শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

তাপদাহে পুড়ছে দেশ

প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : টানা তাপদাহে সারাদেশে মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। ভ্যাপসা গরমের সাথে চলছে লোডশেডিং। উত্তরাঞ্চলে যেন বইছে মরুভূমির লু হাওয়া। রোদের তীব্রতায় নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। মানুষের সাথে গবাদি পশুসহ বিভিন্ন প্রাণীর প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে। বিভিন্নস্থানে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র পানি সংকট। অতিরিক্ত গরমে রাজধানীর ঢাকায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে বৃদ্ধি পেয়েছে রোগীর সংখ্যা।
হাসপাতালে রোগীদের ভিড়
প্রচন্ড দাবদাহে যেন চলছে না জীবন চাকা। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, রোগ-বালাই। তবে, বেশিরভাগই আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত রোগ ও ডায়রিয়ায়। হাসপাতালগুলোতেও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। ফলে, জায়গা সংকটে বিপাকে পড়েছেন, কর্তৃপক্ষ ও সেবা প্রত্যাশীরা। এদিকে রাজধানীতে অতিরিক্ত গরমে একজনের মৃত্যর খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে মৃত ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। বয়স আনুমানিক ৫৫ বছর।
বৈশাখের দাবদাহে পুড়ছে প্রাণ প্রকৃতি। তিনসপ্তাহের বেশি সময় ধরে সূর্যের টানা এই চোখ রাঙ্গানীতে হাঁপিয়ে উঠেছে জনজীবন। কেননা গেল তিনদশকে প্রকৃতির এমন বাড়াবাড়ি দেখেনি দেশের মানুষ। আবহাওয়া অফিসের পারদে তাপমাত্রা ঘোরা ফেরা করছে ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে। যদিও দেশের কোন কোন স্থানে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রীও ছুয়েছে। কিন্তু বাস্তবে প্রখর রোদের এই সময়ে উত্তাপের মাত্রা যেন আরো বেশি। প্রকৃতির এই খামখেয়ালির সাথে যেন, দিনদিন খেই হারিয়ে ফেলছে কোলের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ, সবার শরীর যন্ত্র। আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়রিয়া, ঠান্ডাজনিত নানা রোগে। বাড়তি রোগীর এই চাপ সামাল দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও। আসন খালি না থাকায়, কোন মতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। অনেক জায়গায় দেখে দিয়েছে খাবার স্যালাইনের সংকটও। চিকিৎসকদের পরামর্শ, গরমের এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পানের বিষয়ে নজর দিতে হবে সবার আগে।
এদিকে অতিরিক্ত গরমে কারওয়ান বাজারে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঘটনা সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের নিউ ব্রান্ড হোটেলের সামনে থেকে অচেতন অবস্থায় অজ্ঞাত ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায় তেজগাঁও থানা পুলিশ। তবে ঢামেকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে চিকিৎসক জানান, অতিরিক্ত গরমের কারণেই তার মৃত্যু হতে পারে। আসল বিষয়টি ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে।
ঢামেকের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সজীব রঞ্জন দেব এ বিষয়ে জানান, সম্প্রতি তামমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সাধারণের চাইতে ২৫ শতাংশ বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে নিউমোনিয়া, স্কিন ডিজিজ ও হিট স্ট্রোক ইত্যাদি কারণেই রোগীর ভর্তি হচ্ছে বেশি।
এছাড়া জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টারের টিকিট ম্যান কাউসার জানান, আগে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচশ’ টিকিট বিক্রি হত। তবে গরমের কারণে এখন প্রতিদিন আটশ’ এর মত টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
শ্রমজীবী মানুষের চরম দুর্ভোগ
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, অসহনীয় তাপদাহ অব্যাহত রয়েছে। টানা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলছে নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ। দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে সারাদেশের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বৈশাখ মাসের ১৭ দিন অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু বৈশাখে চিরচেনা কালবৈশাখীর সাথে হিমেল দমকা হাওয়া ও প্রত্যাশিত বৃষ্টির দেখা নেই। তাপদাহে কাহিল মানুষ বৃষ্টির আশায় আকাশপানে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে। আবহাওয়া বিভাগ গতকাল (শনিবার) জানায়, আরও ৪৮ ঘণ্টা পর (আগামীকাল সোমবার) থেকে দমকা হাওয়ার সাথে কোথাও কোথাও কিঞ্চিৎ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানায়।
ভ্যাপসা গা-জ্বালা গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং ও বিভ্রাট। বেড়ে গেছে বিশুদ্ধ পানির জন্য অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। দূষিত পানিবাহিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় মানুষজন ঘামে-নেয়ে নাকাল হয়ে যাচ্ছে। টানা খরতাপের কারণে হতদরিদ্র দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের আয়-রোজগার ব্যাপকহারে কমে গেছে। দিনমান বেড়েছে কষ্ট-দুর্ভোগ। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শ্রমজীবী মানুষ।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় দেশের কোথাও ছিঁটেফোঁটা বৃষ্টিও হয়নি। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ও ২৮.৪ ডিগ্রি সে., চট্টগ্রামে ৩৫ ও ২৮, সিলেটে ৩৪.৫ ও ২৪, রংপুরে ৩৫ ও ২৩.৫, খুলনায় ৩৮ ও ২৭.৭, বরিশালে ৩৬.৫ ও ২৭.৮ ডিগ্রি সে.।
আবহাওয়া বিভাগ আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানায়, ঢাকা, রংপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
প্রচ- তাপদাহে পুড়ছে উত্তরাঞ্চল
বগুড়া অফিস জানান, প্রচ- তাপদাহে পুড়ছে মানুষ প্রকৃতি। জীব জন্তুরও প্রাণ ওষ্ঠাগত । শাক-সবজি হতে ধান, পাট, আম, লিচু সব কিছ্রু উপর পড়েছে বিরূপ প্রভাব। তাপমাত্রাও কদিন ধরে চল্লিশ ডিগ্রীর উপরে ওঠা-নামা করছে। বাতাসের আদ্রতা ভাল নেই। গা-জ্বালানো গরম বাতাসের ঝাপটা চোখে মুখে জ্বালা ধরাচ্ছে। বাতাসতো নয় যেন মরুভূমির লু হাওয়া। এমন অসহনীয় অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য মানুষ চেয়ে আছে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টির পানে। ইসতেখার নামাজ আদায় করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানাচ্ছে। জুম্মার নামাজে মসজিদে মসজিদে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত হচ্ছে পানাহ চেয়ে। সকালের সুর্যটা উদয় হচ্ছে যেন আগুনের হল্কা নিয়ে। বেলা দশটার মধ্যে গরম অসহনীয় হয়ে উঠছে। স্কুল-কলেজ ও অফিসগামী মানুষ আর দিন খেটে খাওয়ারা রোদ্রে পুড়ছে। ফর্সা আর শ্যামলা বর্ণের মানুষের চেহারা তামাটে হয়ে গেছে। কালো রং হয়েছে আরো কালো। নেহায়েত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে আসতে চাইছে না মানুষ। আর দিন খাটা মানুষদের তো বাইরে আসতেই হবে। কাজ না করা মানে অনাহারে-অর্ধহার। রিক্সা চালক অটোরিক্সা নিয়ে রাস্তায় এলেও সকাল আর বিকেল ছাড়া তাদের যাত্রী মিলছে কম। সকালের আর বিকেলে দিকে স্কুল কলেজ আর অফিসগামী ও ফেরতদের পাওয়া যায়। দিনভর বাজার গুলোয় ফাঁকা ফাঁকা ভাব দেখা গেলে বিকেলের পর একটু ভিড় বাড়ছে। যা কেনাকাটা হচ্ছে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত।
গ্রামাঞ্চলের মানুষও স্বস্তিতে নেই। সেখানে দিন রাতের পাঁচ সাত ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে করে সেচ ব্যবস্থায় বিঘœ ঘটছে। সেখানেও চলছে খাবার পানির সংকট। পানির স্তর নেমে যাবার কারণে নলকূপে পানি ওঠে না। আর পাতকুয়াগুলোর অপমৃত্যু ঘটেছে। সেখানেও ভরসা ডীপ টিউবওয়েলের পানি। সেচ পাম্পগুলোর কাছে পানি সংগ্রহের জন্য থাকছে লম্বা লাইন। বরেন্দ্র প্রকল্পের খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্প বিঘিœত হচ্ছে। নগর গ্রাম সর্বত্র খাবার পানির সংকট। বিশুদ্ধ পানির অভাবে বিস্তার ঘটছে ডায়রিয়ার। তাছাড়া শরীর থেকে ঘাম বেরিয়ে যাবার কারণে মানুষ কাহিল হয়ে পড়ছে। হাসপাতাল স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোয় ভিড় গরমজনিত রোগে আক্রান্তদের। তাপপ্রবাহের প্রভাব শুধু মানবদেহের উপর নয়। ফসলের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। এবার আবহাওয়া পক্ষে থাকায় গাছজুড়ে আম, লিচুর মুকুল এলেও কাক্সিক্ষতহারে গুঁটি ফোটেনি। তারপরও যেগুলো ছিল তা প্রচ- তাপদাহের কারণে ঝরে পড়ছে অস্ব¦াভাবিক হারে। বাজারে এসব গুঁটি মিলছে পাঁচ সাত টাকা কেজি দরে। সেচ দিয়ে গুঁটি ঝরা থেকে রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে আম, লিচু চাষীরা। তাপ সহ্য করতে না পেরে নেতিয়ে পড়ছে শাক-সবিজ আর পাট ক্ষেত। এসব বাঁচাতে সেচের প্রয়োজন হচ্ছে বেশী। হাস মুরগি মাছের খামারে তাপাদহ হানা দিয়েছে। খামারের হাঁস-মুরগিগুলো একটু নাজুক প্রকৃতির। একটুতে কাহিল হয়ে পড়ছে। তাপের দহন থেকে রক্ষার জন্য বড় বড় ফ্যান লাগিয়ে ঠা-া রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখানেও বিদ্যুৎ ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। খাল-বিল-পুকুর শুকিয়ে যাবার কারণে এখন খামারের হাইব্রিড জাতের মাছই ভরসা। যেসব পুকুর খামারে মাছ চাষ হচ্ছে সেগুলো নীচ থেকে পানি উঠিয়ে ভরে রাখা হয়। তাপদাহে খামারের মাছের আধারগুলোর পানি গরম হয়ে যাচ্ছে। মাছ ভেসে উঠছে।্ অনেক স্থানে মধ্যে খানে খড়ের চালা দেখা যায়। সেখানে পানির নীচে মাছ আশ্রয় নেই।
দুঃসহ মাস পার করল দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষ
বরিশাল ব্যুরো জানান, টানা ২৪ দিনের তাপপ্রবাহর একটি দুঃসহ মাস পাড় করল দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষ। স্বাভাবিকের ৮০ ভাগ কম বৃষ্টিপাতের সাথে সাম্প্রতিককালের সর্বোচ্চ, ৩৭.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এপ্রিল মাসটি পার হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে। ফলে সুস্থ জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত। অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। দুঃসহ তাপদহে শিশু ও বয়স্করা যথেষ্ঠ অস্থির হয়ে পড়ছেন। বৃষ্টির অভাবে এঅঞ্চলের দ্বিতীয় দানাদার খাদ্য ফসল বোরো ধান ছাড়াও তরমুজের উৎপাদন যথেষ্ঠ ব্যহত হয়েছে। ২৯ এপ্রিলও বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
এপ্রিল মাসে আবহাওয়া বিভাগের আগাম বুলেটিনের সাথে বাস্তবতার ফাড়াক ছিল অনেক। পূর্ণিমার পরে অমাবশ্যা সমাগত হলেও আকাশে মেঘের দেখা নেই। গত ২ এপ্রিলের পরে দক্ষিণাঞ্চলের আকাশে আর কোন মেঘ-বৃষ্টির দেখা মেলেনি। মার্চ মাসে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৩৬ ভাগ কম বৃষ্টিপাতের পরে এপ্রিলে স্বাভাবিক ১৩২ মিলিমিটারের স্থলে ১৩০-১৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া বিভাগ। কিন্তু গত ১ ও ২ এপ্রিল বরিশাল অঞ্চলে ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পরে টানা ২৮ দিনে তার আর কোন দেখা নেই। গত ৩১ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হয়। যার প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবার আশংকায় পায়রাসহ সবগুলো সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেতের আওতায় আনা হয়। এমনকি বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নদী বন্দরে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলে আবহাওয়া বিভাগ। ফলে অনধিক ৬৫ ফুট দৈর্ঘের যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকেও পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছিল।
এদিকে মওশুমের শুরু থেকেই বৃষ্টির অভাব এবার দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজের আবাদ প্রায় ২০ভাগ হ্রাসের পাশাপাশি এর ফলনও বিপর্যয় ঘটেছে। তরমুজ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের চাষীরা এবার যথেষ্ঠ বিপর্যয়ের কবলে বৃষ্টির কারণে। এমনকি গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির আবাদ ও ফলনও ক্রমে বিপর্যয়ের কবলে। আম-কাঁঠালসহ বিভিন্ন মওশুমি ফলের উৎপাদনও মারাত্মক সংকটের কবলে। বেশীরভাগ মওশুমি ফলের বৃদ্ধি ব্যহত হচ্ছে। বৃষ্টির অভাবে গাছের শেকড় ক্রমে রসশূন্য হতে শুরু করায় ফলের বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি কোন কোন এলাকায় ফল ঝরে পড়তেও শুরু করেছে।
মানুষ হাঁপাচ্ছে প্রাণীকূল করছে ছটফট
যশোর থেকে রেবা রহমান জানান, যশোরে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। গ্রীষ্মের অস্বাভাবিক শুষ্কতা ও প্রখর খরতাপের পাশাপাশি বেড়েছে লোডশেডিং। মানুষ রীতিমতো হাঁপাচ্ছে। তাপমাত্রা এতো বেশী যে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম। প্রচ- দাবদাহে প্রাণীকূল ছটফট করছে। মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমখি হচ্ছে কৃষি, শিল্প, মৎস্য, বনজ ও পরিবেশ। আবহাওয়াবিদগণের বক্তব্য আবহাওয়ার পরিবর্তনে আমরা উদ্বিগ্ন। শীত মৌশুমে প্রচ- শৈত্যপ্রবাহ হল। আর এখন গরমেও প্রচ- গরম।
সূত্র জানায়, নদ-নদী, খাল-বিল পানিশূন্য এবং গাছপালা কমে যাওয়ায় ভূপৃষ্ট থেকে তাপমাত্রা উপরে উঠার সময় বাষ্প বা পানিকণা নিতে পারছে না। আকাশে মেঘ ও বৃষ্টির জন্য যে বায়ু দরকার তা পাচ্ছে না। গতকাল যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এবারের গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে যশোরে ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবহাওয়া দপ্তর বলেছে, আপাতত বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই। উপরন্তু তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে।
অসহ্য গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। প্রচ- গরম ও লোডশেডিং চলছে রীতিমতো পালা দিয়ে। ভর দুপুরে রাস্তা ঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এর থেকে মানুষ নিষ্কৃতি পাবার কোন ব্যবস্থা নেই। রোগ বাড়ছে শিশুদের। প্রচ- খরতাপে অনেকেই মাঠেঘাটে কাজ করতে গিয়ে মাথা ঘুরে ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনই অসহনীয় গরমে মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। যার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ওজোপাডিকো ও পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, আপাতত বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নতি হবার কোন সম্ভাবনা নেই। বিদ্যুৎ সরবরাহ এক তৃতীয়াংশে নেমে এসছে। পিডিবি থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোও চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন