শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

সউদীতে কর্মী ছাঁটাই : বিশৃঙ্খলা কাম্য নয়

প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সউদী আরবের বৃহত্তম কনস্ট্রাকশন কোম্পানী বিন লাদেন গ্রুপ দুই দফায় ৭৭ হাজার বিদেশী শ্রমিক ছাঁটাই করায় সেখানে তীব্র শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিকও রয়েছেন বলে জানা যায়। সউদী আরবের প্রভাবশালী খালিজ টাইমস পত্রিকার বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের ভিসা বাতিল করে এক্সিট ভিসায় দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রথম দফায় গত শনিবার ৫০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই পবিত্র মক্কা নগরীসহ বিভিন্ন স্থানে বিদেশী শ্রমিকরা বিক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করছে। এরই মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ২৭ হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কবলে পড়ার কারণে শ্রমিকদের বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে। এমনিতেই জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিক হারে পড়ে যাওয়ার কারণে সউদী আরবের অর্থনীতিতে মন্দা বিরাজ করছে। গত হজ মওসুমে মক্কায় ভয়াবহ ক্রেন দুর্ঘটনার পর বিন লাদেন গ্রুপ সউদী সরকারের তরফ থেকে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়ে এই কোম্পানী। অর্থ সঙ্কটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে অনেক বিদেশী শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করতে পারেনি তারা। কাজ করে বেতন না পেলেও ছাঁটাইয়ের সম্মুখীন শ্রমিকরা এখন বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে। গত সোমবার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা অন্তত ৭টি বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়।
সউদী আরব বাংলাদেশের প্রধান বৈদেশিক শ্রমবাজার এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশ। সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ৫০ লাখের বেশী বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করছে, যা’ বাংলাদেশের বৈদেশিক রেমিটেন্স প্রবাহ এবং জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম লাইফ লাইনের মত ভূমিকা রাখছে। নানা জটিলতা এবং ভুল বোঝাবুঝির কারণে দীর্ঘ ৭ বছর এক প্রকার অঘোষিত নিষেধাজ্ঞার পর গত বছর সউদী শ্রমবাজারে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগের পথ পুনরায় খুলে দেয়া হয়। সর্বশেষ সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে, বিশেষত, গৃহকর্মী হিসেবে প্রতিমাসে ১০ হাজার শ্রমিক নামমাত্র খরচে সউদী আরবে যেতে পারবে। আবাসন ও নির্মাণখাতসহ সউদী আরবের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষাখাতসহ বিভিন্ন সেবামূলক খাতেও আরো লাখ লাখ বাংলাদেশী নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আর কোন অনভিপ্রেত ঘটনা যেন এই সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করতে না পারে সেদিকে সব পক্ষের সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। কোন দেশের কত সংখ্যক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সম্মুখীন হয়েছেন সে বিষয়ে এখনো বিশদ তথ্য পাওয়া না গেলেও এ বিষয়টি নিশ্চিত যে বিন লাদেন গ্রুপে কর্মরত শুধুমাত্র বাংলাদেশী শ্রমিকরাই ছাঁটাইয়ের শিকার হননি। অন্যান্য দেশের শ্রমিকরাও রয়েছেন। তবে বাংলাদেশীরা সব সময়ই অপপ্রচারের শিকার হয়ে বিদেশে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমনিতেই মতলবি প্রচারণা ও প্রোপাগা-ার কারণে বিদেশী গণমাধ্যমে বাংলাদেশী শ্রমিকদের সম্পর্কে নেতিবাচক রিপোর্ট প্রকাশিত হতে দেখা যায়। এসব নেতিবাচক রিপোর্ট সউদী আরব, মালয়েশিয়াসহ প্রধান শ্রমবাজারগুলোতে বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
প্রবাসী শ্রমিকরা একদিকে যেমন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে কাজ করছেন, অন্যদিকে একেকজন প্রবাসী শ্রমিক বাংলাদেশের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করবেন, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। আর বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন ও দূতাবাস সমূহ প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা ও দক্ষতার সমন্বয় ঘটাবে, এটাই সবাইর প্রচেষ্টা। সউদী আরবসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা জটিলতাসহ দুর্দশা লাঘবে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা ও অদক্ষতার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। কিছু সংখ্যক শ্রমিকের বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং দূতাবাস কর্মীদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই একশ্রেণীর মিডিয়া বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণœ করতে সদা ব্যস্ত থাকে। কিছু সংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক প্রোপাগা-ার শিকার হয়ে অথবা ভিন্ন কোন প্ররোচনায় উচ্ছৃংখল ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে কিনা সেদিকেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মত সেক্টরগুলোতে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সাথে তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে টিকে থাকতে হচ্ছে। প্রবাসে শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও অসন্তোষ, বাস পোড়ানোর মত উচ্ছৃঙ্খল কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণ হলে তা দেশের বৈদেশিক শ্রমবাজারকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। পাশাপাশি কিছু সংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকের কারণে লাখ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিকের শ্রমনিষ্ঠা ও নিয়মানুবর্তিতার সুনামকে মøান করে দিতে পারে। দীর্ঘদিন শ্রমিকদের বেতন না পাওয়া এবং শ্রমিক অসন্তোষ বৃদ্ধির আগেই নিয়োগ কর্তাদের সাথে বাংলাদেশ দূতাবাসের বোঝাপড়া করা উচিত ছিল। তবে কোন উস্কানীতেই প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকরা যেন কোন ধরনের বেআইনী কর্মকা-ে সম্পৃক্ত না হন। বিন লাদেন গ্রুপের কর্মী ছাঁটাইসহ প্রবাসী শ্রমিকদের সব সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিক উদ্যোগ নেবেন এটাই প্রত্যাশা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন