ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি দেখা দিয়েছে। একের পর এক খুন, ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ফলে আশুলিয়াবাসীর মাঝে দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক। আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
গতকাল রোববার ভোর রাতে আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজার এলাকায় সরকার বাড়িতে দুর্ধষ ডাকাতি ও হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। ডাকাতদের গুলিতে নিহত হয়েছে গৃহকর্তা আবুল হোসেন সরকার (৫২)। এসময় তার ছোট ভাই মুকবুল হোসেন সরকার ও তার স্ত্রী বেদেনা বেগম ডাকাতদের হামলায় আহত হয়। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ডাকাতরা বাড়ি থেকে ৫০ভরি স্বর্ণালংকার, লাইসেন্সকৃত বন্দুক, নগদ ৭৫হাজার টাকাসহ মূল্যবান মালামাল লুটে নিয়েছে।
নিহত আবুল হোসেন সরকার (৫২) সরকার বাড়ীর হালিম সরকারের পুত্র। নিহতের ছোট ভাই মকবুল হোসেন সরকার জানান, ভোর রাতে বাড়ির সীমানা প্রাচির টপকে বারান্দার গ্রিল কেটে সশস্ত্র ১০-১২ জন ডাকাত তার বাবা হালিম সরকারের কক্ষে প্রবেশ করে। তার বাবা বয়স্ক ও অসুস্থ থাকায় তাকে জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে বাড়ির সবাইকে একটি কক্ষে আটকে রাখে। পরে তাদের লাইসেন্স করা একটি এক নলা বন্দুক, নগদ ৭৫ হাজার টাকা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল হাতিয়ে নেয় ডাকাতরা। পরে কৌশলে মোবাইল ফোনে বিষয়টি প্রতিবেশীদের জানালে এলাকার মসজিদে ডাকাতির ঘটনার কথা জানিয়ে মাইকিং করা হয়। এসময় এলাকাবাসী ডাকাতের কবলে থাকা বাড়ি ঘিরে ফেলে। পরে তার বড় ভাই আবুল সরকার ও তিনি ডাকাতদের খুঁজতে থাকেন। পরে সীমানা প্রাচিরের এক কোণায় তিন ডাকাতকে লুকিয়ে থাকতে দেখতে পান তারা। এসময় আবুল হোসেন এক ডাকাতকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করতে থাকে। এসময় অপর অপর ডাকাত তার ভাইয়ের পেটে গুলি করে ও তাকে মাথায় আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আবুল হোসেনকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মনিরুল হক ডাবলু জানান, ঘটনার পর আশুলিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ডাকাতরা হামলা চালিয়ে গুলি করে আবুল সরকারকে হত্যা করেছে।
এঘটনার কয়েক ঘন্টা আগে শনিবার রাত ৯টার দিকে আশুলিয়ার কাঁইচাবাড়ী এলাকায় পৈত্রিক এক শতাংশ জমির জন্য ঘুমন্ত অবস্থায় দা দিয়ে কুপিয়ে ও জবাই করে আপন বড় ভাইকে হত্যার পর রক্তমাখা দা হাতে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে ছোট ভাই জাহেদ আলী। নিহত আবু তাহের (৪০) কাইচাবাড়ী এলাকার মৃত ফজর আলীর ছেলে।
নিহতের বোন হাসিনা বেগম জানান, বড় ভাই আবু তাহের পৈতৃক এক শতাংশ জমি বিক্রয় করে বিদেশ যেতে চাইছিল। এ বিষয় নিয়ে অনেক দিন ধরেই মেঝ ভাই জাহেদ আলীর সাথে দ্ব›দ্ব চলছিল। গত কয়েক দিন পূর্বে তাহের এক প্রতিবেশীর কাছে তার পৈতৃক এক শতাংশ জমি বিক্রয়ের জন্য ১ লাখ টাকা বায়না করেন। তিনি আরও বলেন, রাতে বড় ভাই আবু তাহের তার কক্ষে ঘুমিয়ে পড়লে মেঝ ভাই জাহেদ তার ঘরে ঢুকে দা দিয়ে কুপিয়ে ও জবাই করে ঘুমন্ত ভাইকে হত্যা করে। পরে রক্তমাখা দা হাতে সে আশুলিয়া থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাহেরের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাবেদ মাসুদ জানান, রাতে তিনি তার অফিস কক্ষে বসে ছিলেন। এসময় হঠাৎ তার কক্ষে রক্তমাখা শরীরে, রক্তমাখা দা হাতে এক ব্যক্তির উদয় হয়। সে নিজেকে জাহেদ আলী দাবী করে জানায়, ‘আমার বড় ভাইকে হত্যা করেছি, আমাকে গ্রেফতার করুন’। পরে তাকে আটক করে খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। তবে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আবু তাহের খুন হয়েছেন কি না সে ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
এঘটনার একদিন আগে শুক্রবার রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশুলিয়ার মরাগাঙ্গ এলাকায় চলন্ত বাসে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে জরিনা খাতুনকে (৪৫) হত্যার পর তার বাবা আকবর আলী মন্ডলকে (৭০) মারধর করে বাহিরে নিক্ষেপ করে বাস শ্রমিকরা। তবে পুলিশ ঘাতক বাসটি সনাক্ত কিংবা ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি। এঘটনায় পরদিন মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয়েছে ঢাকা জেলা (উত্তর) ডিবিকে। পরে গতকাল মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়েছে।
নিহতের বাবা আকবর আলী মন্ডল জানান, শুক্রবার দুপুরে তারা আশুলিয়ার গাজিরচট এলাকায় নাতিনের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে আশুলিয়ার ইউনিক এলাকা থেকে একটি টাঙ্গাইলগামী বাসে উঠেন। বাসটি টাঙ্গাইল না গিয়ে বিভিন্ন স্থান ঘুরে আবার আশুলিয়ার দিকে চলে আসে। পথিমধ্যে বাসের ভিতরে থাকা যাত্রীরা আমাকে ও আমার মেয়েকে মারধর করে মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে চলন্ত বাস থেকে আমাকে আশুলিয়া ব্রিজের কাছে ফেলে দেয়। তখন টহল পুলিশকে ঘটনাটি জানালে তারা প্রায় এক কিলোমিটার সামনে গিয়ে মরাগাং এলাকায় মহাসড়কের পাশ থেকে মেয়ে জরিনা খাতুনের লাশ খুজে পায়।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক বিজন কুমার দাস বলেন, নিহত নারীর গলায় কালো দাগ পাওয়া গেছে। ধারনা করা হচ্ছে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর তাকে ফেলে রেখে গেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বাসের, হেলপার, সুপারভাইজার, চালকসহ অজ্ঞাতদের আসামী করে নিহতের মেয়ে জামাই নুর ইসলাম বাদী হয়ে রাতেই আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ঢাকা জেলা (উত্তর) ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ জানান, মামলাটির নথিপত্র হাতে পাওয়ার পর পরই তদন্ত শুরু করেছি। প্রথমে আমরা ঘটনাস্থলসহ সম্ভাব্য স্থানগুলো পর্যবেক্ষন কাজ শুরু করেছি। দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবেন বলেও তিনি জানান।
এদিকে ৩০অক্টোবর রাতে পলাশবাড়ী এলাকায় খালাতো বোনের বাড়িকে বেড়াতে এসে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে এক নারী। এঘটনায় মামলা দায়ের হলে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। অন্য দুইজন পালিয়ে যায়।
আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রিজাউল হক জানান, গণধর্ষণের শিকার ওই নারীর অভিযোগের ভিত্তিত্বে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
গত ৮অক্টোবর দুপুরে আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকায় এক বাউল শিল্পীকে আটকে রেখে গণধর্ষণের ঘটনায় পরদিন পুলিশ বাদশা ভুইয়াকে (৪০) গ্রেফতার করলেও ঘটনার মূলহুতা সুজন ভুইয়া (৩৫) পালিয়ে যায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিলায়েত হোসেন জানান, আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় থেকে ৩০বছর বয়সি ওই নারী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাউল গান করতেন।
ঘটনার দিন দুপুরে তিনি গাজীরচট এলাকায় পাওনা টাকার জন্য আবুল কালাম নামের অপর এক বাউল শিল্পীর দোকানে যায়। এসময় কালাম নারী শিল্পীকে দোকানে বসিয়ে রেখে বাহিরে চলে গেলে সুজন ভুইয়া এক শিশু দিয়ে তাকে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
পরে বাদশা নামের আরেক ব্যাক্তি ওই শিল্পীকে তার বাড়ির একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে আবারো ধর্ষণ করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন