রফিকুল ইসলাম সেলিম : নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের বিরোধ ফের তুঙ্গে উঠেছে। দু’জনের মধ্যে চলছে বাকযুদ্ধ। প্রতিদিনই সভা-সমাবেশে একে অপরকে ইঙ্গিত করে তির্যক মন্তব্য করছেন।
গতকাল (মঙ্গলবার) এক দলীয় সভায় মেয়রের বিরুদ্ধে নগরবাসীর ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি জনগণের বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে।
অন্যদিকে কর্পোরেশনের এক সভায় সাবেক সিটি মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি ইঙ্গিত করে সিটি মেয়র বলেন, না পাওয়ার বেদনায় অনেকে অনেক কথা বলেন Ñ সিটি কর্পোরেশন স্বচ্ছতার ভিত্তিতেই পরিচালিত হচ্ছে, নগরবাসীর ওপর করের বোঝা চাপানো হচ্ছে না।
মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছিরের রাজনৈতিক বিরোধ দীর্ঘদিনের। তবে এখন তারা মুখোমুখি হয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের কর আদায় ইস্যু নিয়ে। গত ২৮ এপ্রিল নির্বাচিত মেয়র হিসেবে আ জ ম নাছিরের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক তৎপরতা নিয়ে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিরোধ ফের প্রকাশ্যে আসে। ওইদিন থেকে একে অন্যের বিরুদ্ধে তির্যক মন্তব্য ছুঁড়ে দিচ্ছেন। প্রায় প্রতিদিনই ইশারা-ইঙ্গিতে আবার কখনও সরাসরি একে অন্যের প্রতি কথার তীর ছুঁড়ছেন।
সরকারী দলের প্রভাবশালীর দুই নেতার বাকযুদ্ধ এখানকার রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন প্রধান আলোচ্য বিষয়। রাজনৈতিক নেতাদের বাসাবাড়ি, ড্রইং রুম থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে, মানুষের আড্ডাতেও স্থান পাচ্ছে দুই নেতার দ্ব›দ্ব। ওই দুই নেতার অনুসারী সরকারী দলের নেতাকর্মীরাও দ্বিধাবিভক্ত। দুই নেতার বিরোধে উত্তেজনা বাড়ছে তাদের সমর্থকদের মধ্যে। খুব সহসা এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।
তিনবারের নির্বাচিত সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী বর্তমান মেয়রের সময়কালে নগরবাসীর উপর করের বোঝা চাপানোর অভিযোগ করেন। তার অভিযোগ শিক্ষাখাতে সিটি কর্পোরেশনের অর্জন ধরে রাখা যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের বেতন দ্বিগুণ করা হয়েছে, অন্যদিকে বন্ধ করা হয়েছে নতুন শিক্ষক নিয়োগ। নগরীর প্রধান সমস্যা পানিবদ্ধতা নিরসনেও কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। মে দিবসে লালদীঘি ময়দানে শ্রমিক জনতার সমাবেশে মহিউদ্দিন চৌধুরী আ জ ম নাছিরকে ‘সংযত’ হয়ে কথা বলার হুমকি দেন।
শুরু থেকেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর এসব অভিযোগের জবাব দিচ্ছেন আ জ ম নাছির। তিনি বলেন, স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা এবং জনগণকে সেবার মানসিকতা নিয়ে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। নগরবাসীর উপর করের বোঝা চাপানো হচ্ছে না। কিন্তু সাবেক একজন মেয়র এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।
তাদের এ পাল্টাপাল্টি বক্তব্য অব্যাহত আছে। গতকাল কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, জনগণের সুখে, দুঃখে, আপদে, বিপদে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
সভায় তিনি আরো বলেন, পৌর কর বৃদ্ধি হলে নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও বর্তমান আওয়ামী লীগ তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি জনগণের বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হবে। তাই নতুন করে কর আরোপ না করার জন্য বর্তমান মেয়রের প্রতি দাবী জানান। চসিক স্কুল-কলেজের অতিরিক্ত বেতন ফিস প্রত্যাহারের দাবী জানান মহিউদ্দিন চৌধুরী।
তিনি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র নাসিম আহমেদ সোহেল হত্যার বিচার ও দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করে বলেন, সোহেল আমার সন্তান, এখনো তার হত্যাকারীরা গ্রেফতার হয়নি। এই হত্যাকারীরা গ্রেফতার হলে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। কারা বিশ্বমানের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণœ ও ধ্বংস করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে সচেতন থাকতে চট্টগ্রামবাসীর প্রতি উদ্ধাত্ত আহবান জানান। প্রসঙ্গত সোহেল হত্যার জন্য মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকরা আ জ ম নাছিরের সমর্থকদের দায়ী করে আসছে।
এদিকে সিটি কর্পোরেশনের এক সভায় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নাগরিকদের প্রদেয় ট্যাক্সের বিনিময়ে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তিনি বলেন, কাউন্সিলরদের সম্মানী, সুযোগ-সুবিধা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ আলোকায়ন, পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম, উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা এ সবই নাগরিকদের ট্যাক্সের বিনিময়ে প্রদান করা হয়। তিনি বলেন, আমি নাগরিক সেবা দেয়ার জন্য স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের সেবকের দায়িত্ব পেয়েছি। আমি সেবা দেব, সেবার বিনিময় নেব নাÑএ প্রত্যয় করেছি। আমার জন্য নির্ধারিত বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা, গাড়ী-বাড়ী, জ্বালানী, আবাসিকের সুযোগ-সুবিধা, ব্যক্তিগত কর্মচারীর সুযোগ-সুবিধা কোনোটাই নিচ্ছি না। অতীতে চসিকে এ ধরনের নজির আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে শতভাগ সততা, নিষ্ঠা ও দায়বদ্ধতা থেকে নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত সেবা দিয়ে যাব। মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, না প্রাপ্তির বেদনা বা পরাজিত হওয়ার বেদনা মানুষ সহজে ভুলতে পারে না। সেই যন্ত্রণা থেকে যদি কেউ বিরূপ মন্তব্য বা বক্তব্য দেন তাতে নাগরিক সেবা বাধাগ্রস্ত হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন