বাংলাদেশে বেশ কয়েক লক্ষ মানুষ আজ হেপাটাইটিস-বি ব্যাধিতে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে আবার অনেকেই সংক্রামিত। যারা হেপাটাইটিস-বি দ্বারা আক্রান্ত তাদের ২৫ শতাংশ লিভারের দোষে ভোগেন। প্রতি বছর কয়েক হাজার বছর শিশু এই রোগে সংক্রমিত হয়। শরীরে এই ভাইরাস আসে কীভাবে? ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে এক শরীর থেকে অন্য শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়। ধরুণ মার শরীরে হেপাটাইটিস বির সংক্রমণ হয়েছে তা থেকে শিশুর শরীরে সংক্রামিত হয়। অধিকাংশ সময়ে শিশুর সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। দ্বিতীয় কারণ হল হরাইজন্টাল ট্রান্সমিশন অর্থাৎ এক শরীর থেকে অন্য শরীরে রোগের সংক্রমণ। যেমন ব্লাড ট্রান্সমিশন, যৌন সংসর্গ, ডায়ালিসিস, সূঁচ, সেলুনের ব্লেড প্রভৃতি।
আমরা জানি, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সরাসরি লিভার কোষের মধ্যে বাসা বাঁধে। আর বংশ বিস্তার করে সাইটোপ্লাজম এবং নিউক্লিয়ার মধ্যে। শুধু তাই নয়, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস মানুষের জিনের ক্রোমোজমের মধ্যে ঢুকে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে দেয়। ফলে শরীরের লিভার কোষের ডি এন এ-র মেরামত আর ঠিকঠাক হয় না। অধিকাংশ সময় ক্যানসারের সূত্রপাত হয় এখান থেকেই।
এ ধরনের ভাইরাস আক্রমণের অন্যতম কারণ আমাদের অসাবধানতা। খেলতে গিয়ে ছড়ে যাওয়া, অন্যের শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করা, সংক্রমিত সূঁচ ব্যবহার করা, অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি ব্যবহার, সেলুন, রক্তের সেরাম, সংক্রমিত মানুষের শরীর থেকে অন্য শরীরে এ ধরনের রোগের সংক্রমন ঘটে।
তাই হেপাটাইটিস-বি রোগীর রক্তদান করা অনুচিত। পরিবারের অন্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে তখনই এক সঙ্গে থাকা খাওয়ায় বাধা নেই যখন পরিবারের অন্যজনের হেপাটাইটিস-বির টিকা নেওয়া থাকে। তাই স্কুলের ছাত্রছাত্রী, নার্স, হাসপাতালের কর্মচারী প্রভৃতি পেশায় নিযুক্ত মানুষের বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
* হেপাটাইটিস- বি মানেই কি মৃত্যু? না, তা কিন্তু একেবারেই নয়। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, কোনো মানুষ হেপাটাইটিস-বি-তে ভুগলে তাঁর লিভারে ক্যানসার হবার সম্ভাবনা প্রবল মাত্রায় থাকে। তখন কিন্তু ক্যানসার থেকে বাঁচার সম্ভাবনা কম থাকে। সেই হিসাবে একদিক থেকে দেখতে গেলে হেপাটাইটিস-বি কোনো অবস্থাতেই ক্যানসার বা এইডস-এর চেয়ে কম ক্ষতিকারক নয়। তা ছাড়া আছে রোগীর শারীরিক ও মানসিক চাপ। সেই সঙ্গে অবশ্যই অর্থনৈতিক দিক।
* হেপাটাইটিস-বি’র লক্ষণগুলো হচ্ছে? দীর্ঘদিন যাবৎ শরীরের রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি থাকা, যকৃৎ বড়ো হয়ে যাওয়া, শরীরে যকৃতের স্থানে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, অজীর্ণ, ওজন হ্রাস হয়ে যাওয়া, মাথার চুল উঠে যাওয়া, অবসাদ প্রভৃতি। * কী ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে তা জানতে পারা যাবে?
প্রথম অবস্থায় রোগী জানতেই পারেন না যে তিনি হেপাটাইটিস-বি দ্বারা আক্রান্ত। রক্ত দিতে গিয়ে, নিজের শরীরে অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে, রুটিন পরীক্ষার মাধ্যমে অথবা চিকিৎসকের সন্দেহ হলে অস্ট্রেলিয়া অ্যান্টিজেন বা হেপাটাইটিস বি ভাইরাস পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা হয়।
* কাদের স্ক্রিনিং করা উচিত?
সবাইকে স্ক্রিনিং এর আওতায় আনা যেতে পারে। তবে হেপাটাইটিস-বি আক্রান্ত আত্মীয়স্বজন, যৌনকর্মী, ড্রাগ অ্যাডিকটেড মানুষ, স্বাস্থ্যকর্মী, গর্ভবতী মহিলা, ডায়ালেসিসের রোগীর অবশ্যই স্ক্রিনিং করা উচিত।
* আমাদের করণীয় কী?
আমদের মনে রাখতে হবে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস যেন তাড়াতাড়ি বংশ বিস্তার করতে না পারে। মূলত চিকিৎসা হওয়া উচিত খুব দ্রুত। চিকিৎসার উদ্দেশ্যই হল চিকিৎসান্তে ভাইরাস দূর করা। কারণ লিভার থেকে ভাইরাস দূর করতে না-পারলে চিকিৎসায় ফল লাভ হয়েছে একথা মানা যায় না। রোগী আগের চেয়ে সুস্থ আছে এমন মন্তব্য এক্ষেত্রে অর্থহীন। চাই প্রকৃত আরোগ্য।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন