এক বছরের অবুঝ শিশু, স্ত্রী-সন্তান বাবা-মা এবং মোমিন নিজেও বাঁচতে পারলো না আগুনের ভয়াবহতা থেকে। একই পরিবারের ৮ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে আগুনে পুড়ে। বুধবার রাতে জয়পুরহাট শহরের আরামনগরে এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে ঘটনাস্থলই ৩ জন এবং ঢাকায় যাবার পথে আরো ৫ জনের মৃত্যু হয়।
ঘটনাস্থলেই নিহতরা হলেন, মোমিন (৩৭), তার মা মোমেনা বেগম (৬৫) এবং মোমিনের মেয়ে মুনিরা আক্তার বৃষ্টি (১৫)। ঢাকা নেওয়ার পথে মারা গেছেন মোমিনের স্ত্রী পরিনা বেগম (৩০) তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে হাসি (১৩) ও খুশী আক্তার (১৩) এবং নূর হোসেন (এক বছর)। সবশেষে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় মারা যান মোমিনের বাবা দুলাল হোসেন (৭৫)।
হাসি ও খুশী জমজ বোন। তারা শহরের কালেকটরেট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। বৃষ্টি সদর থানা উচ্চ বিদ্যালয়ের জেএসসি পরীক্ষার্থী। বাড়িতে রাইস কুকার বিস্ফোরণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস বিভাগ। পরে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে এ আগুন ছড়িয়ে গেছে বলে মনে করছে তারা। বাড়ীর একমাত্র উপার্জনক্ষম মোমিন ছিলো সাধারণ মুরগী ব্যবসায়ী।
প্রত্যেক্ষদর্শী ও প্রতিবেশী জানান, সন্ধ্যার পর থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় আতশবাজি-পটকাবাজি শব্দে আগুন লাগা ঘটনাকে অনেকেই আমলে নেইনি তারা এটাকে পটকাবাজি মনে করে। পরে আগুন দাউ দাউ জ্বলে উঠলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে বাড়ীসহ উল্লেখিত ৮ জন মানুষ পুড়ে ভষ্মিভূত হয়। এদিকে গোটা বাড়ীটি পুড়ে ছাই হলেও আগুনের মধ্যে থেকে ২টি পবিত্র কোরআন শরীফ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
জয়পুরহাট ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাত ৯টা ৪০ মিনিটে আরাম নগরে আব্দুল মোমিন এর বাড়িতে আগুন লাগার খবর পাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে একই বাড়ীর ৪টি টিনের ছাউনি ঘরে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রনে এনে নিহত, আহতদের উদ্ধার করি আমরা। নিহত এবং আহতরা সবাই বিস্ফোরনের শব্দ শোনার পর ঘরের খাটের নীচে এবং ঘরের কোনে লুকিয়ে পড়ে। সেই অবস্থায় আগুন ছড়িয়ে পড়লে তারা নিহত ও আহত হন। পরে আহত ৫ জনকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত ডাক্তার শ্বাসানালী ও শরীরের ৮০ থেকে ১০০ ভাগ পুড়ে যাওয়ায় তাদের ঢাকা বার্ণ ইউনিটে স্থানান্তর করলে বৃহস্পতিবার ঢাকা নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সে তারা মারা যান। লাশ উদ্ধারের পর প্রশাসনিক কার্যক্রম শেষে জয়পুরহাট শহীদ জিয়া কলেজ মাঠে কয়েক হাজার লোকের উপস্থিতিতে দুপুরে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌর মেয়র, উপজেলা জেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বিজিবির সিও সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক পেশাজীবী ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের লোক জানাজায় অংশ নেয়। জানাজা শেষে তাদের সরকারী কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। বাঁকী ৩ জন ঢাকা থেকে জয়পুরহাটে ফেরার পথে পথিমধ্যে থাকায় পরে জয়পুরহাট কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহত প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অর্থিক সাহায্য করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজেস্ট্রেট সোনিয়া বিনতে তাবিবকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করেন। কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন