ক্ষমতা ভোগ-ব্যবহার ও শক্তির মানদণ্ড নয়, বরং আমানত। মুহাম্মদ ইবনু নাসর স্পেনে তাঁর বসবাসের জন্য আল হামরা প্রাসাদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। যিনি নাসরি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা (১২৩৮- ১২৭৩ খ্রি.)। তিনি বিজয়ী বেশে গ্রানাডায় প্রবেশ কালে, তাঁকে স্বাগত জানিয়ে সমবেত জনতার উল্লাস ধ্বনি ছিল মারহাবান লি-ল-নাসর অর্থাৎ ‘আল্লাহ্র কৃপায় বিজয়ীকে সুস্বাগতম’। জবাবে তিনি বলেছিলেন লা গালিবা ইল্লাল্লাহ্ অর্থাৎ ‘অন্য কেউ বিজয়ী না, যদি না আল্লাহ্ চান’।
মহান আল্লাহ্ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। পবিত্র কুরআনের সুরা ‘মুলক’ অর্থাৎ রাষ্ট্র নামক সুরার শুরুতে তিনি বলেন: “মহা মহিমান্বিত সেই সত্ত¡া যার করায়ত্তে সর্বময় কর্তৃত্ব, তিনি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান”।
৬২৭ খ্রি.’র মার্চ মাসে, ঐতিহাসিক খন্দকের যুদ্ধের পটভূমিতে অবতীর্ণ আয়াতে আমরা খুঁজে পাই আল্লাহ্র বিধানের চিরন্তনতা। ক্ষমতার পালাবদল প্রসঙ্গে তিনি বলেন “(হে রাসুল) আপনি বলুন, হে আল্লাহ্ তুমিই মালিক সার্বভৌম শক্তির। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্যদান করো এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নাও। যাকে ইচ্ছা তুমি সম্মানিত করো আর যাকে ইচ্ছা করো লাঞ্ছিত। সমুদয় কল্যাণ তোমারই হাতে” (আল ইমরান: ২৬)।
ক্ষমতার মালিক মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন। এজন্যই মদীনা সনদের ধারাবাহিকতায় প্রিয়নবী (স.) গোত্র শাসিত ২৭৬ টি দেশীয় রাজ্যকে একত্রিত করে প্রায় বার লাখ বর্গমাইল এলাকার সাম্রাজ্যের মালিক হয়ে ছিলেন।
প্রিয়নবীর (স.) আদর্শ অনুসরণ করে খলিফা ওমর (রা.) বনে যান ‘অর্ধ পৃথিবীর মালিক’- যার সুশাসনের নজির হলো- জেরুজালেম বিজয়ী ‘আমিরুল মু’মিনিন’ টেনে নিচ্ছেন উটের রশি..... ঘুরে বেড়াচ্ছেন রাতের আঁধারে, আর বলতেন: ‘ঐ ফোরাতের কূলে যদি একটি কুকুরও না খেয়ে মারা যায়, তা হলে আমাকে আল্লাহ্র সমীপে জবাবদিহি করতে হবে’!
মুসলিম শাসকগণ ক্ষমতাকে আল্লাহ্র নিয়ামত ও আমানত মনে করতেন। খিলাফতের আদর্শে বিশ্বব্যাপী ইসলাম বিজয়ী দর্শন হিসেবে বিস্তৃত হয়। দেখা যায় ১২০৬ খ্রি.’র ২৪ জুন কুতুবুদ্দীন আইবেক দিল্লীর স্বাধীন সুলতান হিসেবে অভিষিক্ত হন। ‘সালতানাত’ যুগের প্রথম দিককার শাসনকে ‘মামলুক’ বা ক্রীতদাসের যুগ বলা হতো। এমন কি সম্্রাজ্ঞী নুরজাহানও ছিলেন ভারতের বাজারে বিক্রি হওয়া একজন ইরানি ক্রীতদাসী। ১২০৪-০৫ খ্রি.’র শীতকালে ইখতিয়ার উদ্দীন বখতিয়ার খলজি ঝাড়খণ্ডের দুর্গম পাহাড়ী বনাঞ্চল দিয়ে দুঃসাহসী অভিযান পরিচালনা করেন, তখন লক্ষণ সেনের পাহারাদারারা ‘ঘোড়া বিক্রেতা’ ছাড়া আর কিছুই তাঁকে মনে করেনি। ‘কুৎসিত কদাকায় আজানুলম্বিত বাহু বিশিষ্ট এই কৃষ্ণবর্ণ খর্বাকৃতির ব্যক্তি’ বখতিয়ার হলেন বাংলার প্রথম মুসলিম শাসক- কারণ, ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ্। এভাবেই ভারতের বুকে সাড়ে পাঁচশ বছরের (১২০৪- ১৭৫৭ খ্রি.) মুসলিম শাসনের অধ্যায় রচিত হয়েছিল।
ন্যায় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হলো মুসলিম নেতৃবৃন্দের কর্তব্য। এপ্রসঙ্গে সুরা হজ্বের ৪১ নম্বর আয়াতে আছে “এরাই তারা- আমি যদি এদেরকে পৃথিবীতে ক্ষমতায় বসাই, তা হলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, লোকদেরকে ভাল কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখবে”।
বস্তুতঃ ক্ষমতার পালা, পটভূমি পাল্টায় মহান আল্লাহ্র ইচ্ছায়: “ইন্নাল আরদা লিল্লাহ..... নিশ্চয়ই এই পৃথিবী আল্লাহ্র, তিনি তার বান্দাগণের মধ্য হতে যাকে ইচ্ছা তাকে এর উত্তরাধিকার দান করেন”।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্টাডিজ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন