প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভয় ও শিহরণের স্থান সুন্দরবন। জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ। প্রকৃতির অকৃপণ হাতের সৃষ্ট এ ম্যানগ্রোভে বসেছে গাঢ় সবুজের সমারোহ। শুধু সবুজ আর সবুজের মেলা। পৃথিবীর হরেক রকমের জীব-জন্তু, পাখ-পাখালি, আর কীট-পতঙ্গ, বঙ্গোপসাগর থেকে ছুটে আসা জলভেজা লবণাক্ত বাতাস, আর প্রকৃতির অনিন্দ্য সুন্দর রূপ বর্তমানে ভ্রমণ পিপাসুদের পিপাসা মিটাতে ব্যর্থ হচ্ছে। সরকার সুন্দরবন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করা লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করলেও তা শতভাগ বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ফলে সম্ভাবনাময় খাতটি পড়ছে হুমকির মুখে।
জানা গেছে, সুন্দরবন কেন্দ্রীক পর্যটন শিল্পের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সুন্দরবনের পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলেও টানা দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ মুহূর্তেও প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়িত হয়নি। যে কারণে সুন্দরবন কেন্দ্রীক পর্যটন শিল্প বিকাশে ধীর গতিতে অসন্তোষ ক্রমেই দানা বেধে উঠছে। নাগরিক কমিটির ব্যানারে নানা কর্মসূচিতে সোচ্চার সামজিক সংগঠনগুলো। অথচ খুলনা-নলিয়ান হয়ে সুন্দরবন পর্যটন শিল্প বিকাশের সম্ভাবনাময় প্রকল্পটি এখনো পূর্ণাঙ্গতা পায়নি। প্রকল্পটি চলছে শম্ভুক গতিতে। ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
স্থানীয়রা জানায়, গত ১০ বছরে ঝপঝপিয়া নদীর ওপর পানখালি সেতু এবং দাকোপ সেতুর কোনটাই এখনও কাজ শুরু হয়নি। নগরীর গল্লামারী থেকে দাকোপের নলিয়ান পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার সড়কের মাত্র সাড়ে ২৫ কিলোমিটার নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। ফলে সুন্দরবন কেন্দ্রীক পর্যটন শিল্প বিকাশের অমিত সম্ভাবনার পথটি একেবারেই রূদ্ধ হয়ে আছে।
এসব বিষয় নিয়ে সুন্দরবন রক্ষা কমিটি এবং বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি বিভিন্ন সময় সরকার প্রধানসহ সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের নিকট স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন করে। বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটি এ ব্যাপারে নানামুখী কর্মসূিচ হাতে নেয়। গতকাল বাপমাবাসো এর বটিয়াঘাটা উপজেলা কমিটি এক বিশেষ সভার আয়োজন করে। অধ্যাপক এনায়েত আলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাপমাবাসো’র সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শেখ আব্দুল হামিদ, রতন কুমার সাহা, নগেন্দ্রনাথ মন্ডল, বিবেক বিশ্বাস, সওদা বেগম, সুফিয়া বেগম, তানিয়া বিশ্বাস প্রমুখ। বক্তরা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কৃত্রিম উপায় পর্যটন শিল্প গড়ে তুলে এগিয়ে চলেছে। সেখানে আমাদের দেশের এত বড় প্রাকৃতিক সম্পদ অবহেলায় ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে। একটু সুনজর দিলেই এই সুন্দরবন হয়ে উঠবে পর্যটনের অন্যতম খাত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সড়কটি নির্মিত হলে দাকোপসহ খুলনার অর্থনীতির চাকা সচলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রে দাকোপ উপজেলার নলিয়ান একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখান থেকে সরাসরি সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এত অল্প সময়ে খুলনা থেকে সুন্দরবনের যাওয়ার অন্যকোন পথ নেই। নদীপথে খুলনা থেকে সুন্দরবনে যেতে সময় লাগে প্রায় ৫-৬ ঘন্টা। এ রোডটি নির্মাণ হলে সময় ও অর্থ বাঁচবে। এছাড়া নলিয়ান ও দাকোপে গড়ে উঠবে নতুন নতুন হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। স্থানীয় জনগণের আয়ের উৎস সৃষ্টি হবে। সরকারি সহায়তায় ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে উঠবে পর্যটন কেন্দ্র। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হলে খুব সহজেই আকৃষ্ট হবে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন