ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : নির্ধারিত সময়ের পর বর্ধিত আরো ৩ বছরের মধ্যেও শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহ নেই নতুন ২৫টি ব্যাংক ও বিমা কোম্পানির। এর মধ্যে রয়েছে ৯টি তফসিলি ব্যাংক আর ১৬টি বিমা কোম্পানি। চলতি বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা ছিল ব্যাংকগুলোর। কিন্তু নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৫টিকে নির্ধারিত সময়ের পর আরো ৩ বছর বাড়তি সময় দিয়েছে ব্যাংলাদেশ ব্যাংক। বাকি ৪টি ব্যাংককেও বাড়তি সময় দেওয়া হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
একসময় শেয়ারবাজারের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত এবং লেনদেনের শীর্ষে থাকা ব্যাংক খাত চলে এসেছে ষষ্ঠ স্থানে। মার্চ মাস শেষে মোট লেনদেনে এই খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশে, যা ফেব্রæয়ারি শেষেও ছিল ৮ শতাংশের উপরে। ২০১২ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাত লেনদেনে প্রথম স্থান ধরে রাখে। সে সময় মোট লেনদেনে ব্যাংক খাতের অবদান ২০ থেকে ২৫ শতাংশের উপরে ছিল। মূলত ২০১১ সালের পর থেকেই শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের অবদান কমতে থাকে।
অন্যদিকে ১৬টি বিমা কোম্পানির কোনোটিই শেয়ারবাজরে আসার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। ফলে ২০১২ সালে অনুমোদন পাওয়া এ কোম্পানিগুলোর কোনোটিই আগামী ৪ বছরের মধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) পুঁজিবাজারে আসতে পারবে না। তার কারণ, গত ৩ বছরে কোম্পানিগুলো মুনাফায় আসতে পারেনি। আগামী ৩ বছরের মধ্যে মুনাফায় ফেরা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছে কোম্পানিগুলো।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ম অনুসারে কোনো কোম্পানিকে আইপিওতে আসতে হলে শেষ ৩ বছর ভালো মুনাফায় থাকতে হবে। অর্থাৎ কোম্পানিকে সর্বশেষ ৩ বছর আর্থিক প্রতিবেদনে মুনাফা দেখাতে হয়।
২০১২ সালে দুই দফায় ৯টি ব্যাংককে ব্যবসার অনুমোদন দেয় ব্যাংলাদেশ ব্যাংক। যার প্রধান শর্ত ছিল ব্যবসা শুরুর ৩ বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে আসতে হবে। একই বছরে ১৬টি বিমা কোম্পানিকে দেশের বিমা খাতে ব্যবসা করার জন্য অনুমোদন দেয় বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
বিমা আইন অনুসারে, নিবন্ধিত হওয়ার ৩ বছরের মধ্যে বিমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারের আইপিওতে আসতে হয়। এরপর যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে আরো ৬ মাস বাড়াতে পারে। বিমা আইন-২০১০ এর ১৩০ ধারা অনুযায়ী আইপিওতে আসার নির্ধারিত সময় পার হলে প্রথমে কোম্পানিকে মূল জরিমানা হিসেবে এককালীন ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। এরপর যতোদিন আইপিওতে আসতে না পারবে, ততোদিন কোম্পানিকে প্রতিদিনের জন্য ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে।
এই সব বিমা কোম্পানিগুলো হচ্ছেÑজেনিথ ইসলামী লাইফ, যমুনা, গার্ডিয়ান, মাকেন্টাইল, প্রটেক্টিভ, আলফা, বেস্ট, চার্টার্ড, ডায়মন্ড, এনআরবি গেøাবাল, স্বদেশ লাইফ, সেনা কল্যাণ ও সিকদার জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি।
অন্যদিকে শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর অনুমোদনের সময় যে সম্মতিপত্র (এলওআই) দেওয়া হয়েছিল, তাতে শর্ত ছিল, কার্যক্রম শুরুর তিন বছরের মধ্যে শেয়ারবাজরে তালিকাভুক্ত হতে হবে। সে হিসাবে চলতি বছরের মধ্যেই নতুন ব্যাংকগুলোর বাজারে তালিকাভুক্ত হতে আইপিওতে শেয়ার ছাড়ার কথা। কিন্তু সেই শর্ত পূরণ করছে না ব্যাংকগুলো। বরং এ অবস্থায় নতুন নয়টি ব্যাংককে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আরও তিন বছর পর্যন্ত বাড়তি সময় দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০১২ সালের শুরুতে দুই দফায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য ছয়টি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের তিনটি নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। এর মধ্যে দেশীয় উদ্যোক্তাদের ব্যাংকগুলো হলোÑমেঘনা, মধুমতি, মিডল্যান্ড, ফারমার্স, ইউনিয়ন এবং সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক। অন্যদিকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য যে তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলোÑএনআরবি, এনআরবি গেøাবাল ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। এসব ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে ২০১৫ সালের যে আর্থিক হিসাব বিবরণী জমা দেওয়া হয়েছে, তা থেকে জানা গেছে, একমাত্র এনআরবি গেøাবাল ছাড়া বাকি সবগুলোই মুনাফায় রয়েছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে আইডিআরএ’র এক সদস্য বলেন, নতুন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মধ্যে ২টি জেনারেল আর বাকি ১৪টি লাইফ কোম্পানি। এক সঙ্গে এতো জীবন বিমা কোম্পানির অনুমোদন হয়নি। এ সেক্টরে এতো প্রতিযোগিতাও ছিলো না। ফলে গত ২ বছর কোম্পানিগুলোর রিনিউয়াল ইনকাম ভালো হয়নি। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে ভালো মুনাফায় আসতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।
জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদ হোসাইন খান বলেন, লাভ-লসের মধ্যে দিয়ে গত ৩ বছর ধরে আমাদের কোম্পানি চলছে। আশা করছি, আগামী ৩ বছর অর্থাৎ ২০১৭-১৯ সাল পর্যন্ত ভালো মুনাফা করার পর ২০২০ সালের মধ্যে পুঁজিবাজারে আসবো। তার আগে না। একই কথা বলেছেন বেশির ভাগ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এমডিরাও।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন