দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি থেকে পাথর উত্তোলন সাত মাস বন্ধ থাকার সুযোগে ভারত থেকে পাথর আমদানির হিড়িক পড়ে গেছে। পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন পাথর বোঝাই শ’ শ’ ভারতীয় ট্রাক ঢুকছে বাংলাদেশে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ট্রেনও। দর্শনা ও রহনপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আসছে পাথরবাহী ট্রেন। একশ’ ইউনিটের বিশাল ট্রেন কমপক্ষে সাড়ে চার হাজার টন পাথর নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে দেশীয় শিলাপাথর ব্যবহারের পথ রুদ্ধ করে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমদানি করা পাথর দেশের মেগা প্রজেক্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন অবকাঠামোতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ সুযোগে দেশী-বিদেশী চক্র কোটি কোটি ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। বলা হয়েছে, দেশের মেগা প্রজেক্টে দেশীয় শিলাপাথর নিশ্চিত করতে শিলা উত্তোলন ত্বরান্বিত করতে একশ’ কোটি টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়। সে মোতাবেক অধিকাংশ টাকা পেট্রোবাংলা খনির অনুকূলে ছাড় করে। অথচ এরপরেও খনির পাথর উত্তোলন করা যায়নি। জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামের (জেটিসি) চুক্তি মোতাবেক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা এবং অনীহার কারণেই বিদ্যমান পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।
দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পটি অনেকদিন থেকেই চক্রান্তের শিকার। ইতোপূর্বেকার প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, আট মাস ধরে খনির শিলা উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে শিলা উত্তোলন বন্ধ থাকার অজুহাত দেয়া হয়েছে। খনি প্রকল্পের সূত্র উদ্ধৃত করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ছয় বছরের জন্য এক হাজার চার শ’ কোটি টাকার খনির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য জেটিসিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটির সিও একজন পাথর ব্যবসায়ী। বলা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটি দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে তিন শিফটে কাজ করে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করছিল। চুক্তি মোতাবেক দায়িত্ব পালনে ঠিকাদারের অনীহা এবং অপারগতায় খনির ভূগর্ভ থেকে নতুন শিলা উৎপাদন কমতে থাকে। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে শিলা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য,এর পেছনে যে ষড়যন্ত্র রয়েছে তা ইতোমধ্যেই আঁচ করা গেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উক্ত প্রতিষ্ঠান খনির কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই পেট্রোবাংলার পরিচালনা পরিষদের দুর্নীতিপরায়ণ কতিপয় কর্মকর্তা এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। চুক্তির শর্তানুযায়ী, বাধ্যতামূলকভাবে ৬ বছরে ১২টি স্টোপ এবং ১ম ১৮ মাসে ৪টি স্টোপ নির্মাণের কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ১২ লাখ টন শিলা উৎপাদন করলেও তারা কোন স্টোপ উন্নয়ন করেনি। মূলত, পুরনো স্টোপ থেকেই পাথর উত্তোলন করেছে। এতে সংকট ঘনীভূত হয় এবং বর্তমানে বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, আমদানিকৃত পাথরের স্তূপ জমে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের দেশে গুণগত ও মানোত্তীর্ণ কঠিনশিলা থাকা সত্ত্বেও ভারত থেকে আমদানি করতে হচ্ছে কেন? এতে এটা মনে করার সঙ্গত কারণ রয়েছে যে, একটি মহল দেশের স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছে। একজন পাথর ব্যবসায়ীকে কিভাবে খনির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সে বিষয়টিও রহস্যজনক। দেশে যখন বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য কঠিন শিলা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে, ঠিক সে সময়ই দেশীয় প্রকল্পটি স্থবির হয়ে পড়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী।
এর আগেও দেখা গেছে, নানা ছলছুঁতায় বাংলাদেশের কঠিনশিলা ব্যবহারে কোন কোন মহলের আপত্তি ছিল। এই মানসিকতার সাথে যে দুর্নীতির অভিপ্রায় জড়িয়ে আছে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। বর্তমান সময়ে সব ক্ষেত্রেই এক ধরনের লুটপাটের সংস্কৃতি চালু রয়েছে। প্রভাবশালী মহলের প্রশ্রয়ে এ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিনাজপুরের কঠিনশিলা প্রকল্প নিয়ে যা ঘটেছে তার দায় কোন অবস্থাতেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং পেট্রোবাংলা এড়াতে পারে না। সুনির্দিষ্ট চুক্তি থাকা সত্ত্বেও কেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান স্টোপ করেনি এবং কেন তাদের জবাবদিহিতার বাইরে রাখা হয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। সব ক্ষেত্রেই যদি দুর্নীতিবাজরা প্রশ্রয় পেয়ে যায়, তাহলে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি ব্যাহত হতে বাধ্য। আমরা আশা করতে চাই, অবিলম্বে কঠিনশিলা আমদানি বন্ধ করে দেশের খনি থেকে কঠিনশিলা উত্তোলনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। সেই সাথে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী এ ধরনের কর্মকা-ে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন