শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

সর্বধর্মীয় স¤প্রীতি সভা’র ৩য় বর্ষপূর্তি ও স¤প্রীতি সম্মেলনে বক্তারা সব ধর্মেই আছে শান্তির কথা

প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভার তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সম্প্রীতি সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, সব ধর্মেই শান্তির কথা বলা হয়েছে। হিংসা, হানাহানিকে খারাপ হিসেবে দেখা হয়েছে। এজন্য যার যার ধর্ম পালন করেই বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে পারষ্পারিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি গড়ে তোলা সম্ভব।
গতকাল শনিবার বিশ^সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভা’র ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স¤প্রীতি সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভার চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফের সভাপতিত্বে এ সম্প্রীতি সভায় চার পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ শেষে জাতীয় সংগীত ও থীম সঙ গাওয়া হয়।
সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভার চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা:) ভালোবাসা দিয়ে ধর্মের প্রচার করেছেন। ঠিক তাই করতে হবে আমাদের। ধর্মকে গÐিবদ্ধভাবে চিন্তা না করে একে সার্বজনীন ও সামগ্রীকভাবে বুঝতে হবে। যে বলছে তার কোনও ধর্ম নেই, আসলে তারও একটা ধর্ম আছে। ধর্মহীন কেউ হতে পারে না।
ইরানিয়ান কালচারাল কাউন্সিলর সাইয়্যেদ মুসা হুসেইনী বলেন, সবধর্মের মূলবাণী হচ্ছে ঐক্য ও সম্প্রীতি। আমি আশা করি অচিরেই সারাবিশ্বে ধর্মীয় সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
মুসা হুসেইনী বলেন ইসলাম সকল ধর্মের লোকদের অধিকার পূর্ণভাবে স্বীকার করে সংরক্ষণ করে। তার প্রমাণ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ভারপ্রাপ্ত খতীব মাওলানা মুফতী মুহিব্বুল্লাহ বাকী নদভী বলেন, স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট হয়। ধার্মিকেরা যখন ওই স্বার্থান্বেষী মহলের ফাঁদে পা দেয় তখনই তা সংঘাতে রূপ নেয়। তাই আমাদের জাগ্রত হতে হবে, সচেতন হতে হবে সকল চক্রান্তকারীদের ব্যাপারে।
ন্যাশনাল চার্চ ফেলোশিপ বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বিশপ ফিলিপ অধিকারী বলেন, হিংসা-রাগ-অহংকার-ঘৃণা পরিহার করে প্রেম নিয়ে সকলকে একসাথে চলতে হবে।
ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বামী গুরু সেবানন্দ বলেন, আমাদের মন মুখ এক করতে হবে। আমরা মুখে যা বলি তা সর্বান্তকরণে মনের মধ্যে ধারণ করতে হবে। ইসলাম ধর্মও বলে মুনাফেকী করা যাবে না।
ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস ইন বংলাদেশের ডেপুটি হেড অফ ডেলিগেশন বরিস কেলেসিভিচ বলেন, সর্বধর্মীয় সভা এমন একটি প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে সকল ধর্মের মানুষকে একত্রিত
করা সম্ভব। তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি করা সম্ভব।
তিনি বলেন, মানবতাবোধ হতে হবে পক্ষপাতহীন। ধর্মীয় অধিকার হবে সবার জন্য সমান। তিনি উৎসাহ দিয়ে বলেন, আমরা এই সম্প্রীতি সভার সাফল্যের জন্য সবধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর আনিসুজ্জামান বলেন, ধর্মের মূল শিক্ষা হচ্ছে ভালোবাসা। প্রতিটি ধর্মের দার্শনিক চিন্তাগত পার্থক্য আছে, আচার অনুষ্ঠানে পার্থক্য আছে কিন্তু পার্থক্য নেই মানবিক মূল্যবোধে।
ঢাকা মহা ধর্ম প্রদেশের সহকারী বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গোমেস বলেন, সত্য উপলব্ধি করা গেলে এবং প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করা গেলে অপপ্রচারের মাধ্যমে আর ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করা যাবে না। সবাই একই পরিবারের সদস্য এই উপলব্ধিই পারে সংঘাত বন্ধ করতে।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসাবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সিনিয়র সহ-সভাপতি বুদ্ধপ্রিয় মহাথেরো, বাংলাদেশ জাতীয় চার্চ ফেলোশীপের প্রেসিডেন্ট বিশপ ফিলিপ অধিকারী, ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সহকারী মহাসচিব স্বামী গুরু সেবানন্দ, সংগঠনের কো-চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সুকোমল বড়–য়া. ড. ফাদার তপন ডি রোজারিও, সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরী এবং জেনারেল সেক্রেটারী শরীফ বায়জীদ মাহমুদ।
এছাড়া সম্পীতি সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী আহŸায়ক কর্নেল (অব.) আশরাফ আল দীন, সদস্য সচিব আবেদুর রহমান, সিলেট বিভাগ আহŸায়ক কর্নেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ, রাজশাহী বিভাগের প্রতিনিধি প্রফেসর ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ, খৃস্টধর্মের নারী নেত্রী কলিকা বিশ্বাস, বৌদ্ধধর্মের নারী নেত্রী জয়া বড়ূয়া, চলচ্চিত্র পরিচালক শেখ নজরুল ইসলাম, বিশিষ্ট আলেম মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, কবি আসাদ হাফিজ প্রমুখ।
জেনারেল সেক্রেটারী শরীফ বায়জীদ মাহমুদের উপস্থাপনায় সভায় জাতীয় ঐক্য ও ধর্মীয় স¤প্রীতি অক্ষুণœ রাখতে সর্বম্মতিক্রমে ৬ দফা প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, দেশে বর্তমানে সামাজিক অস্থিরতার কারণে ধর্মসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে স¤প্রীতির অভাব বিরাজ করছে। এই বাস্তবতা যাতে বাংলাদেশের চিরায়ত ধর্মীয় স¤প্রীতিকে ক্ষুণœ করতে না পারে তার জন্য দেশের সকল ধর্মীয় সামাজিক সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনকে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করার আহŸান জানাচ্ছে।
ধর্মবিশ^াসী সকলকে নিজ নিজ ধর্ম পালন এবং ধর্ম চর্চার মাধ্যমে পারস্পারিক স¤প্রীতি সুদৃঢ় করতে হবে। এ দেশে অধিকাংশ সংঘাতই হয় প্রতিপত্তি, ক্ষমতা ও সম্পত্তির জন্য, পরে তাতে নানা রং দেয়া হয়। তাই যে সব আইনের কারণে, জমি ও সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ সারাদেশে স¤প্রীতি বিনষ্ট করছে, সেই আইনগুলো সংস্কারের জন্য এই সম্মেলন সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির জমি দখল ও ধর্মীয় উপাসনালয় ভাংচুরের নিন্দা এবং অবিলম্বে অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবী। এছাড়াও, মায়ানরমার, সিরিয়া, ফিলিস্তিনসহ বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তে সাধারণ মানুষদের ওপর অমানবিক নির্যাতনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তা বন্ধে জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহŸান জানায়।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিলেন সংবাদ পাঠক আব্দুর রউফ। সভা শেষে দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ কামনা করে সর্বধর্মীয় প্রার্থনা করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন