মেডিক্যাল কলেজে বইয়ের পাশাপাশি প্রয়োজন দেখা দেয় মানবদেহের অস্থি বা নরকংকাল। একেকটি অস্থি বা নরকংকাল ক্রয়ে দরকার হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। যা মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নয়। মেডিক্যাল ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা কার্যক্রমকে সহজ করার লক্ষে সদর আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন অস্থি ল্যাব (বোনস ক্লাব)। যা প্রতিষ্ঠায় ব্যয় হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠিত অস্থি ল্যাবটি পরিণত হয়েছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্থি ল্যাব বা বোনস লাইব্রেরী। এর আগে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে প্রথম বোনস লাইব্রেরীটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিক্যাল কলেজে এখন দেশী বিদেশীসহ ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৭৫৬ জন। ভারত, নেপাল, ভুটান, ও পাকিস্তানের ৪৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। চিকিৎসা শিক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নরকংকাল (বোনস) থিওরিক্যাল এর পাশাপাশি ক্লাসে বোনস দেখিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা দিয়ে থাকেন শিক্ষকেরা। পরে শিক্ষার্থীদের হোস্টেল বা বাড়ীতে তা চর্চা করতে হয়। এশিয়াসহ দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের মত এখানকার শিক্ষার্থীরা নিজেদের টাকায় নরকংকাল ক্রয় করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এজন্য বইয়ের পাশাপাশি নরকংকাল কিনতে হয়। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় শিক্ষার্থীদের জন্য নরকংকাল সরবরাহ করাও কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান দিতে পারেনি। পরে ইকবালুর রহিম নিজ উদ্যোগে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বোনস লাইব্রেরীটি প্রতিষ্ঠা করে দেন। বোনস লাইব্রেরী বা অস্থি ল্যাবটিতে ৫ জোড়া অস্থি ও মূল্যবান বই সরবরাহ করা হয়েছে গত অক্টোবর মাসে।
এম আবদুর রহিম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কান্তা রায় মিমি ১৫ লাখ টাকা অনুদানে বোনস লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিশ্চিত করে ইনকিলাবকে জানান, গত ৬ অক্টোবর কলেজের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে বোনস লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা হয়। সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাবটি খোলা থাকে। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ল্যাবটিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে সূক্ষভাবে তা চর্চা করার সুযোগ পাচ্ছে। এই কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নত হচ্ছে। শিক্ষকেরাও অত্যন্ত সহজভাবে ক্লাসের শিক্ষা পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বুঝে নিতে পারছে। ঘরে নয় এখন ক্লাবে এসে বোন বা অস্থি দেখছে এবং বই পড়ছে।
তবে শিক্ষার্থীর তুলনায় বোনস লাইব্রেরীটি ছোট হওয়ায় সকল শিক্ষার্থী সময়মত সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। ব্যক্তি উদ্যোগ নয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় মেডিক্যাল কলেজগুলিতে সরকারীভাবে বৃহৎ আকারে বোনস লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষারমান আরো উন্নীত করা সম্ভব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন