বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

ঘৃতকুমারীর ঔষধি গুণ

| প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম


স্থানীয় নাম: ঘৃতকুমারী/ঘৃতকমল। ইউনানী নাম: মুসাব্বার। English Name: Aloe Vera. Botanical Name: Aloe bardadensis mill. Family : Liliaceac. পরিচিতি: ঘৃতকুমারী ১ থেকে ২ ফুট লম্বা হয়। বীরুত-জাতীয় এ গাছের পাতা পুরু মাংসল, নিচের দিকটা আংশিক বৃত্তাকার, ওপরের দিক সমান। পাতার দু’ধার করাতের মতো খাঁজকাটা ধারাল। ইউনানি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ বছর আগে হতে ঘৃতকুমারী ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক তথ্য মোতাবেক উত্তর ও দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে প্রায় ১৮০ প্রজাতির অষড়ব জন্মায় বলে জানা যায়। বাংলাদেশের সর্বত্রই ঘৃতকুমারী চাষ করার উপযোগী তবে নাটোর জেলার লক্ষীপুর ও খোলাবাড়িয়া গ্রাম (ঔষধি গ্রাম বলে বেশি পরিচিত) এবং টাঙ্গাইলের মধুপুরে ইদানীং স্বল্প পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।
বাণিজ্যিক উৎপাদন : ঘৃতকুমারীর পাতা গোড়া থেকে কেটে ফেললে তা থেকে এক প্রকার পিচ্ছিল তরল পদার্থ বের হয়। এই রস বা তরলকে আগুনে জ্বাল করে ঘন করার পর ঠান্ডা করলে গাঢ় বাদামি বর্ণের এক প্রকার কঠিন পদার্থ পাওয়া যায়। এটিই ঔষধি অ্যালো।
উৎসের বিভিন্ন তার ভিত্তিতে বিশ্ববাজারে নিম্নোক্ত তিন প্রকার Aloe পাওয়া যায়। ০১. কেপ অ্যালো: (kep Aloe) যা Aloe ferox, Aloe Africana mill এবং Aloe spicath baker-এর শঙ্কর জাত হতে প্রাপ্ত। ০২. কুরাকেও অ্যালো (Curacao Aloe) এটা Aloe barbadensis ওAloe-baker-এর শঙ্কর জাত থেকে প্রাপ্ত। ০৩.সকেট্রিন অ্যালো (Socotrine Aloe) এটা Aloe perryi baker থেকে প্রাপ্ত।
ঘৃতকুমারীর রাসায়নিক উপাদান : পাতার রসের প্রধান উপাদান বার্ব্যলোয়েন, ইসোডিন, ক্রাইসোফ্যানিক এসিডসহ বিভিন্ন এনথ্রাকুইনোন গ্লাইকোসাইড। ঘৃতকুমারী বহুবর্ষজীবী বীরুৎ প্রকৃতির উদ্ভিদ। উচ্চতায় এটি ২-৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতা দীর্ঘ, মোটা ও রসালো, কিনারা কন্টক সদৃশ। পাতার অভ্যন্তরে থক্থকে মাংসল পিচ্ছিল পদার্থ দ্বারা পূর্ণ থাকে যা স্বাদে তিক্ত।
চাষাবাদ পদ্ধতি : অঙ্গজ প্রজননের পদ্ধতিতে এর বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। পার্শ্ব থেকে বের হওয়া ছোট ছোট অঙ্গজ বংশ বিস্তারে সহায়তা করে। ওষুধি ব্যবহার: ওষুধি হিসেবে এগাছের পাতা, ডাটা ও মুলের ছাল ব্যবহৃত হয়। এর পাতার অভ্যন্তরস্থ শাঁস শুক্রবর্ধক ও বলকারক, হজমকারক। কোষ্ঠকাঠিন্য বা কাঁশি হলে সারতে সহায়তা করে।
চাখের রোগে : চোখের রোগের ক্ষেত্রে এর পাতার রস বেশ উপকারী। প্রসাধন শিল্পে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। পোড়া ঘায়ে : যেকোন স্থান পুড়ে গেলে সাথে সাথেই যদি ঘৃতকুমারীর শাঁস প্রলেপের মতো দেয়া যায়, তবে পোড়া ঘায়ে উপকার হয়।
অগ্নিমান্দ্র্যে : ক্ষুধা লাগছে না, খেতে মন চাচ্ছে না, এক্ষেত্রে সকালে-বিকালে ৩ গ্রাম পরিমাণ ঘৃতকুমারীর শাঁস একটু চিনি মিশিয়ে খেলে উপকার হয়।
অর্শ রোগে : ঘৃতকুমারীর শাঁস চা চামচের এক বা দেড় চামচ পরিমাণ, একটু খাঁটি গব্যঘৃত/ঘি মিশিয়ে সকাল ও বিকেলে প্রতিদিন ২ বার খেতে হবে।
শিশুর মলরোধে : ১-৫ ফোঁটা পরিমাণ ঘৃতকুমারীর শাঁসের রস একটু মধুসহ খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।
জন্ডিস/কামলায় : ১ চা চামচ পরিমাণ শাঁস একটু মধু বা মিশ্রিসহ ২ বেলা খেতে হবে। প্লীহাতে : প্লীহা রোগেও ঘৃতকুমারীর রস+হরিদ্রা চূর্ণ খেলে অপচিসহ প্লীহা রোগ প্রশমিত হয়। ক্রিমিতে : এক্ষেত্রে ঘৃতকুমারীর শাঁস ৫ গ্রাম করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গুলিয়ে ২ বেলা খেতে হবে। তবে বেশিদিন খাওয়া যাবে না।
ঋতুবন্ধে : ঘৃতকুমারীর শাঁস বের করে এনে ৫/৬টি স্তর দিয়ে শুকিয়ে নিয়ে, সেই শুকনো ঘৃতকুমারীর (শাঁস) ২-৩ গ্রাম পরিমাণ গরম পানিতে ভিজিয়ে দিনে ২ বার খেতে হবে। মাসিকের ব্যথায় : মাসিক স্রাবের ১ম দিন থেকে ১ চামচ করে ঘৃতকুমারীর শাঁস প্রতিদিন খেতে হবে। এভাবে পরপর ৩ দিন খেতে হবে। ৩টি মাসিক স্রাব পর্যন্ত খেয়ে যেতে হবে।
শ্বেত প্রদরে : ১-৩ চা চামচ ঘৃতকুমারীর রস+১ চা চামচ মিশ্রি বা চিনি ১ গ্লাস ঠান্ডা পানিতে গুলিয়ে শরবত বানিয়ে প্রতিদিন সকালে খেতে হবে। এভাবে ৭-১০ দিন।
শুক্র বর্ধক : ঘৃতকুমারীর শাঁস ১ চা চামচ পরিমাণ একটু চিনি মিশিয়ে সকালে-বিকেলে ৬/৭ দিন খেলে উপকার পাওয়া যায়। পেটে গ্যাস হলেও এই শাঁসের রস ২ বেলা খেলে উপকার পাওয়া যায়। তাই ফলের চারা রোপণ করুন-পুষ্টির অভাব দূর করুন।

ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন