কোটা সংস্কার নিয়ে আলোচনা সমালোচনা ও দিক নির্দেশনা দিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে অনেকদিন ধরে লেখালেখি অব্যাহত আছে। বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশে লক্ষ লক্ষ বেকার রয়েছে, যাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই সীমিত। সরকারি চাকরি তো সোনার হরিণ। প্রতি বছর দেড় থেকে দু’লাখ শিক্ষিত যুবক চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে। একটি পদের বিপরীতে ১০০০ থেকে দেড় হাজার প্রার্থী আবেদন করছে। যাদের মামা, চাচার জোর আছে অথবা টাকার জোর আছে তারা চাকরি জোগাড় করতে সক্ষম হচ্ছে। আর যাদের ওসব নাই তারা চাকরির খোঁজে হণ্যে হয়ে ঘুরছে। চটি ক্ষয়ে নিঃশেষ হলেও সোনার হরিণের সাক্ষাৎ ঘটছে না। গরীব মা-বাবা ছেলেকে উচ্চ শিক্ষা দিয়ে একটু স্বাচ্ছন্দের আশা করতেই পারেন, কিন্তু তারা হতাশ হচ্ছেন। বাবা-মায়ের আশা পূরণ করা তো দূরে থাক, তারা নিজেরা উচ্চ শিক্ষা লাভ করে বাবা-মায়ের সংসারে বোঝায় পরিণত হচ্ছে। চাকরির অভাবে বেকার যুবকদের হা-হুতাশ কান পাতলেই শোনা যায়। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আ.লীগের নির্বাচনী ঈশতেহারে প্রলুব্ধ হয়ে লক্ষ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী বেকার যুবক তাকে সমর্থন দিয়েছিলে। আ.লীগ ক্ষমতায় এসে ঘরে ঘরে চাকরি দেবার কথা বেমালুম ভুলে যায়। চাকরি প্রার্থীদের মোহভঙ্গ হয়। তারা আ.লীগের ধাপ্পাবাজিতে আর প্রলুব্ধ না হয়ে সরকারের কর্মকান্ডের সমালোচনা শুরু করে। আ.লীগ ভালো করে অনুধাবন করে আর চাতুর্যের আশ্রয় নিয়ে পার পাওয়া যাবে না। তারা কৌশল পরিবর্তন করে বিনাভোটে নির্বাচনের আয়োজন করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তামাশাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে এদেশের গণমানুষের আশা-আকাংখা পদদলিত করে বিশ^বাসীর নিকট বাংলাদেশের মানমর্যাদা ভুলুণ্ঠিত করে।
যাহোক, আমার আজকের আলোচনা কোটা পদ্ধতি সংস্কার নিয়ে। কোটা ৫৬% থাকায় এদেশের লক্ষ লক্ষ বেকার কর্মপ্রার্থী রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে। তাদের দাবি হলো কোটার কারণে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। সরকার হাইকোর্টের রায়ের কারণ দেখিয়ে বলছে যে, চাকরির মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কার সম্ভব নয়। যে রায়ের কথা বলা হচ্ছে তা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, রায় নয়। রায় ও পর্যবেক্ষণ নিশ্চয় এক নয়। রায় মানতে সরকার বাধ্য হলেও পর্যবেক্ষণ মানতে বাধ্য নয়। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ না মানার বহু উদাহরণ বাংলাদেশে আছে। যে রায়ের কথা বলা হচ্ছে সেটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স নিয়ে ও তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা বা কোটা সংরক্ষণ নিয়ে নয়। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘বিচার্য বিষয়ের জড়িত অনেক পর্যবেক্ষণ সরকার মানে না। এর একটি হলো রিমান্ড ও গ্রেফতার সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণে অনেক কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, কিন্তু সেগুলো গত কয়েক বছরে সেভাবে মানা হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০% সংরক্ষিত থাকলেও প্রার্থী পাওয়া না গেলে কী হবে, সে ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বলেছেন আসন ফাঁকা থাকবে। এ রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করলে সুপ্রিম কোর্ট শূন্য আসন মেধার ভিত্তিতে বণ্টনের আদেশ দেন। আমরা জানি ১১ এপ্রিল আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। ছাত্রছাত্রীরা অবশ্য বাতিল চায়নি। তারা কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ^াসে আন্দোলন স্থগিত করে। কিন্তু অবাক বিস্ময়ে দেশবাসী লক্ষ করল কোটা সংস্কারের কোন অগ্রগতি নাই। এমনকি কোন কমিটি পর্যন্ত গঠন করা হলো না। তাদের দাবি ভর্তি, চাকরিতে নিয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে কোটা সংস্কার। তারা পত্রিকায় লিখে, সংবাদ সম্মেলন করে, মানব বন্ধন করে, সভা সমাবেশ করে দাবি জানাচ্ছে। তারা তো কোটা বাতিলের দাবি করেনি। প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ করে কোটা তুলে দেবার ঘোষণা দেন, যা কেউ চায়নি। সকলে চেয়েছে একটি যৌক্তিক সংস্কার। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ গঠন করে তারা এ বছরের শুরু থেকে কোটা সংস্কার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। জুন মাসের শেষ সপ্তাহে তারা শাহবাগে অবস্থান নিয়ে ঘোষণা দেয়, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’ তাদের দাবির যৌক্তিকতা অনুধাবন করে শিক্ষক, অভিভাবক সকলে তাদের সমর্থন যোগায়। শুধু সরকারি দলের নেতাকর্মীরা তাদের দাবির মধ্যে অন্যায্যতা আবিষ্কার করে শক্তি প্রয়োগে আন্দোলন দমনে অগ্রসর হন। সরকার পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে আন্দোলন দমন করতে আগ্রহী। তার সাথে ছাত্রলীগ নামক ছাত্র সংগঠনের অবুঝ কোমলমতি যুবকদের মাঠে নামিয়ে দেয়। তারা ছাত্রদের পিটিয়ে, ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করে আন্দোলন দমনে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করে। তাদের মধ্যে অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। অথচ, আন্দোলন দমনে লাঠিয়াল বাহিনীর ভ‚মিকা পালন করে তারা সাধারণ ছাত্রছাত্রীর সাথে দেশবাসীর অপছন্দের পাত্রে পরিণত হচ্ছে একথা বোঝার ক্ষমতা যেন তারা হারিয়ে ফেলেছে। যেকোন আন্দোলন মোকাবেলা করার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হলো অংশীদের সাথে সংলাপে বসা। আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান সহজেই করা যায়। এমনিতেই সরকারের নানাবিধ দোষ মানুষ আবিষ্কার করছে, তার ওপর সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা-ভাবনার বদলে তাদের ওপর আক্রমণ করে সরকার তাদের প্রতিপক্ষ বানাচ্ছে যা খুবই অমানবিক, নিষ্ঠুর, হৃদয়বিদারী ও অযৌক্তিক। ছাত্র-ছাত্রীরা আমাদের ভবিষ্যৎ। এসব ভবিষ্যৎ বংশধরদের আমরা কাজ দিতে পারছি না। সীমিত সংখ্যক চাকরি সুবিধা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেবার নিশ্চয়তা পেলে তারা শিক্ষা লাভে উৎসাহিত হবে। দেশে শিক্ষার মান আশংকাজনকভাবে কমে গেছে। মেধাবীদের নিরুৎসাহিত করলে শিক্ষার মান বলে কিছু থাকবে না। বিশ^বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষকরা বিদেশমুখী হয়ে পড়ছেন। ভবিষ্যৎ বংশধরদের ওপর এভাবে আক্রমণ হলে তারা নিরুৎসাহিত হবে ও সুযোগ পেলে বিদেশে পাড়ি দেবে। বিশ^বিদ্যালয় অস্থির হয়ে উঠছে। শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রায় চার মাস ধরে চলছে। সরকার তাদের দাবি-দাওয়ার প্রতি সংবেদনশীল হয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে অগ্রসর হবে এটি বাঞ্ছিত ও কাক্সিক্ষত। সরকার তা না করে ছাত্রলীগের ছেলেদের দিয়ে আন্দোলনকারীদের মারধর, নিপীড়ন, হলে হলে নেতাদের টহল ও ভয়ভীতি প্রদর্শন অনাকাক্সিক্ষত ও নিন্দনীয়। ভিসির বাসভবনে সুযোগ পেয়ে সন্ত্রাসী হামলা পরিবেশকে বিষিয়ে তুলেছে। ঢাকা ও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে আন্দোলন বেশ জোরদার হয়েছে। এ দু’ বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ছেলেরা আন্দোলন দমনের দায়িত্ব পালন করছে। তাদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে প্রশাসন নিশ্চিন্তে তামাশা দেখছে। ছাত্রলীগের ছেলেরা এ দুই বিশ^বিদ্যালয়ে আন্দোলকারীদের পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙ্গে পঙ্গু করে দিচ্ছে। সারাদেশে নিন্দার ঝড় বইলেও বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বিকার নির্লিপ্তে বসে আছে। ঢাকা ও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যদ্বয় আন্দোলনকারীদের মধ্যে শিবির, বিএনপির ভ‚ত আবিষ্কার করছেন। ড. আকতারুজ্জামান আন্দোলনকারীদের জঙ্গী হিসাবে শনাক্ত করছেন, যা অতীব নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। আন্দোলনকারীরা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী। তাদের সাথে কোন রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে কেউ বলছেন না। বরং সকলের কথা হলো, তারা পেটের দায়ে, ভবিষ্যৎ জীবনে কিছু নিশ্চয়তা লাভের আশায় আন্দোলন করছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য শুধু জঙ্গী শনাক্তকরণে থেমে নাই। তিনি এ আন্দোলনের সাথে জঙ্গী যোগসূত্র আছে বলে দাবি করেছেন। ভিসি একটা বিশ^বিদ্যালয়ের সকল ছাত্রছাত্রীর অভিভাবক। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সে ছেলেমেয়েদের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করা দায়িত্বহীনতা বলা যায়। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রক্টর সাহেব যখন বলেন, তিনি হামলার কথা শোনেননি তখন সত্যিই অবাক হতে হয়, মনে হয় ধরিত্রী দ্বিধা হও। শিক্ষকরা তাদেক বাঁচাতে এগিয়ে গেছেন, তাদের সমর্থনে মিছিল করেছেন, যা প্রশংসার যোগ্য। আমরা শিক্ষক, সেই হিসাবে আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। অথচ একই পরিবারের সদস্য হিসাবে ভিসি ও প্রক্টর সাহেব না জানার ভান করে দায়িত্ব এড়ানোর প্রচেষ্টা চালান। কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়া আক্রান্তদের জঙ্গীর সাথে তুলনা করে ভিসি সাহেব নিন্দনীয় কাজ করেছেন।
ভিসির বাসভবনে হামলার অজুহাতে প্রায় ডজন খানেক আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে অনেককে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। রিমান্ড ও গ্রেফতার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট হাইকোটর্টের নির্দেশনা থাকা সত্তে¡ও এসব আন্দোলনকারীকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। অনেকের হাড়গোড় ভেঙ্গে দেয়া হলেও তাদের নিস্তার নাই। আক্রমণকারীরা নির্বিঘেœ গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়ালেও তাদের টিকি পর্যন্ত স্পর্শ করা হচ্ছে না। অথচ আক্রান্তদের চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিয়ে বিদায় করছে। ৫ দিন ১০ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে আন্দোলকারী নেতাদের কাছে কী স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে বোধগম্য নয়। তারা চুরি, ডাকাতি বা খুন জখমের সাথে জড়িত নয়। বরং আন্দোলন করার জন্য তাদের উপর যে অমানবিক ও লোমহর্ষক অত্যাচার করা হয়েছে তার তদন্ত হওয়া আবশ্যক। ঢাবি ভিসির বাড়ি যারা আক্রমণ করেছে তারা খুবই অন্যায় ও গর্হিতকাজ করেছে। এরূপ নিন্দনীয় কাজ যারা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। কারা করেছে নিরপেক্ষ তদন্ত করে বের করা কঠিন কাজ নয়। সদিচ্ছা নিয়ে অগ্রসর হলে অপরাধী শনাক্তকরণে অসুবিধা হবার কথা নয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্ত করা যেতে পারে। তাছাড়া নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি দিয়ে ভিসির বাসার ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের বিষয়টি সুরাহা করা দরকার। নীরিহ আন্দোলনকারী নেতাদের ওপর জুলুম বন্ধ করে নিরপেক্ষ তদন্তের আহবান জানাচ্ছি। নিরপেক্ষ তদন্তে যারা দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে কেউ আপত্তি করবেন না। রাবি ছাত্র তরিকুলকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে যারা হাড়গোড় ভেঙ্গে দিয়েছে, তাদের ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। তাদের নাম-ধামসহ প্রশাসনের নিকট তালিকা দেয়া আছে। কিন্তু প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিয়েছে বা নিতে যাচ্ছে কিছুই জানা যাচ্ছে না। ছাত্রলীগ নামধারী দুবৃত্তদের কর্মকন্ডে মানুষ ত্যাক্ত, বিরক্ত সারাদেশের মানুষের সাথে বিদেশিরাও নিন্দা জানাচ্ছে। ঢাবি ইমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকে দুঃখজনক, লজ্জাজনক এবং অবিশ^াস্য বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, এরকম ঘটনা ঘটবে আমরা কখনো ভাবিনি। এটা পাকিস্তান আমলে ঘটেনি, এমন কি ব্রিটিশ আমলেও ঘটেনি। প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম খুবই স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানুষ। বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভাÐারে সমৃদ্ধ, তার কথা খুবই মূল্যবান। পাকিস্তানি আমল বা ব্রিটিশ আমলে আমরা ছিলাম নিজ দেশে পরবাসী। পাকিস্তান আমলে নামকাওয়াস্তে গণতন্ত্র ছিল। অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার, নির্যাতন ও মানবাধিকার লুণ্ঠনকারী শাসকরা পর্যন্ত এরূপ ন্যাক্কারজনক ও হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটাতে সাহস পায়নি। ব্রিটিশ আমলের কথা নাই বা বললাম। পরদেশি শাসক আমাদের চাওয়া-পাওয়া, প্রত্যাশা-প্রাপ্তি, অধিকার, মর্যাদা কোনকিছুই বিবেচনা করেনি। তারা পর্যন্ত এরকম নিষ্ঠুর, নির্মম, অমানবিক ও নিন্দনীয় ঘটনা ঘটায়নি। অথচ স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশের সরকার ছাত্রলীগকে দিয়ে তাদের সহপাঠিদের পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙ্গে দিয়ে উল্লাস করছে। আমরা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দোষীদের অচিরে আইনের আওতায় এনে সুবিচারের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি। তাদেরকে যদি বিনাবিচারে ছেড়ে দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে অন্যান্য ছাত্র সংগঠন উৎসাহিত হবে। সুযোগ পেলে তারাও এসব অপকর্মে জড়িয়ে পড়বে।
ছাত্রলীগের ছেলেরা প্রশাসনের প্রশ্রয় পেয়ে ইতোমধ্যে ঢাবি শিক্ষকদের আক্রমণ করে বসেছে। তারা শিক্ষককে ধাক্কা দেয়া, লাঞ্ছিত করা প্রভৃতি অপকর্ম করে বসেছে যা জাতির জন্য কলঙ্কজনক ও লজ্জাজনক। শিক্ষকদের ওপর আক্রমণ যারা করতে পারে তাদের নিকট কোনকিছুই অসাধ্য নয়। সরকার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের ভ‚ত দেখছে যা দেশের কেউ বিশ^াস করে না। তাদের দাবির যৌক্তিকতা রয়েছে। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণের দোহাই দিয়ে সংস্কার কর্ম বন্ধ করা উচিত হবে না। ৩০% কোটা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের জন্য (ঈযরষফৎবহ) । চিলড্রেন অর্থ সন্তান-সন্ততি। চিলড্রেন অর্থ সন্তানরা, ছেলেমেয়ে, ছেলেপুলে ইত্যাদি। এর অর্থ কিছুতেই নাতি-নাতনী নয়। অথচ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনী পর্যন্ত কোটা বিস্তৃত করেছে। এক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায়ের প্রয়োজন হচ্ছে না। রায়কে সুবিধামত প্রয়োগ ও ব্যবহারকারীকে ঊীঢ়বফরবহঃ (যখন যেমন তখন তেমন) ভাবা হয়। কৌশলী মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টানো দরকার। দাবি বাস্তবায়নে একটি সচিব কমিটি হয়েছে। কমিটির মেয়াদ আরও ৯০ দিন বাড়ানো হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের কথা বলে কোটা সংস্কারে অপারগতা প্রকাশ যৌক্তিক মনে হয় না। কোটা সংস্কার করলে মেধাবীদের উৎসাহিত করা হবে। তাদের মধ্যে যে মামলা-হামলা ও আক্রমণ ভীতি বর্তমান তার অবসান হওয়া দরকার। আন্দোলনকারী অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। অনেককে ধরে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তারা কোন অপকর্ম করেছে এর প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি। তাদের মুক্তির দাবিতে ঢাবির বেশ কটি বিভাগে ক্লাশে পরীক্ষা বন্ধ আছে। বিশ^বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক ও সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনকারী নেতাদের মুক্তি দিয়ে আলোচনা শুরু করা দরকার। সচিব কমিটি এসব নেতাদের ডেকে নিয়ে আলোচনা করতে পারে। আলোচনা না করে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করার নীতি পরিত্যাজ্য। যারা ছাত্রদের পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দিল ও ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করল তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সুশাসন ও আইনের শাসনের জন্য আক্রমণকারীদের শাস্তি পাওয়া উচিত। নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষকবৃন্দের পদযাত্রা শেষে এক বক্তৃতায় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী অত্যন্ত মূল্যবান ও দায়িত্বশীল বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত। ৫৬% কোটা অত্যন্ত অসঙ্গত ও অন্যায়।’ আমরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত সমাধান দাবি করছি।
লেখক: প্রফেসর (অব.), দর্শন বিভাগ ও সাবেক ডিন, কলা অনুষদ, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন