বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

আস্থার পরিবেশ তৈরিই বিনিয়োগের পূর্বশর্ত

প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দেশে কোন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। অর্থনৈতিক সূচকগুলোও ভালো। তাই অধরা ৭ শতাংশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবার ধরা দেবে বলে আশা করছি। এদিকে রাজধানীর একটি হোটেলে গত সোমবার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বিষয়ক এক কর্মশালায় মতামত প্রকাশ করা হয়েছে যে, শুধু সস্তা শ্রম ও প্রণোদনা দিয়ে দেশে কাক্সিক্ষত হারে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে দীর্ঘমেয়াদি আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কর্মশালার অধিবেশনের মূল প্রবন্ধে বিশ্বব্যাংকের ট্রেড অ্যান্ড কম্পিটিটিভনেস গ্লোবাল প্রাকটিস বিভাগের পরিচালক সিসিলি ফ্রুম্যান বলেছেন, একটি দেশে বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়ীরা এমন একটি পরিবেশ চান, যেখানে ব্যবসা করার পরিবেশ স্থিতিশীল, স্বচ্ছ ও সহজ। বিনিয়োগ করা অর্থের নিরাপত্তার বিষয়টিও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ এসব ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। তিনি মনে করেন বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কোন্্ দেশ কতটুকু প্রণোদনা দেয় সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ নীতিমালা ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে আনতে হবে। মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি গ্যাস বিদ্যুৎ জমির সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন ফ্রুম্যান। এছাড়াও সেমিনারে বাংলাদেশে বিনিয়োগে ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদসহ ১০টি প্রধান অন্তরায়কে শনাক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা নতুন কোন বিষয় নয়। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সকল মহলই বাংলাদেশকে বিনিয়োগের উপযুক্ত জায়গা বলে বিবেচনা করে আসছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত কথাবার্তা আলাপ-আলোচনাও কম হয়নি। বিনিয়োগ বাস্তবতার কারণেই এদেশের গার্মেন্টস শিল্পসহ অনেক শিল্পই বিশ্ব দরবারে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। নানা কারণে বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আগ্রহেরও কমতি নেই। বাংলাদেশের আবহাওয়া, মানুষের আচার-আচরণ, শ্রম পরিস্থিতি সব মিলে বাংলাদেশকে একটি বিনিয়োগবান্ধব দেশ হিসেবেই মনে করা হয়ে আসছিল। এটাও নতুন কোন বিষয় নয় যে, একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিল। বাংলাদেশের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও তৎপরবর্তী রাজনৈতিক প্রক্রিয়াও বিশ্ব সমাজে বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছিল। কার্যত সবকিছু তালগোল পাকিয়ে গেছে ২০১৪ সালের নজিরবিহীন অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। অর্থমন্ত্রী যতই আশাবাদ ব্যক্ত করুন না কেন সংকট কেটেছে সে কথা কেউ মনে করছেন না। ২০১৪ সালের শুরুর দিকে তিন মাসের অবরোধের পর প্রায় এক বছর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকায় অর্থনৈতিক সূচক ভালো বলে অর্থমন্ত্রী যে আশ্বস্ততার কথা বলেছেন তার বক্তব্যের সাথে আন্তর্জাতিকমহল যে একমত নয় সেকথাই উঠে এসেছে সেমিনারে। কোন কর্মসূচি নেই বোধকরি এটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পরিচায়ক নয়। বরং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পরিচায়ক হচ্ছে দেশে গণতান্ত্রিক সহাবস্থান রয়েছে কি না। প্রকৃত প্রস্তাবে বাংলাদেশের অবস্থা হচ্ছে দেশের মানুষ একটি গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণভিত্তিক নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে রয়েছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত মার্কেটিং গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিয়েলসেন-বাংলাদেশের জরিপের তথ্যে বলা হয়েছে, দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হওয়া বাঞ্ছনীয়। দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে যে সংকট রয়েছে তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা অর্থহীন। মূলত দেশে রাজনৈতিক সংকট ও আস্থার বিষয়টি নির্বাচনকে ঘিরেই। রাজনৈতিক সহাবস্থান না থাকলে পরিস্থিতি সম্পর্কে কারো পক্ষেই আন্দাজ করা সম্ভব নয়। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারিরাও শংকিত থাকে। ইতোপূর্বেও এটা বলা হয়েছে, আস্থার অভাবেই বিনিয়োগ বাইরে চলে যাচ্ছে বা যেতে পারে। গার্মেন্টসের বায়াররাও আস্থার সংকটের কারণেই এদেশের মালিকদের দেশের বাইরে কারখানা স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। সবকিছু মিলে একথাই ঠিক যে, বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকলে যত কথাই বলা হোক বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হবেন না, হবার কথাও নয়। এই অনাকাক্সিক্ষত জাতীয় স্বার্থবিরোধী বাস্তবতা দূরীকরণার্থে কার্যকর ভাবনা জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে।
অর্থমন্ত্রী যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আমরা তাকে স্বাগত জানাই। শত বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশ যদি ৭ শতাংশ জিডিপি অর্জন করতে পারে তাহলে তার সুবিধা দেশের জনগণই পাবে। দেশে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা আগের চেয়ে বেড়েছে এবং সঙ্গত বিবেচনাতেই এটা বাড়তে থাকবে। যে সব সংকটের কথা আন্তর্জাতিকমহল থেকে বলা হচ্ছে তাও চেষ্টা থাকলে দূর করা হয়ত কঠিন হবে না, যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের বিষয়টিকে কার্যকর বিবেচনায় নেয়া যায়। এ জন্য আন্তরিকতার কোন বিকল্প নেই। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করা সম্ভব হলে আস্থা অজর্নেও কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জিত হলে আস্থার বাতাবরণ তৈরি হওয়ার বাস্তবতা সৃষ্টি হলে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি অর্জন কোন ব্যাপারই নয়। অর্থমন্ত্রী তার অভীষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিবেন- এটাই প্রত্যাশিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন