মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

জবাবদিহিতার অনুপস্থিতির কারণেই তারা মন্ত্রিসভায় থাকতে পারছেন

প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবদুল আউয়াল ঠাকুর
আদালতের জরিমানা কোনো দ- কিনা অথবা জরিমানা হলে তাকে অপরাধ বলে বিবেচনা করা যাবে কিনা সে প্রশ্ন হালে উঠে এসেছে সরকারের দুজন মন্ত্রীর প্রসঙ্গ ধরে। ওই আলোচনা অনেক বিস্তৃত এবং ইতোমধ্যেই নানাজনের কথায় তা উঠে এসেছে। দেশে-বিদেশে এর নানা নজিরও রয়েছে। এমনকি এদেশেও খুব কাছাকাছি সময়ের উদাহরণ রয়েছে। যেসব আলোচনা হয়েছে, হবে বা হতে পারে তার সবগুলোর ক্ষেত্রেই জবাবদিহিতার প্রসঙ্গ রয়েছে। বর্তমানে যে আলোচনা উঠেছে সেখানে মূলত জবাবদিহিতার প্রসঙ্গকে বিবেচনায় নিয়ে দেখলে একরকম হবে, আর সাদা চোখে দেখলে তার ভিন্ন অর্থ দাঁড়াতে পারে। যেভাবেই দেখা যাক না কেন, প্রকৃতপক্ষে দেখার বিষয়, জনস্বার্থ রক্ষিত, না লঙ্ঘিত হচ্ছে। এক্ষেত্রেও বড় প্রশ্ন জনস্বার্থের ব্যারোমিটার নিয়ে। আদালত অবমাননার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি বড় উদাহরণ রয়েছে ২০০৪ সালে। এ সময়ে আদালত অবমাননার দায়ে আইজিপি শহরূল হুদাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। হাইকোর্টের বিচারপতি শামছুদ্দিন মানিকের বেঞ্চ এই আদেশ দেয়ার পর সে বছরই ৭ ডিসেম্বর সুপ্রিমকোর্ট তা বহাল রাখেন। হাইকোর্টের ওই আদেশের পর শহরূল হুদাকে আইজিপি পদ ছাড়তে হয়েছিল। শুধু তাই নয়, তিনি একজন ভালো অফিসার হওয়ার কারণে নিজ যোগ্যতায় জাতিসংঘে চাকরি পাওয়ার পরও এ কারণে জাতিসংঘ তাকে নিয়োগ দান থেকে বিরত থেকেছিল। কাছাকাছি সময়ের অন্য উদাহরণটি হচ্ছে, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানী। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় তিনি আদালতের আদেশ পালনে অপারগ হওয়ার পরেও আদালত তাকে কয়েক সেকেন্ডের কারাদ- দিয়েছিলেন। আর সে সূত্র ধরেই তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। পাঠক নিশ্চয়ই খেয়াল করবেন, যে দুটি ঘটনার আমরা উল্লেখ করেছি দুটোই নির্বাচিত সরকারের আমলের। সে বিবেচনায় এটা বলা বোধহয় অনুচিত নয় যে, এক ধরনের জবাবদিহিতা বা দায়িত্ববোধ থেকেই হয়তো তা হয়ে থাকতে পারে। এর বাইরে নীতি-নৈতিকতার প্রশ্নও এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।
দুই মন্ত্রীর আদালত অবমাননার শুনানির একপর্যায়ে আপিল বিভাগ ‘শপথ লঙ্ঘনের শাস্তি কি’Ñ এ প্রশ্ন তুলেছিলেন। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় আইনমন্ত্রী দাবি করেছেন যে, দুই দ-িত মন্ত্রী শপথ ভঙ্গ করেননি। সংবিধান লঙ্ঘন হয়নি। এদিকে রায় প্রকাশের পর সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, সাংবিধানিক পদধারী ব্যক্তি শপথ ভঙ্গ করলে তারা ওই পদে বহাল থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেন। বর্তমান সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি বলেছেন, অনৈতিক কারণে সাজা হলে সংসদ সদস্যপদ বাতিল হওয়ার বিধান রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক প্রশ্ন তুলেছেন, সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক দ-িতরা কীভাবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বসেন? সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিদায়ী সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, নৈতিক কারণে শপথ ভঙ্গ হওয়ায় পদত্যাগ করা উচিত। এক্ষেত্রে মৌলিক প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল। অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেছেন, মন্ত্রিত্ব থাকবে কিনা মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেবে। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, মন্ত্রিত্ব থাকার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে। বাস্তবতা হলো, আলোচিত দুই মন্ত্রীই গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ সংক্রান্ত প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, আদালতের রায়ে শাস্তি পাওয়ার পরও মন্ত্রিত্ব ছাড়ছেন না দুই মন্ত্রী। বলা হয়েছে, আইন ও সংবিধানে তাদের মন্ত্রিত্বের জন্য কোনো বাধা না থাকায় সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। কথাগুলো যে এরকমই হবে সে ধারণা অনেকেই করেছিলেন। অতীত আলোচনা করলে সেটাই মনে হতে পারে। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের প্রধান আসামির শ্বশুর মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ ধরনের খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, নিকটাত্মীয় মন্ত্রী পদত্যাগ করতে পারেন। এমনকি শীর্ষ পর্যায় থেকে এরকম হয়েছিল বলেও খবর বেরিয়েছিল। বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টোটি। দেখা গেল, তিনি পদত্যাগ তো করেনইনি উপরন্তু লুঙ্গি পরে বিরোধীদের ঠেকাতে মাঠে নেমেছিলেন। অথচ এটা বারবার বলা হয়েছে, প্রভাবশালী আত্মীয়ের কারণে মামলা প্রভাবিত হতে পারে। বাস্তবে কী ঘটছে তা জনগণ প্রত্যক্ষ করছে। রাষ্ট্রের অর্থ চুরি হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। এমনকি কোষাগার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও হাজার হাজার কোটি টাকা গায়েব হয়ে গেছে। প্রথম দিকে যাই বলা হোক না কেন, এখন দিন দিনই পরিষ্কার হচ্ছে, কাজটা ভিতর থেকেই হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ফিলিপাইনের খবর যতটা স্থান করে নিচ্ছে দেশের খবরে ততটাই ভাটা পড়ছে। অর্থমন্ত্রী যাই বলুন না কেন, টাকা খোয়ানোর দায়িত্ব থেকে তিনি অব্যাহতি পেতে পারেন না। তিনি জানেন না বা তাকে জানানো হয়নি কার্যত এটা কোনো দায়িত্বশীল উক্তি নয়। তিনি কেন জানেননি বা জানতে পারেননি সেটাই বরং বড় প্রশ্ন। দেশের জনগণ জেনেছে ফিলিপাইনের মিডিয়া থেকে। যদি সেখানে খবরটি না বেরুত তাহলে জনগণ হয়তো জানতই না তাদের কষ্ট ও ঘামের টাকায় জুয়া খেলা হচ্ছে। যারা এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত তাদের কারা নিয়োগ দিয়েছে এ প্রশ্নও এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। দেশে গণতন্ত্র রক্ষা করতে গিয়ে সরকারি বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ থাকার পরেও বিএনপি চেয়ারপারসনসহ অন্যরা যদি সন্ত্রাসী মামলার আসামি হতে পারেন এবং এ জন্য যদি ওয়ারেন্ট ইস্যু হতে পারে তাহলে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকেই নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে যে হাজার হাজার কোটি টাকা গায়েব হয়েছে সেজন্য হুকুমদাতা বা দায়িত্বে ব্যর্থতা অথবা নিয়োগদানের জন্য সংশ্লিষ্টরা অভিযুক্ত হবেন না কেন? সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর হত্যাকা-ের দায় দায়িত্বশীলরা নেবেন না কেন? জনগণের জানমাল রক্ষা করা সাংবিধানিক দায়িত্ব। যখন সংবিধান রক্ষার শপথ তারা নিয়েছেন তখনই তো নাগরিকদের জানমালের সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, নাগরিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে। এমন কি দেখামাত্র গুলি করারও হুকুম দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে চাকরি না দেয়ার মতো সংবিধান ও মৌলিক অধিকারবিরোধী বক্তব্যও দেয়া হচ্ছে দায়িত্বশীলদের থেকে। এসব সংবিধানবিরোধী বক্তব্য দেয়ার জন্য কার্যত কেউ অভিযুক্ত হননি। আইনমন্ত্রী বলেছেন, ... শপথ ভঙ্গ করেননি। তাহলে শপথ ভঙ্গের বিষয়টি কীভাবে নির্ণিত হবে? শপথ ভঙ্গ না হলে শপথ লঙ্ঘনের প্রশ্ন উঠেছিল কেন? গভীর বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়, আলোচ্য ঘটনার পর কি জনসাধারণের কাছে এটা প্রতীয়মান হয়নি যে তারা অপরাধী? যদিও আলোচ্য একজন মন্ত্রী এর আগেও আলোচনায় উঠে এসেছিলেন পচা গম ক্রয় নিয়ে। তিনি এর আগেও যে মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন সেখানেও খুব দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন তা বোধহয় বলা যাবে না। তবে এ কথা ঠিক, তার খুঁটিতে জোর আছে। সরকারের ঘোষিত মুক্তিযুদ্ধে অবদানস্বরূপ বিদেশিদের দেয়া ক্রেস্ট জালিয়াতির খবরও প্রকাশিত হয়েছিল। এ জন্যও দায়িত্বশীলদের কোনো দায় নিতে দেখা যায়নি। কেন এবং কোথায় এদের জোর তা নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। এ আলোচনার ব্যতিক্রমও রয়েছে। নিজের প্রতি অবিচারের প্রতিবিধান করতে না পেরে মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় নিয়ে আমেরিকা চলে গিয়েছিলেন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের পুত্র। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণদের রোষে পড়ে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছিলেন একজন আলোচিত মন্ত্রী।
দৃশ্যমান আদালত অবমাননার বাইরেও গত কয়েক বছরে এ প্রসঙ্গ বেশ আলোচিত হয়ে আসছে। দেশের মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্টজনরাও গত কয়েক বছরে আদালত অবমাননায় দ- ভোগ করেছেন। এ নিয়ে নানা আলোচনা থাকলেও এটা বলা যায় দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কারাদ- ভোগ করেছেন। তিনি এখনো কারাগারেই রয়েছেন। অনেকে আবার নিঃশর্ত ক্ষমা প্রর্থনা করেছন। আদালত তা মেনে নিয়েছেন। আলোচ্য দুই মন্ত্রীর বেলায় আদালত তা করেননি। বরং প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, আদালত অবমাননার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি কঠোর মনোভাব প্রদর্শন করেছেন। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সারা জাতিকে বার্তা দেয়ার জন্যই আদালত অবমাননার মামলায় সরকারের দুই মন্ত্রীকে তলব করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ আর না হয়। এর আগে আলোচ্যরা আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। আদালত তা আমলে নেননি। প্রকৃত বিবেচনায় নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা অপরাধ স্বীকারেরই নামান্তর। এককজন দায়িত্বশীল নীতিনির্ধারকের এ ধরনের প্রবণতা কতটা গ্রহণযোগ্য, হয়তো বিদ্যমান বাস্তবতায় বলা কঠিন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমনকি ভারতেও রেল দুর্ঘটনাসহ নানা ঘটনায় দায়িত্ব নিয়ে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেয়ার নজির রয়েছে। ইরাক-আফগানিস্তানের আগ্রাসী যুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশকে দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের বিরুদ্ধে জনমত গঠিত হওয়ায় ব্রিটেনের সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার সময়ের আগেই নির্বাচন দিয়ে দিয়েছিলেন। যে প্রসঙ্গ নিয়ে আদালত অবমাননা পর্যন্ত গড়িয়েছে তা তো প্রতিদিনই দেশে নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে। দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন বর্তমান সময়ে নতুন কিছু নয়। কথায় বলে, কচুগাছ কাটতে কাটতে নাকি ডাকাত হয়। এখন অবশ্য ডাকাতদের নিয়ে আর কোনো আলোচনা হয় না। সেই পুরনো আমলের ডাকাত আর এখন নেই। ডাকাতির ধরন ও প্রকৃতি পাল্টিয়েছে। তাই ডাকাত বলতে আগে যাদের বোঝানো হতো এখন আর তাদের বোঝানো হয় না। কদিন আগের এক খবরে বলা হয়েছে, র‌্যাবের এক সোর্সকে মাদক ব্যবসায়ীরা ডেকে নিয়ে বলে-কয়ে হত্যা করেছে। দেশের চোর-ডাকাতরাও এখন বলে কয়েই চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই করছে। সে বিবেচনায় হয়তো এক সময়ের অনেক অপরাধকেই এখন আর অপরাধ বলে বিবেচনা করা হয় না। অবস্থা এমন যে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক হয়ে গেছে। সেজন্যই হয়তো প্রধান বিচারপতি একটি বার্তার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। তার এই বার্তাকে যদি ইতিবাচকতায় দেখতে হয় তাহলে অনেক প্রসঙ্গই হয়তো উঠে আসা সঙ্গত ও স্বাভাবিক। সে আলোচনাও বিস্তৃত। এটুকু বোধহয় বলা যায়, আদালত যাদের অভিযুক্ত করলেন তারা যদি বহাল তবিয়তেই থেকে যান তাহলে আদালতের বার্তার অর্থ কী দাঁড়াবে? এ কথাও বলা যায়, যেসব করার পর বলা হচ্ছে সংবিধান লঙ্ঘিত হয়নি সেসব করা যাবে তা কি সংবিধানে লিখিত রয়েছে? এমনও হতে পারে, সংবিধান যারা রচনা করেছেন তারা ধারণা করেননি যে শপথকারীরা এমনটা করতে পারেন। মানবাধিকার সংরক্ষণসহ অনেক মৌলিক বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ রয়েছে, যা সংশ্লিষ্টরা তামিল করছেন না। অথচ রাজপথে জনতার দুর্বার ঐক্যে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে দেয়া রায় যা অবসরে যাওয়ার পর লিখিত হয়েছে তার আংশিক কার্যকরণের নেতিবাচক ফল হিসেবে দেশে এখন চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান। ২০১৪ সালের যে অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সূত্র ধরে বর্তমানেরা ক্ষমতায়িত রয়েছেন তাও কার্যত এক ধরনের আদালতের দয়ার কারণেই। ওই নির্বাচন সংবিধান বর্ণিত উপায়ে অনুষ্ঠিত হয়নি, হতে পারেনি। নির্বাচনে অধিকাংশ আসনেই কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। অথচ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতাই সংবিধানের চাহিদা। আজ বোধহয় এটা ভাবার রয়েছে, সংকটের মূল হচ্ছে প্রকৃত জবাবদিহিতার অভাব, যার জন্ম হয়েছে ২০১৪ সালের অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।
সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক। আইন-সংবিধানের জটিল ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্টই দিয়ে থাকেন। ’৯১ সালের সংসদের শেষদিকে সংসদ টিকে থাকা না থাকা নিয়ে জটিল প্রশ্ন উঠেছিল। সে সরকার এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়েছিল। যথারীতি আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বস্তি উচ্ছেদ সংক্রান্ত উচ্চতর আদালতের রায় নিয়ে অনেক কেলেঙ্কারি হয়েছিল। এমনকি বস্তিবাসী উচ্চতর আদালতের সামনেই অবস্থান নিয়েছিল। বর্তমান সময়ে বেশ জোর গলায় অনেকেই বলে থাকেন বিচার বিভাগ স্বাধীন। আইনগতভাবে হয়তো তাই। উচ্চতর আদালতের রায়ের পরও যদি নির্বাহী বিভাগ মনে করে এটা কোনো ব্যাপার নয়, আর এটা যদি স্বাধীনতার সংজ্ঞা হয় তাহলে প্রকৃত পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বোধকরি তা লিখে বা বলে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। জবাবদিহিতা বিলুপ্ত হওয়ার কারণেই যে সংকট ঘনীভূত হয়েছে তা সবাই স্বীকার করছেন। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনার প্রতি সম্মান না দেখানো কার্যত জনগণের প্রতিই অসম্মান দেখানো। সংবিধান জনগণের জন্য। সাংবিধানিক সরকার মূলত জনগণের জন্যই। দায়বদ্ধতা না থাকার অর্থই হলো জনগণকে তোয়াক্কা না করা। সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, দেশে প্রকৃত জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনগণের ভোটাধিকারসহ মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাস্তব কর্মপন্থা গ্রহণ করা জরুরি।
awalthakur@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন