শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

খাশোগির খুনিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনবে যুক্তরাষ্ট্র

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ পিএম

ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে নিহত সাংবাদিক জামাল খাশোগির খুনিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রবিবার সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ফোনালাপে নিজ দেশের এমন অবস্থানের জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। যদিও এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযোগের আঙ্গুল খোদ সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে।


মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হেদার নুয়ার্ট দুই নেতার ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। সৌদি আরবকেও একই ব্যবস্থা নিতে হবে।

এদিকে সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের কাছে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের অডিও রেকর্ডিং সরবরাহ করেছে তুরস্ক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার শত বছর পূর্তি উপলক্ষে শনিবার (১১ নভেম্বর) ফ্রান্স সফরের আগে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, খাশোগিকে কে হত্যা করেছে তা আগে থেকেই জানতো সৌদি আরব।

এরদোয়ান বলেন, ১৫ সদস্যের দলের মধ্যে নির্দিষ্টভাবে কে জামাল খাশোগিকে হত্যা করেছে তা সৌদি আরবের জানা আছে। ২ অক্টোবর হত্যাকাণ্ডের একদিন আগে তারা তুরস্ক পৌঁছেছিল।

২ অক্টোবর ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন সৌদি অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগি। কনস্যুলেট ভবনে তার হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার কথা স্বীকার করলেও এর সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান কিংবা অন্য কোনও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করে আসছে দেশটি। তবে সৌদি আরবের এমন দাবি মানছে না তুরস্কসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় অংশ। ইউরোপীয় দেশগুলো এ ইস্যুতে রিয়াদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হন।

খাশোগি হত্যার প্রমাণ সম্বলিত অডিও রেকর্ড ও যাবতীয় তথ্য তুরস্কের নিজস্ব তদন্তে পাওয়া। তুর্কি তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, খাশোগির হাতে সর্বাধুনিক ‘অ্যাপেল ওয়াচ’ ছিল। আর এ ওয়াচের মাধ্যমে সৌদি কনস্যুলেটে তাকে নির্যাতন এবং হত্যার মুহূর্তের অডিও রেকর্ড তার ফোন এবং আইক্লাউডে পৌঁছে গিয়েছিল। এই ফোন ও আইক্লাউড তিনি কনস্যুলেটের বাইরে অপেক্ষমান তার বাগদত্তার কাছে রেখে গিয়েছিলেন। এখন এসব রেকর্ড তার বাগদত্তার হাত থেকে তুর্কি তদন্তকারীদের কাছে পৌঁছেছে। শুরু থেকেই খাশোগিকে হত্যার একটি অডিও প্রমাণ হাতে থাকার দাবি করে আসছে তুরস্ক।

ওই অডিও রেকর্ডিং পুরোপুরি শুনেছেন এমন এক তুর্কি সূত্র মিডলইস্ট আইয়ের কাছে দাবি করেন, ২ অক্টোবর মাত্র সাত মিনিটে পুরো হত্যাকাণ্ড সম্পাদিত হয়েছে। ওই সূত্র দাবি করেছে, খাশোগিকে হত্যার উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের জেনারেল সিকিউরিটি বিভাগের ফরেনসিক প্রমাণ সংক্রান্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সালাহ মোহাম্মদ আল তুবাইগিসহ ১৫ জনের একটি দল প্রাইভেট জেটে করে ওইদিন সকালে আঙ্কারা পৌঁছান। দূতাবাসের কনসাল জেনারেলের অফিস থেকে খাশোগিকে টেনেহিঁচড়ে কনসাল জেনারেলের পড়ার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় উপরে প্রচণ্ড চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সেখানে নিচতলায় উপস্থিত থাকা এক ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পর তার চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, তাকে চেতনানাশক কিছু দেওয়া হয়েছিল।

সূত্র দাবি করেছে, খাশোগিকে জিজ্ঞাসাবাদের কোনও আলামত দেখা যায়নি। তাকে হত্যা করতেই স্কোয়াডটি এসেছিল। স্টাডি রুমের টেবিলে ওপর শুইয়ে খাশোগিকে জীবিত অবস্থায় কেটে টুকরো টুকরো করেন তুবাইগি। পুরো হত্যাকাণ্ডটি ঘটাতে সময় লেগেছে মাত্র সাত মিনিট।

তুবাইগি যখন খাশোগিকে কাটতে শুরু করেন তখন তিনি ইয়ারফোনে উচ্চস্বরে গান শুনছিলেন। এছাড়া এ সময় তিনি তার সহকর্মীদেরও গান শুনতে উৎসাহ দেন। ওই রেকর্ডে তুবাইগিকে বলতে শোনা গেছে, ‘যখন আমি এ কাজ করি তখন গান শুনি। আপনাদেরও এটা করা উচিত।’

তুর্কি সূত্রের বরাত দিয়ে আল জাজিরা শনিবার জানিয়েছে, জামাল খাশোগির লাশ উদ্ধারের চেষ্টা বাদ দিয়েছে তুর্কি পুলিশ। তবে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের অপরাধ তদন্ত অব্যাহত থাকবে। সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন