মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উপ সম্পাদকীয়

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলা : ছাত্রদের আন্দোলন ভিন্ন রূপ নিচ্ছে

মোবায়েদুর রহমান | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

কোন দিকে যাচ্ছে দেশ? কোন দিকে মোড় নিচ্ছে আন্দোলন? গত শনি এবং রবিবার দেশে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যেগুলো দেখে বা শুনে মনে হচ্ছে যে, কোথায় যেন একটা বিরাট ভুল হতে যাচ্ছে। কোথায় সে ভুলটি? কি ধরনের সেই ভুল?
শনিবার রাতে অর্থাৎ ৪ অগাস্ট রাতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের গাড়িতে হামলা হয়েছে। এক শ্রেণির নিউজ পোর্টালে যখন খবরটি প্রকাশিত হয় তখন অনেকেই এটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রবিবার অপরাহ্নে মার্কিন দূতাবাস থেকেই এসম্পর্কে একটি প্রেস রিলিজ ইস্যু করা হয়। মার্কিন দূতাবাসের ঐ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িতে একদল সশস্ত্র লোক হামলা করেছে। মোটর সাইকেল আরোহীসহ একদল সশস্ত্র লোক শনিবার, আগস্ট ৪ ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে বহনকারী দূতাবাসের একটি গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। রাষ্ট্রদূত ও তাঁর নিরাপত্তায় নিয়োজিত দল অক্ষত অবস্থায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। হামলায় রাষ্ট্রদূত, তাঁর গাড়িচালক ও নিরাপত্তা স্টাফদের কোন ক্ষতি হয়নি। তবে রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা দলের দুটি গাড়ির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।
আমেরিকা বাংলাদেশের পাকা ধানে মই দেয় নাই। আজও আমেরিকা বাংলাদেশের গার্মেন্টসের শ্রেষ্ঠ ডেস্টিনেশন। বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য এবং প্রভাবশালী এই দেশটি যদি বিগড়ে যায় তাহলে বাংলাদেশের সমূহ ক্ষতি হবে। সেই ক্ষতি হবে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উভয়ই। বার্নিকাটের ওপর হামলাকে সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে এবং দোষী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদেরকে যত দ্রুত সম্ভব শাস্তি দিতে হবে। তবে এটি পেশাদার ক্রিমিনালদের কাজ বলে মনে হয় না। মনে হয় এর পেছনে কোনো গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। কী সেই উদ্দেশ্য? সেটিও খুঁজে বের করতে হবে এবং দেশবাসীকে জানাতে হবে। এখন ফিরে যাচ্ছি সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের দিকে।
দুই
ছাত্র আন্দোলন অবশেষে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটি ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। যখন এই কলামটি লিখছি তখন রবিবার। শিশু কিশোররা নিরাপদ সড়কের দাবি করে যে আন্দোলন শুরু করেছিল আজ রবিবার সেটির অষ্টম দিন। গত বৃহস্পতিবার থেকেই কিশোর-তরুণদের এই আন্দোলন কিছুটা ভিন্ন মোড় নিচ্ছিলো। বৃহস্পতিবার সর্ব প্রথম ছাত্রদের ওপর জিগাতলায় হামলা হয়। বৃহস্পতিবার থেকেই দুই জন মন্ত্রী এবং পুলিশ ও র‌্যাব ভিন্ন টোনে কথা বলতে শুরু করে। বৃহস্পতিবারই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এই আন্দোলনে বিরোধী দলের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আরোপ করেন। এসব দেখে-শুনে মনে হচ্ছিলো যে, রবিবার আন্দোলনে একটি টার্নিং পয়েন্ট দেখা যেতেও পারে। বাস্তবে হলোও তাই।
গত শনিবার এই মর্মে খবর প্রচারিত হলো যে, বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী কুমিল্লার কোনো এক যুবকের সাথে মোবাইল ফোনে আন্দোলনের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। ঢাকার আন্দোলনে নামানোর জন্য কুমিল্লার ঐ ছেলেটিকে নাকি ৪০০/৫০০ লোক ঢাকায় আনতে বলেছেন। শনিবার দিনই ছাত্রলীগের চট্টগ্রামের এক নেতা আমির খসরু এবং ঐ যুবকটির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধের মামলা করে। সন্ধ্যার মধ্যেই কুমিল্লার সেই লোকটিকে গ্রেফতার করা হয়। তখনই ধারণা করা হয় যে, আমির খসরুকেও গ্রেফতার করা হবে। আমির খসরুর বাসায় পুলিশ হানা দিয়েছিলো কিন্তু তাকে পায়নি।
রবিবারে সকাল ৯টা ১০টার দিকে ভেবেছিলাম যে, আন্দোলন সম্ভবত আজ অর্থাৎ রবিবার শেষ হতে যাচ্ছে। কারণ সকাল বেলা একাধিক জায়গা থেকে খবর পেলাম, ঐ সব কোমলমতি ছাত্র রবিবার রাস্তায় নামেনি। ভেবেছিলাম এবং অনেককে বলেছিও যে ওদের ঐ আন্দোলন শেষ। কিন্তু বেলা ১১টার পর থেকেই পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। আগের দিন অর্থাৎ শনিবার ছাত্রলীগ ছাত্রদের সমাবেশে হামলা করেছে বলে পত্র পত্রিকায় প্রকাশ পায়। পরদিন অর্থাৎ রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি বিরাট মিছিল জিগাতলা আওয়ামী লীগ অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। মিছিলটি আওয়ামী লীগ অফিস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি।
হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ওপর পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জিগাতলা এলাকা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আজ রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়। মিছিলে স্কুলের ইউনিফর্ম পরা কিছু শিক্ষার্থীকেও দেখা গেছে। তবে তাদের চেয়ে বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই ছিল বেশি। এর মধ্যে বেশির ভাগই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।
ধানমন্ডিতে শিক্ষার্থীদের মিছিলে হেলমেট পরে ও লাঠি হাতে হামলা চালায় কিছু যুবক। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী আহত হয়। বার্তা সংস্থা এপির ফটোসাংবাদিক এম এন আহাদ আহত হন। তাঁকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
বেলা একটার দিকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান তুলে জিগাতলার দিকে মিছিল নিয়ে যায়। ওই সময় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকে অবস্থান নেওয়া পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা শুরু করে। মোট ২৫টি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। রবিবার ধানমন্ডি, সাইন্সল্যাব, জিগাতলা, প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন এলাকায় শান্তিপূর্ণ অবস্থায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সকাল থেকেই বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অবস্থান আগের দিনগুলোর মতো ছিলো না। তবে শাহবাগে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলো। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে জড়ো হয়। তবে অন্যদিনের মতো শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্মে দেখা যায়নি।
এদিকে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে রূপসী বাংলা হোটেলের দিকে ব্যারিকেড বসায় পুলিশ। মোট কথা রবিবার এই আন্দোলন থেকে শিশু এবং তরুণরা সরে যায় এবং তাদের স্থানে আসে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। এর আগে পর্যন্ত পুলিশ অ্যাকশনে যায়নি। কিন্তু রবিবার পুলিশ অ্যাকশনে গেছে, তাদের সাথে ছিল পানি কামান। এবং অতীতের মতই সহযোগী হিসাবে লাঠিসোঁটা ধারী ছাত্রলীগ। পুলিশ অন্তত ২৫টি টিয়ার গ্যাস সেল মেরেছে এবং পথচারীদের বক্তব্য অনুযায়ী গুলির শব্দ শোনা গেছে।
তিন
এই আন্দোলনটি যে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক রূপ নিচ্ছে এবং শান্তশিষ্ট, নিরীহ আন্দোলন থেকে একটি শক্ত আন্দোলনের দিকে ধাবিত হচ্ছে সেটি বুঝতে আর কোন অসুবিধা হচ্ছে না। উত্তরার একাধিক বাসিন্দা টেলিফোনে জানান যে, উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এবং অন্যান্য স্থানে রবিবারে যত বিশাল মিছিল হয়েছে তেমন বিশাল মিছিল এই উত্তরায় অতীতে আর কখনো দেখা যায়নি। শাহবাগ মোড় এ পর্যন্ত ইমরান সরকার তথা আওয়ামী ঘরানার দখলে ছিলো। কিন্তু রবিবার সেটি আন্দোলনকারী, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দখলে চলে যায়। সাইন্স ল্যাবরেটরিতেও ছাত্ররা অনেকটা সমাবেশের মতো করে। অন্য কথায় ছাত্রদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এখন একটি ভিন্ন রূপ গ্রহণ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার বলেছেন যে, এই আন্দোলনে তৃতীয় শক্তি ঢুকে গেছে। তারা নাকি সব রকম নোংরা কাজ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর রবিবারের ভিডিও কনফারেন্সে প্রয়োজনে বল প্রয়োগের হুমকি রয়েছে।
চার
এই আন্দোলন দমনের জন্যে সরকার সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু ছাত্ররা সেটি মানেনি। বরং সরকারের এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে তারা রাস্তায় উপচে পড়েছিল। এসব পুরানা কথা। তারপরেও ঘটনার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য এসব কথা বলতেই হচ্ছে। যেদিন ছাত্ররা সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে রাস্তায় নামে সেদিন ছাত্ররা ছাড়াও ছাত্রদের পিতা এবং মাতারা প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে তাদের সাথে রাস্তায় নামেন। আমি নিজে দেখেছি, ছাত্রদের বহু মা তাদের সন্তানদের লাঞ্চ খাওয়ানোর জন্যে টিফিন বক্স নিয়ে আসেন এবং সেই সুযোগে তাদের সাথে কিছুক্ষণ থাকেন। আমি অনেক পিতাকে দেখেছি, যারা তাদের আন্দোলনরত সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে রাস্তার ফুটপাতে ঘোরাফেরা করেন এবং একটু ফাঁক পেলেই তাদের সন্তানদের সাথে কথা বলেন। ধানমন্ডির বড় রাস্তা অর্থাৎ মিরপুর রোডে আমার সাথে বেশ কয়েকজন অভিভাবকের কথা হলো। তারা বললেন, তাদেরও প্রবল ইচ্ছা, রাস্তায় নেমে ঊর্ধ্বাকাশে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে বাচ্চাদের সাথে স্লোগান ধরেন।
গত কয়েকদিন ধরে রাস্তাঘাটে আমি যা দেখেছি তাতে আমি বাকহারা। মিরপুর রোডের সাইন্স ল্যাব থেকে শুরু করে মিরপুরের হার্ট ফাউন্ডেশন পর্যন্ত আমি সপরিবারে ঘুরেছি। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা যেতে হলে একই টাইপের ট্রান্সপোর্ট নিয়ে যাওয়া যায়নি। কোনো একটি দূরুত্ব অতিক্রম করার জন্য কিছুটা রাস্তা প্রাইভেট কারে, কিছুটা রাস্তা রিক্সায়, আবার কিছুটা রাস্তা সিএনজি অটোরিক্সায়। ঢাকা মহানগরীতে ঘোরাফেরা করে আমি যে দৃশ্য দেখেছি সেগুলো দেখে দুইটি কারণে আমি বাকরুদ্ধ। একটি হলো, এতগুলো বছর হয়ে গেল, আমার ভাবনাতেও কোনোদিন আসেনি যে, মন্ত্রী, সচিব, মহাপরিচালক, উপ মহাপরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় এসব জায়গার বড় কর্তাদের সরকারি গাড়ির ড্রাইভারের লাইসেন্স থাকবে না। ছাত্ররা যখন ঐ সব গাড়ি আটকে প্রমাণসহ দেখিয়ে দিল যে, ওরা লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাচ্ছে তখন বিশ্বাস না করে কোনো উপায় নাই। তাই আমি বাক্যহারা। আসলে কত বছর ধরে লাইসেন্স ছাড়া ওরা গাড়ি চালাচ্ছে?
বাক্যহারা আর একটি কারণে। সেটি হলো, ১২ থেকে ১৭ বছরের বাচ্চারা ট্রাফিক পুলিশের কাজ করছে। হাজার হাজার লাখ লাখ ছাত্র রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু যারা নিয়ম ভাঙছে তাদের কাউকেই ওরা গালমন্দ করছে না। যারা নিয়ম ভাঙছে, তাদের গাড়ি ওরা ভাঙছে না। নিয়ম ভঙ্গকারীদের গাড়ির নামে পুলিশকে মামলা নিতে ওরা বাধ্য করছে। রাস্তা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স জরুরি কাজে ব্যবহৃত হয়। ছাত্ররা সেখানে বাধা দিচ্ছে না। ওরা বরং ভিড় ঠেলে অ্যাম্বুলেন্সকে দ্রুত গতিতে যাওয়ার পথ করে দিচ্ছে। বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়ে এসব আইন-কানুন শিখলো কোথায়? কবে শিখলো? কোনোরূপ উচ্ছৃঙ্খলতা নয়, কোনো রূপ দম্ভ নয়, ঠান্ডা মাথায় ওরা ওদের কাজ করে যাচ্ছে। অগাস্ট মাসের ১ তারিখ থেকে পত্রপত্রিকা ঘাঁটুন। দেখবেন শত শত হাজার হাজার নিয়ম ভঙ্গের ঘটনা। সারাদেশেই চলছে নৈরাজ্য। ছাত্ররা রাস্তায় নেমে পরিবহন খাত এবং সড়ক খাতে এসব অনাচার এবং অনিয়ম চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
এসবের পর কী করবেন সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের? কী করবেন শ্রমিক নেতা এবং নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান? এখনও কণ্ঠ সপ্তমে তুলে কথা বলছেন ওবায়দুল কাদের। এই সরকারের অনেক মন্ত্রী-শান্ত্রিই অনেক ব্যাপারে ভারতের উদাহরণ টানেন। তো ভারতের উদাহরণ টেনে এরা এই ৭ দিনে পদত্যাগ করলেন না কেন? ভারতের উদাহরণ কি তারা ভুলে গেছেন? অনেক দিন আগের কথা। তখন ভারত সরকারের রেলমন্ত্রী ছিলেন একজন ছোট্টখাট্টো মানুষ। নাম তার লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। ভারতের কোনো এক স্থানে একটি বড় রেল দুর্ঘটনা ঘটে এবং বেশ কয়েকজন যাত্রী মারা যান। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করেন। তিনি বলেন যে, রেল বিভাগের মন্ত্রী হিসাবে তিনি এই ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন না। তাই তিনি পদত্যাগ করছেন। আমাদের দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে কী হতো? মন্ত্রী বলতেন, আমি পদত্যাগ করবো কেন? আমি কি ড্রাইভার? নাকি পয়েন্টস ম্যান? নাকি আমি রেলের ডিজি? সেই কথাটি কিন্তু লাল বাহাদুর শাস্ত্রীও বলতে পারতেন। কিন্তু তিনি বলেননি। সমগ্র ভারতের রেল বিভাগরে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসাবে তিনি সব দায়দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে নিয়েছিলেন। অবশ্য ভারতীয় জনগণ লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে তার এই সাধুতার জন্য যোগ্য পুরস্কার দিয়েছিলেন। তিনি এর কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
পাঁচ
অবশ্য এসব কথা বলে কোনো লাভ নাই। যখন দুই দুইটি তরতাজা শিশুকে বাসটির ড্রাইভার চাপা দিয়ে হত্যা করে তখন শ্রমিক নেতা শাহজাহান খান বলেন, তিনি কেন পদত্যাগ করবেন? তিনি কি গাড়ির মালিক? তিনি কি গাড়ির ড্রাইভার? নাকি তিনি ঐ বাসটির হেলপার? শাহজাহান খানের এই ধরনের কথা শুনে মানুষ হতবাক। এই ধরনের একটি মানুষের পক্ষ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কীভাবে বলেন যে, শাহজাহান খানকে কি মাফ করা যায় না? জল জ্যান্ত দুটি শিশুকে হত্যা করা হলো, একটি ছেলেকে দুর্ঘটনার নামে হত্যা করে তাকে চলন্ত বাস থেকে ব্রিজের নীচে নদীর পানিতে নিক্ষেপ করা হলো, আর একজন ছাত্রীকে ধর্ষণ করে তাকে মেরে ফেলে দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হলো। এত বড় গুরুতর অপরাধীদের কীভাবে ক্ষমা করা যায়?
সেই আন্দোলন এখন অন্যদিকে টার্ন করছে। চূড়ান্ত পরিণামে এটি কোথায় গড়ায় সেটি দেখার জন্য আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
জামান ৭ আগস্ট, ২০১৮, ১২:৩৫ পিএম says : 0
দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন