উৎপাদন পর্যায়ে বেগুন, শিম, ফুলকপি ও শাকের জমিতে কৃষকরা সহনীয় মাত্রার চেয়ে অবাধে অনেকগুণ বেশি বিষাক্ত কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। ফলে সাধারণ মানুষ তাদের অজ্ঞাতসারেই বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। শাকসবজিসহ বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুমিল্লার চান্দিনা ও বুড়িচংয়ের সর্বত্র সবজি বাগানে বিভিন্ন রাসায়নিক কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে।
কীটনাশকের মধ্যে রিনকর্ড, সিমবুন, সুমিসাইডিন, হেপ্টাক্লোর, থায়াডিন, ডিডিটি ইত্যাদি বেশি বিপজ্জনক। এছাড়াও নগস, সুমিথিয়ন, ডাইমেক্রন, ম্যালালাথিয়ন, অ্যারোমাল ইত্যাদি। এসব কীটনাশক প্রয়োগের পর অপেক্ষামানকাল কোনোটির ৩ দিন, কোনোটির ৭ দিন, কোনোটির ২১ দিন এমনকি ৬ মাস পর্যন্ত হতে পারে। অথচ কৃষকরা সব বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে কীটনাশক প্রয়োগের দুয়েক দিন না যেতেই সেগুলো বিক্রি শুরু করে দেয়। এতে ভোক্তারা বাজারে পাচ্ছে বিষাক্ত শাকসবজি। কাঁচাবাজারে সর্বাধিক চাহিদা থাকে অসময়ের শাকসবজির। যখন যার সময় নয়, তখনই ফলানো হচ্ছে সেই শাকসবজি। এগুলোর দামও আকাশছোঁয়া। অনেকেই জানেন না কোনটি কোন ঋতুর ফসল। বারো মাসের সবজি হয়ে দাঁড়িয়েছে টমেটো। বৈজ্ঞানিক কায়দায় অন্য ঋতুর টমেটো ফুলে কেমিক্যাল প্রো (ফোর সিপিএ) করা হলে পুরুষ ও স্ত্রী রেণুর পরিণতি একই সঙ্গে ঘটে। ফলে বছরের যে কোনো সময় টমেটো উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু অসময়ের টমেটোর জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা ও ভোক্তার হাতে পৌঁছে দেয়ার প্রতিটি ক্ষেত্রেই নির্ভর করতে হচ্ছে কেমিক্যাল বা মেডিসিনের ওপর। গাছ রোপণের পর থেকে কেটে নেয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকার কীট ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হয়। আর এগুলো কেমিক্যাল প্রো ছাড়া পাকানো যায় না।
এ ব্যাপারে কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. সালমা জাহান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, রঙের সংমিশ্রণে তৈরি খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করলে ধীরে ধীরে কিডনি, লিভার ও ক্যান্সারসহ মরণব্যাধিতে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। এর সঙ্গে আর যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন রাসায়নিক কীটনাশকের, যা মানবদেহের অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে অনেক রোগী আসছেন। তাদের রোগের ওপর পরামর্শ ও ওষুধ দিতে এখন আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে।
কুমিল্লায় ফসলের কীট ও ছত্রাকনাশক ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, মূলত কুমিল্লার বুড়িচং, দেবিদ্বার ও চান্দিনার কৃষকরা তাদের ফসলে সর্বাধিক বিষ প্রয়োগ করছেন। তাদের টার্গেট থাকে অসময়ে ফল ফলানো। বাজারে প্রচলিত আসল ও অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর ওষুধের মূল্য একটু বেশি হওয়ায় তারা ছুটছেন কম পয়সার ওষুধের পেছনে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, পাতাভোজী, কাণ্ডভোজী ও শেকড়ভোজী কীটপতঙ্গের জন্য পৃথক বিষ প্রয়োগ করা দরকার। এ ক্ষেত্রে কীট মারতে ব্যবহৃত যেসব বিষ রক্তে দ্রুত বিস্তার লাভ করে সে ধরনের ওষুধগুলো ভয়ঙ্কর। এগুলো মানবদেহের জন্যও বেশি ক্ষতিকর। রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো এ বিষাক্ত শাকসবজি খেয়ে শুধু মানব সমাজই নয়, এ সঙ্গে পশুপাখি, মৎস্য সম্পদ এবং পরিবেশেও ঘটে বিপর্যয়। ফলমূল ও শাকসবজি পাকানোর জন্য রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর পরে এসবের ভেতরের বিষক্রিয়া বাড়ে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন