হবে উপজেলা, জেলা ও জাতীয় মেধাতালিকা।
বাংলা
স্কুল ও কলেজ উভয় পর্যায়েই বাংলা ব্যাকরণ অংশে ভাষারীতি ও বিরাম চিহ্নের ব্যবহার, কারক বিভক্তি, সমাস, প্রত্যয়, সন্ধিবিচ্ছেদ, ভুল সংশোধন বা শুদ্ধকরণ ও লিঙ্গ পরিবর্তন থেকে প্রশ্ন আসে। বাগধারা ও বাগবিধি, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, যথার্থ অনুবাদ ও বাক্য সংকোচন থেকেও প্রশ্ন থাকবে। ব্যাকরণের প্রায় প্রতিটি অংশ থেকে এক থেকে দুটি করে প্রশ্ন আসে। প্রশ্ন আসে বাংলা সাহিত্য থেকে। স্কুল পর্যায়ের জন্য নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক, বোর্ড প্রণীত ব্যাকরণ ও বাংলা প্রথম পত্র বইটি ভালোভাবে পড়তে হবে। কলেজ পর্যায়ের জন্য নবম-দশমের সঙ্গে দেখতে হবে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড বই। প্রথম পত্র বইয়ের প্রতিটি গদ্য ও পদ্যের লেখক পরিচিতির অংশটি ভালোভাবে পড়তে হবে।
গণিত
পাটিগণিতে ঐকিক নিয়ম, লাভ-ক্ষতি, শতকরা, সুদকষা, গড়, লসাগু, গসাগু, অনুপাত-সমানুপাত, বীজগণিতে মূলদ ও অমূলদ সংখ্যা, ফাংশন, উত্পাদক নির্ণয়, বর্গ ও ঘন, সূচক ও লগারিদমের সূত্রের প্রয়োগ, জ্যামিতির ক্ষেত্রে রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, ক্ষেত্রফল ও বৃত্ত, পরিমিতি ও ত্রিকোণমিতি থেকে প্রশ্ন আসে। বিগত বছরের প্রশ্ন বিশেষণ করে দেখা গেছে, পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতির সাধারণ ধারণা, বিভিন্ন সূত্র, নিয়মাবলি ও এর প্রয়োগ থেকে প্রশ্ন করা হয়। বোর্ড প্রণীত অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির গণিত বইয়ের প্রতিটি নিয়মের অঙ্ক সমাধান করলে পরীক্ষায় ভালো করা যাবে। কলেজ পর্যায়ের জন্য দেখতে হবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বই। উত্তরের ক্ষেত্রে এককের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ইংরেজি
বিগত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মো. আবদুল কাদির জানান, ইংরেজির সব প্রশ্নই থাকবে গ্রামারের ব্যবহার থেকে। গ্রামারে দুর্বল হলে কখনোই এ অংশে ভালো করা সম্ভব নয়। চধৎঃং ড়ভ ংঢ়ববপয, জরমযঃ ভড়ৎসং ড়ভ াবৎন, ঋরষষ রহ ঃযব নষধহশং রিঃয ধঢ়ঢ়ৎড়ঢ়ৎরধঃব ড়িৎফ ড়ৎ ধঢ়ঢ়ৎড়ঢ়ৎরধঃব ঢ়ৎবঢ়ড়ংরঃরড়হ, ঈড়সঢ়ষবঃরহম ংবহঃবহপবং, ঠড়রপব, ঘধৎৎধঃরড়হ, ঝুহড়হুসং, অহঃড়হুসং, চযৎধংবং ধহফ ওফরড়সং, ঞৎধহংষধঃরড়হ ভৎড়স ইবহমধষর ঃড় ঊহমষরংয, টংবং ড়ভ ধৎঃরপষব থেকে প্রশ্ন থাকবে স্কুল ও কলেজ উভয় পর্যায়ের প্রশ্নেই। পাশাপাশি কলেজের জন্য ওফবহঃরভু ধঢ়ঢ়ৎড়ঢ়ৎরধঃব ঃরঃষব ভৎড়স ংঃড়ৎু ড়ৎ ধৎঃরপষব, ঊৎৎড়ৎং রহ পড়সঢ়ড়ংরঃরড়হ-এর প্রস্তুতি নিতে হবে। গ্রামার বই থেকে ঊীধসঢ়ষব গুলো বারবার চর্চা করলে কাজে আসবে। বিগত বছরগুলোর নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্ন ও বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ইংরেজি প্রশ্ন সমাধান করলেও বেশ কাজে দেবে।
সাধারণ জ্ঞান
সাধারণ জ্ঞান অংশে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পরিবেশ, রোগব্যাধি ও চিকিৎসাবিজ্ঞান থেকে প্রশ্ন আসে। বাংলাদেশ অংশে বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু, ইতিহাস ও সভ্যতা, সংস্কৃতি, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা, অর্থনীতি, বিভিন্ন সম্পদ থেকে প্রশ্ন থাকে। আন্তর্জাতিক অংশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক সংস্থা, বিভিন্ন দেশ পরিচিতি, মুদ্রা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ, আন্তর্জাতিক দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা, খেলাধুলা থেকে প্রশ্ন থাকে। প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, রোগব্যাধি, চিকিৎসা-স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন আসতে পারে এবং সাম্প্রতিক বিষয়ের প্রতি একটু বেশি নজর দিতে হবে। যেমন বিশ্বকাপ ক্রিকেট, পাকিস্তান দলের বাংলাদেশ সফর, এ বছরের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রভৃতি।
প্রিলিমিনারিতে টেকার পর
প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে হবে ঢাকা জিপিও বক্স নম্বর-১০৩, ঢাকা-১০০০ ঠিকানায়। লাগবে সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, স্নাতক (পাস বা সম্মান) পর্যায়ের নম্বরপত্র, নাগরিকত্ব সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের প্রশিক্ষণ সনদ, সহকারী শিক্ষক পদে আবেদনকারীদের অনলাইনে আবেদনের সময় উল্লিখিত ঐচ্ছিক বিষয়ের স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে স্নাতক পর্যায়ের প্রবেশপত্র। খামের ওপর ‘ত্রয়োদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার আবেদনপত্র’ লিখতে হবে। যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্য প্রার্থীরা অংশ নিতে পারবেন লিখিত পরীক্ষায়।
লিখিত পরীক্ষা
শুরুতেই দেখে নিতে হবে সিলেবাস। বিগত বছরের প্রশ্ন দেখলে প্রশ্নের ধরণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। একটি সাজেশন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এমনকি প্রয়োজনে স্নাতক পর্যায়ের বই থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। বেশি বেশি লেখার চর্চা করতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি প্রশ্নেরই বিকল্প প্রশ্ন থাকে, ফলে একটি না পারলেও অপরটির উত্তর করা যাবে।
নিবন্ধন পরীক্ষায় স্কুল ও কলেজ উভয় পর্যায়ে ভালো করার জন্য বোর্ড বই খুব গুরুত্বপূর্ণ। পড়তে হবে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বই। কলেজ পর্যায়ের জন্য একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড বইয়েও দখল থাকতে হবে। সাধারণ জ্ঞানের জন্য আজকের বিশ্ব, নতুন বিশ্ব, কারেন্ট অ্যাফেয়াসের মতো তথ্যভিত্তিক মাসিক বেশ কাজে দেবে। লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতিমূলক গাইড বইও পাওয়া যায় বাজারে।
যোগাযোগ
প্রবেশপত্র ডাউনলোড ও দরকারি তথ্য জানার জন্য যেতে হবে এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে (হঃৎপধ.ঃবষবঃধষশ.পড়স.নফ)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন