মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা নিষিদ্ধ করতে হবে

প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নিষিদ্ধ এবং অনুমোদনহীন ব্যাটারিচালিত লাখ লাখ রিকশা ও ইজিবাইক রাজধানীসহ সারাদেশে সড়ক-মহাসড়কে অবাধে চলছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা এবং ১৯৮৩ সালে করা ইঞ্জিনচালিত যানবাহন অধ্যাদেশ উপেক্ষা করেই এসব যানবাহন চলাচল করছে। এর ফলে একদিকে যেমন এসব যানবাহনের কারণে প্রতিনিয়ত মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটছে, তেমনি এগুলোর ব্যাটারি চার্জের কারণে শত শত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। এগুলো মানুষের জীবন ও সম্পদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। অথচ এসব দেখভালের যেন কেউ নেই। গত বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক পরিদর্শন করতে গিয়ে সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী এ জাতীয় যানবাহন বন্ধে দেশব্যাপী অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগেও সড়ক-মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক, নছিমন, করিমন ও ভটভটি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। দেখা গেছে, এসব নিষেধাজ্ঞা ও অভিযানে কোনো কাজ হয়নি। সপ্তাহখানেক অভিযান চালানোর পর পুনরায় এসব যানবাহন চলাচল শুরু করে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। প্রতিনিয়ত ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ নীরব।
আইন অমান্য করার প্রবণতা আমাদের দেশে ট্র্যাডিশনে পরিণত হয়েছে। সড়ক-মহাসড়ক ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ রাখার স্বার্থে হাইকোর্ট বেশ কয়েকবার নির্দেশনা প্রদান করেন। ফুটপাত হকারমুক্ত করা থেকে শুরু করে সড়ক-মহাসড়ক নির্বিঘœ করতে অনুমোদনহীন ধীরগতির যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এসব নিষেধাজ্ঞা জারির পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাময়িক তৎপর হয়ে ওঠে। কিছুদিন না যেতেই তাদের তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়। পুনরায় এদের চলাচল শুরু হয়ে যায়। কেন ও কী কারণে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এবং এ সংক্রান্ত আইন প্রতিপালিত হয় না, তার কোনো স্পষ্ট জবাব পাওয়া যায় না। তবে এটুকু বোঝা যায়, যাদের এসব আইন-কানুন প্রয়োগ করার কথা, তাদের প্রশ্রয় ও চরম গাফিলতিই মূল কারণ। তাদের গাফিলতি ও উদাসীনতার জন্যই সড়ক-মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানবাহন অবাধে চলাচল করতে পারছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক ঝুঁকিপূর্ণ এবং এ কারণে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। এমনিতেই লোডশেডিংয়ে দেশের মানুষের ত্রাহি অবস্থা, তার ওপর বিদ্যুৎচালিত যানবাহন এ লোডশেডিংয়ের ওপর ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল ইনকিলাব ও একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উল্লিখিত যানবাহনের ব্যাটারি চার্জ করতে গিয়ে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। চুরি ও লুকোচুরির মাধ্যমে এসব যানবাহনের ব্যাটারি চার্জের কারণে সরকার বিরাট রাজস্ব হারাচ্ছে এবং লোডশেডিং বাড়ছে। এই পরিমাণ বিদ্যুৎ যদি এসব যানবাহন খেয়ে না ফেলত, তাহলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কিছুটা হলেও কম হতো। ঝুঁকিপূর্ণ এসব যানবাহন মানুষের জানমাল ও দেশের জন্য এত বড় সমস্যা হয়ে থাকার পরও অবাধেই চলছে। এগুলো যে শুধু সড়ক-মহাসড়কের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত করছে তা-ই নয়, ভয়াবহ দুর্ঘটনা এবং সড়কের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘœ সৃষ্টির কারণ হয়ে উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কের শম্ভুগঞ্জে ট্রাক ও সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ৫ জনসহ ৮ জন নিহত হয়েছে। এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সড়ক-মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচলের নিষেধাজ্ঞা যদি বলবৎ থাকত, তাহলে হৃদয় বিদীর্ণ করা দুর্ঘটনা ঘটত না। সারাদেশের সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্তৃপক্ষের নাকের ডগার সামনে দিয়েই নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল করছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বিদ্যুৎচালিত রিকশা ও ইজিবাইক নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও সারাদেশে এর সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। সাধারণ রিকশার লাইসেন্স সিটি কর্পোরেশন দিলেও ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের লাইসেন্স দেয়ার কোনো কর্তৃপক্ষই নেই। তাহলে এগুলো চলছে কী করে? অভিযোগ রয়েছে, সরকারি দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা-কর্মী ও পুলিশকে ম্যানেজ করে চলছে। ব্যাটারি চার্জের জন্য অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন নেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের একশ্রেণীর কর্মকর্তার যোগসাজশে। নছিমন, করিমন ও ভটভটি তো রয়েছেই, যেগুলো প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে।
আমরা বরাবরই বলে আসছি, দুর্ঘটনা কমাতে ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে ব্যাটারিচালিত ও অন্যান্য ধীরগতির যানবাহন শহর এবং সড়ক-মহাসড়কে নিষিদ্ধ করতে হবে। দুঃখের বিষয়, জনস্বার্থের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এসব যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়নি। কেবল লেখালেখি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে কিছুদিন এগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। আমরা মনে করি, শহর ও সড়ক-মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ নয়, এগুলো তৈরি ও আমদানি নিষিদ্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। এসব যানবাহন যারা রাস্তায় নামায় এবং যারা প্রশ্রয় দেয়, তাদের আইন অমান্য করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। যেসব এলাকায় এসব অবৈধ ও নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল করবে, সে এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কিছু সংখ্যক ব্যক্তির স্বার্থের জন্য মানুষের প্রাণহানি ও বিদ্যুৎ অপচয় হবে, তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন