স্টাফ রিপোর্টার : ‘কবিতা পড়ার সময় এসেছে রাতের নির্জনে’ ফাহমিদা নবীর এ গান যেন বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ ও গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদের দাম্পত্য জীবনে। দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে আলাদা বাসায় থাকেন; রাজনৈতিক বিরোধ করেন ক্ষণে ক্ষণে; কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। কবি এরশাদের প্রেমিক মনের দরজা সব সময় খোলা থাকে স্ত্রী, পরিবারের সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য। ‘রাতের নির্জন’ নয় গতকাল দিনের আলোতে দলীয় নেতাকর্মীদের সামনেই দু’জন কবিতা পড়ে একে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরশাদ পড়েন স্বরচিত কবিতা আর রওশন এরশাদ পড়ে শোনান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা। এ ঘটনা ঘটে এরশাদের বনানীর কার্যালয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, স্ত্রী রওশন এরশাদকে নিজের ‘আলোর মিছিল’ আখ্যায়িত করে স্বামী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একটি কবিতা শুনিয়েছেন। জবাবে স্বামীকেও কবিতা শোনান জাতীয় সংসদের গৃহপলিত বিরোধী দলের নেতা ও দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। উপস্থিত নেতাকর্মীরা দলের শীর্ষ নেতানেত্রীর কবিতা উপভোগ করেন।
আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি সভায় রওশন এরশাদ বক্তব্য দিয়ে উঠে যাচ্ছিলেন। এ সময় স্ত্রীর হাত ধরলেন প্রেমিক কবি এরশাদ। অতঃপর বললেন, ‘কোথায় যাচ্ছ? আমি তোমার জন্য একটি কবিতা লিখেছি। কবিতাটা শোনো।’ উপস্থিত নেতাকর্মীরা দেখছেন যেন মুম্বাই সিনেমার কোনো দৃশ্যে অভিমানী নায়িকার মান ভাঙাতে নায়কের প্রাণান্তকর চেষ্টা। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সাবেক প্রেসিডেন্ট স্ত্রী রওশনকে ‘আলোর মিছিল’ নামে নিজের লেখা একটি কবিতা পড়ে শোনান। কবিতা শেষে এরশাদ বলেন, ‘রওশন আমার আলোর মিছিল।’ স্বামীর কবিতা শুনে রওশন বলেন, ‘তিনি (এরশাদ) যেহেতু আমাকে কবিতা শুনিয়েছেন। আমিও তাকে একটি কবিতা শোনাবো।’ এরপরই রওশন এরশাদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ কবিতাটি এরশাদকে পড়ে শোনান। এসময় উপস্থিত দলের নেতাকর্মীরা তাদের করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান। এর আগে পয়লা মে শ্রমিক সমাবেশে শ্রমিকদের কবিতা শুনিয়েছিলেন পার্টির সিনিয়র কো- চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। বক্তব্যের মাঝে তিনি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘মেথর’ কবিতার প্রথম চার লাইন আবৃত্তি করে শোনান। আর এরশাদের বেশ কয়েকটি কবিতার বই রয়েছে। প্রায়ই তিনি নিজের লেখা কবিতা পড়ে নেতাকর্মীদের শোনান। মূলত দলের কর্মকৌশল নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে চলছে স্বামী এরশাদ ও স্ত্রী রওশন এরশাদের মধ্যে বিরোধের মান-অভিমান। স্ত্রীকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান পদ দিয়ে সে অভিমান ভাঙালেও গতকাল এরশাদ কবিতা পড়েই স্ত্রীকে আটকান।
‘মুক্তমনা’ জিনিসটা বুঝি না
দেশে কেউ খুন হলেই তাকে ‘মুক্তমনা’ আখ্যা দেয়ার সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, এখন মুক্তমনা বলে একটা কথা বলা হয়। আমি বাংলার ছাত্র। এই মুক্তমনা জিনিসটা আসলে কি আমি বুঝি না। প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা থাকলে রাজশাহীর শিক্ষক হত্যা নিয়ে প্রধামন্ত্রীকে মাথা ঘামাতে হতো না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রাজধানীর বনানী পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা সফররত দক্ষিণ ও মধ্যএশিয়া বিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বাংলাদেশে জঙ্গি নির্মূলে সহযোগিতা করার যে আশ্বাস দিয়েছেন সেই প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, এখন রাষ্ট্রদূতদের কথা প্রধানমন্ত্রী কথার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়, এটা উচিত না। কোনো দেশে এটা হয় না। কারো সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন নেই। আগে একসময় সাহায্য দরকার ছিল। এখন আর নেই। আমাদের সমস্যা আমরা নিজেরাই সমাধান করবো। মনে রাখতে হবে, এটা স্বাধীন দেশ। যুদ্ধ করে এ দেশে অর্জিত হয়েছে।’ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণেই এত প্রাণহানী ঘটছে উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, এই নির্বাচন কেনো দলীয়ভাবে হচ্ছে, তা বুঝতে পারছি না। দলীয় প্রতীকের নির্বাচনের কারণেই এত প্রাণহানীর ঘটছে। গ্রামে গ্রামে ভাই ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল। নির্বাচনের কারণে সেই সৌহার্দপূণ পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। এমন নির্বাচন আমরা চাইনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন